ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সজলের স্বপ্নের ধান ‘আটচল্লিশ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
সজলের স্বপ্নের ধান ‘আটচল্লিশ’ ‘আটচল্লিশ’ প্রজাতির ধান কাটছেন সজল রবিদাস। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: সকালের সূর্যের উত্তাপ বাড়ছে। ক্রমশই রোদপূর্ণ হয়ে পড়েছে চারদিক। মাঝে মধ্যে মেঘে ঢাকা সূর্যের মুহূর্তটি এসে আলো কমিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির। চা বাগানঘেসা ধানক্ষেতে তখন সার্থকতার প্রমাণ।

বহমান মৃদু ভাদ্রবাতাসে দুলে দুলে উঠছে সোনালী ধান। কৃষকের মন তখন চঞ্চলতায় ভরপুর।

সম্পূর্ণ ক্ষেতের ধানগুলো পেকে গেছে। ধান কাটার তাগিদ এখন। প্রায় তিন মাস আগে লাগানো হয়েছিল এ ধান। তিন মাস পর ফলেছে সোনার ফসল। তাতেই প্রাণমনে আনন্দ তার।
 
সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা বাগানের পরিত্যক্ত ফসলি জমিতে গিয়ে দেখা গেছে, এ মৌসুমের ধান কাটতে চলেছেন স্থানীয় কৃষক সজল রবিদাস। সোমবারই প্রথম ধান কাটবেন তিনি। চা বাগানের দৈনিক শ্রমিক হিসেবে নিজেকে বেছে নিয়ে সাংসারিক আর স্বাচ্ছন্দ আনতে পারছেন না। তাই বেছে নিয়েছেন কৃষিকেই।  
 
কথা বলে জানা যায়, ধান-কাটা এ কৃষকের পরিবারিক সদস্য রয়েছে ১৭ জন। এর মধ্যে উপার্জন করেন মাত্র তিনজন। তিন ভাইয়ের মধ্যে দু’জন চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক এবং অপরজন কৃষিজমির নিবেদিতপ্রাণ কৃষক।  
 
সজল রবিদাস বাংলানিউজকে বলেন, এ ধানের নাম ‘আটচল্লিশ’। এটি আউশ জাতীয় ধান। এ ধানটি পরিপূর্ণভাবে উৎপন্ন হতে প্রায় ১১০ দিন সময় লাগে। চলতি বছর জৈষ্ঠ্য মাসের ১৫ তারিখ এ ধানগুলো রোপণ করেছিলাম। সোনালী ধান হতে কৃষক সজল রবিদাস।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনতার জমির পরিমাণ সম্পর্কে সজল বলেন, আমার মোট ধানি জমির পরিমাণ সাড়ে ৪ কেয়ার (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার)। আরও সাড়ে ৪ কেয়ার বর্গাচাষ করা জমি রয়েছে। তবুও আমাদের হয় না বাবু। আমাদের বাড়িতে ১৭ জন খানেওয়ালা (পরিবারিক সদস্য) রয়েছে।
 
কৃষির প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাবু, পানির জন্য আমাদের অনেক সমস্যা হয়। কৃষিকাজে আমাদের কোনো পানি বরাদ্দ নাই। বৃষ্টির পানির ওপর ভরসা করে থাকতে হয়। প্রয়োজনীয় পানি পেলে অগ্রহায়ণ মাসে রবিশষ্য চাষ করতে পারতাম।
 
ধানের দরদাম সম্পর্কে সজল রবিদাস বলেন, আমার ৯ কেয়ার জমিতে প্রায় ৮৫/৯০ মণ ধান হবে। তবে এর থেকে চুক্তি অনুযায়ী জমির মালিকে দিয়ে আমার প্রায় ৬৫/৭০ মণ ধান টিকবে। বর্তমান বাজারমূল্য মণপ্রতি ৫০০ টাকা হলে আমার প্রায় ৩২/৩৩ হাজার টাকা লাভ হবে।
 
সার এবং নতুন ধান সম্পর্কে এ কৃষক বলেন, এ ক্ষেতে ডিওপি, এমওপি, ইউরিয়া সারসহ বেশি পরিমাণে গোবর সার দেওয়া হয়েছে। ধান কাটার পাঁচ/ছয় দিন পরই আবার নতুন ধান লাগানোর জন্য নতুনভাবে জমি তৈরির কাজ শুরু করবো। এবার ‘ঊনচল্লিশ’ ধান লাগাবো।
 
চা বাগানের দৈনিক ১০২ টাকা মজুরিতে আমার কিছু হয় না বাবু। এর থেকে কৃষিকাজ আমার অনেক ভালো বলে জানান কৃষক সজল রবিদাস।
   
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
বিবিবি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।