ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

আম্পান: বগুড়ায় ঝড়ো বাতাস-টানা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি

কাওছার উল্লাহ আরিফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২০
আম্পান: বগুড়ায় ঝড়ো বাতাস-টানা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি

বগুড়া: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ফলে ঝড়ো বাতাস ও টানা বৃষ্টিতে বগুড়ার কয়েকটি উপজেলায় বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বুধবার (২০ মে) রাত থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে চলা বৃষ্টিতে পরিপুষ্ট ও পাকা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।

শুক্রবার (২২ মে) বগুড়ার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ফসলের সমারোহ। দানা পরিপুষ্ট ও কাটার উপযোগী হয়েছে অনেক আগেই।

এমনকি জেলায় বোরো মৌসুমের মোট ৬০ ভাগ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ সম্পন্নও হয়েছে।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় কিছু কৃষক এখনো ধান ঘরে তুলতে পারেননি। শ্রমিক সংকটের কারণে কাজ চলছে ধীরগতিতে। এর মধ্যে কৃষকের পাকা ধান ঘরে তুলতে দিল না ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, বুধবার রাতের ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে ধান হেলে পড়েছে এবং জমিতে পানি জমেছে। কিন্তু ক্ষতি হয়নি বললেই চলে। কৃষি বিভাগের সব উপজেলার কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার দিনভর এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নের কৃষক আবু বক্কর বাংলানিউজকে জানান, বোরো মৌসুমে তিনি প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এক সপ্তাহ আগে থেকে ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। তার মোট আবাদের ১১ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জমিগুলোর ধান সম্প্রতি ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে মাটিতে হেলে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, আর দু’দিন সময় পেলে এ জমিগুলোর ধান কাটা শেষ করতে পারতেন। কিন্তু বৃষ্টি ও বাতাসে তা মাটিতে পড়ে গেছে।

হেলে পড়া ধান কাটছেন কৃষক।  ছবি: বাংলানিউজ

শাজাহানপুর উপজেলার মাজেদুর রহমান জানান, তিনি প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এরমধ্যে কিছু জমির ধান ঘরে তুলেছেন। শ্রমিক সংকটে এ বছর জমির ফসল ধীরগতিতে ঘরে তুলতে হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক আগেই জমির ধানও ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু করোনার কারণে শ্রমিক সংকটে তা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে আম্পানের ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি তার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে দিয়েছে। ধান মাটিতে হেলে পড়েছে।

সামছুল উদ্দিন, জব্বার, মুক্তার হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, এবার বাজারে উৎপাদিত ফসলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। ফলনও ভালো হয়েছে। সম্পূর্ণ ফসল ঘরে তুলতে পারলে বেশ লাভবান হতেন তারা। কিন্তু এ ঝড়-বৃষ্টি তাদের সেই আশা অনেকটা ভেঙে দিয়েছে।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ্ মো. সজীব হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, আম্পানের প্রভাবে বগুড়ায় বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ থেক ৪৫ কিলোমিটার।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পরপরই জেলার সবগুলো উপজেলাতে কৃষি কর্মকর্তারা তাদের এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। জমিতে ধান হেলে পড়েছে কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ নেই বললেই চলে। জেলায় কয়েকটি উপজেলায় ধান হেলে পড়েছে ও জমিতে পানি জমেছে কিন্তু ক্ষতি হয়নি। তার তথ্য মতে, বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে জেলায় মোট ৯৪১ হেক্টর জমির সবজিতে ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। আর সপ্তাহ দুই-একের মধ্যেই জেলার সব উপজেলাতেই ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হবে। কিন্তু ঝড়ের কারণে উৎপাদিত ফসলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২০
এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।