ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

উৎপাদনে মানা করেও গম সংগ্রহ অভিযান, বিপাকে খাদ্য বিভাগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
উৎপাদনে মানা করেও গম সংগ্রহ অভিযান, বিপাকে খাদ্য বিভাগ

চুয়াডাঙ্গা: সরকারিভাবে গম সংগ্রহ অভিযান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা খাদ্য বিভাগ। চলতি বছরে গম সংগ্রহ অভিযানে জেলায় মাত্র ৭০ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও মিলছে না এক ছটাক গমও। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও পাচ্ছে না গমের দেখা।

কারণ হিসেবে দেখা যায়, নেক ব্লাস্টের ভয়াবহতার কারণে কয়েক বছর ধরেই জেলায় গম আবাদে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেছে সরকার। তারপর থেকেই কৃষকেরা গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, চলতি বছর চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ১৪৯৪ টন ধান, ৬৪৯০ টন চাল ও মাত্র ৭০ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। স্থানীয় খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এ ধান, চাল ও গম সংগ্রহের নিদের্শনা রয়েছে। ধান ও চাল সংগ্রহ করতে পারলেও গত কয়েক সপ্তাহ পার হলেও এক ছটাক গমও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।  

বিষয়টি স্বীকার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ধান, চালের পাশাপাশি গমের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও আমরা কৃষকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে উৎপাদিত গম সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টা করছি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বাংলানিউজকে জানান, ২০১৬ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলায় গমে ভয়াবহ বালাই নেক ব্লাস্টের আক্রমণের কারণে মাঠেই গম ক্ষেত পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হয় কৃষকেরা। পরবর্তীতে ওই জমিতে উৎপাদিত অন্য ফসলেও যাতে এ রোগ আক্রামণ করতে না পারে এজন্য গম চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। তারপর থেকেই পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে গম চাষ।  

তাহলে সরকারি সংগ্রহের অভিযানে কেন গমের লক্ষ্যমাত্রা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু তখন গমে আক্রমণের রোগটি ছিল নতুন। তাই ক্ষতির মাত্রা কমাতে তখন সরকার গম আবাদে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্তটা সঠিকই ছিলো। কিন্তু এখন এ রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে। নতুন জাতেরও উদ্ভাবন করা হচ্ছে। অনেকে নতুন জাতের এসব আবাদও করছে। বিষয়টি ভেবেই হয়তো গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে কৃষি কর্মকর্তাদের এমন কথার সূত্র ধরে জেলার চারটি উপজেলায় খুঁজেও দেখা মেলেনি গম চাষির। মাঠেও দেখা মেলেনি কোনো গমের ক্ষেত।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলার বেলাগছি গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েক বছর ধরেই নেক ব্লাস্টের কারণে ক্ষতি এড়াতে আতঙ্কে গম চাষ করছে না কৃষকেরা। তাছাড়া এ জেলায় গম আবাদে সরকারের পক্ষ থেকেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে আজ্ঞা মেনে তারা গম আবাদ করে না। এরই মধ্যে খাদ্য বিভাগ কৃষকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে উৎপাদিত গম সংগ্রহের জন্য।  

আলমডাঙ্গা উপজেলার নতিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক কফিল উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, বছর পাঁচেক আগেও জেলায় প্রচুর পরিমাণে গম আবাদ করা হতো। নেক ব্লাস্টের আক্রমণের পর থেকে গম চাষ না করার জন্য জেলা কৃষি বিভাগ থেকে বলা হয়। তারপর থেকেই ওই গ্রামে আর গমের আবাদ নেই। অথচ  সরকারি সংগ্রহ অভিযানে গমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি হাস্যকর।

কৃষিবিদ তালহা জুবাইর মাশরুর বাংলানিউজকে বলেন, ব্লাস্ট প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করে উল্টো গম চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার মাশুল গুনতে হচ্ছে চাষি ও খাদ্য বিভাগকে। জেলায় গমের স্বর্ণযুগ ফেরাতে হলে খুব দ্রুত ব্লাস্ট সহনশীল ভিন্ন জাতের গম বীজ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।  

বাংলদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।