ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আশ্বিন-কার্তিকে আর অভাব নেই কৃষকের 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
আশ্বিন-কার্তিকে আর অভাব নেই কৃষকের 

ঠাকুরগাঁও: ধান ও পাটের ন্যায্য দাম না পেয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন। এবারে আবহাওয়া ভালো থাকায় আগাম সবজি চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের আগাম সবজি বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

ঠাকুরগাঁও ফাড়াবাড়ী মহাসড়কে বদেশ্বরী শালবাগান নামক স্থানে প্রতিদিন তিন থেকে চার ট্রাক শাক-সবজি লোড করা হয়।

আগাম শীতকালীন সবজি ট্রাকে লোড করে ঢাকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দাম ভালো পাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিদের এখন আর আশ্বিন- কার্তিক মাসে অভাব থাকে না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪ নম্বর বড়গাঁও ইউনিয়নের আগাম সবজি চাষি তোফি বলেন, এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম সবজির ফলন ভালো হয়েছে আর দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা ধান-পাটের আবাদ না করে আগাম সবজি চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছি।

একই এলাকার সবজি চাষি সালে আহমেদ জানান, বাম্পার ফলন ও দাম ভালো থাকায় শুধু চাষিরা নয় ওই এলাকার দিনমজুরদেরও তেমন অভাব নেই।

দিনমজুর শফিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্য মাসের থেকে আশ্বিন-কার্তিক মাসে আগাম সবজি লাগানোর ফলে আমাদের এখন আর কাজের তেমন অভাব নেই। প্রতিদিনই কারো না কারো ক্ষেতে কাজ করতে পারি।

দিনমজুর আজিজুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে আমরা আশ্বিন-কার্তিক মাসে খুব অভাব-অনটনে দিন কাটাতাম। এলাকায় আগাম সবজি চাষ হওয়ায় এখন আর আশ্বিন-কার্তিক মাসে আমাদের অভাব থাকে না। কারণ প্রতিদিনই আমরা কোনো না কোনো কাজ পাই। এ সময় আমরা দিনে তিনশ’ টাকা করে মজুরি পাই।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ৪ নম্বর বড়গাঁও ইউনিয়নের চামেশ্বরী গ্রামের প্রধানমন্ত্রী কৃষি পদক পাওয়া সবজি চাষি মেহেদী হাসান জানান, কয়েক বছর থেকে এবারে সবজির দাম অনেক বেশি।  

এ বছর প্রতিমণ করলা ১০০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবারে  করলার দাম ছিল ৮০০-১৩০০  টাকা পর্যন্ত।

এবারে লাউ প্রতিপিস ১৫-২৫ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ছিল ৫-১৫ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ১৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছরে চাষিরা যেকোনো শাকসবজি দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারছেন।

এলাকার চাষিরা ধান-পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। এতে আবাদ ভালো হওয়ায় দামও পাচ্ছেন বেশি। ফলে এলাকার মানুষের তেমন আর অভাব নেই।  
আগাম সবজি চাষে বাম্পার ফলন।  ছবি; বাংলানিউজ
ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, আমরা এ সময় প্রতি বছরে শীতকালীন আগাম সবজি নিতে ঠাকুরগাঁওয়ে আসি। তবে গতবারের থেকে এবারে সবজির দাম অনেক বেশি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন হবে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন শাক-সবজি।

ঠকুরগাঁও জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। এই এলাকার মাটি অনেক উর্বর তাই ফলনও বেশি হয়। বর্তমানে এ অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সবজি সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করাসহ সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ অঞ্চলের কৃষকরা ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।