ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

ফরিদপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৩৫২ চাষি 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
ফরিদপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫৩৫২ চাষি  ছবি: বাংলানিউজ

ফরিদপুর: টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ফরিদপুরে ১ হাজার ৩৫২ হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দেশের বন্যাকবলিত ২৬টি জেলার মধ্যে ফরিদপুর জেলার কৃষি জমি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হঠাৎ করে ফসলি জমি বন্যাকবলিত হওয়ায় আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় দেখা দিয়েছে সংশয়।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলমান বন্যায় জেলার সবগুলো উপজেলায় বন্যায় ফসলি জমির ক্ষতি না হলেও ৬টি উপজেলার ১ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৫২ জন চাষি।

ফসলি জমি নিমজ্জিত ৬ উপজেলা হচ্ছে- ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, মধুখালী, ভাঙ্গা, আলাফাডাঙ্গা ও সদরপুর  উপজেলা।

ফরিদপুর সদরের ফসলের অধীন মোট জমির পরিমাণ ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে  নিমজ্জিত রোপা আমনের পরিমাণ ১৪৮ হেক্টর।

কলাবাগানের আওতায় মোট ফসলি জমি ১৫৫ হেক্টর, নিমজ্জিত বাগান জমির পরিমাণ ১৭ হেক্টর। সবজি ক্ষেতের জমির পরিমাণ ৭৫০ হেক্টর, নিমজ্জিত সবজি ক্ষেতের জমির পরিমাণ ১৬ হেক্টর, বোনা আমন ফসলি জমির পরিমাণ ৮০০ হেক্টর ও পানিতে নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ৯২ হেক্টর। মোট ফসলি জমির পরিমাণ ৩১০৫ হেক্টর এবং মোট নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ২৭৩ হেক্টর।

ফরিদপুর সদর উপজেলার নিমজ্জিত এলাকাগুলো হলো- চরমাধবদিয়া, হাফেজডাঙ্গী, ওয়াজেদ মুন্সীর ডাঙ্গী, জমাদ্দার ডাঙ্গী, কানাইপুর, অম্বিকাপুর, ডিক্রিরচর (বৃষ্টির পানিতে ৫ হেক্টর জমিসহ) বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা ১ হাজার ৫১০ জন।

এদিকে, চরভদ্রাসনে ফসলের অধীন জমির পরিমাণ স্থানীয় আউশ ধানের অধীন জমির পরিমাণ ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর। এর মধ্য নিমজ্জিত ১৫ হেক্টর, আউশ ধান উপশী জমির পরিমাণ ১৪৫ হেক্টর, নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ৩ হেক্টর, বোনা আমনের ফসলের অধীন জমির পরিমাণ ২৩০০ হেক্টর এবং নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ৪২ হেক্টর, রোপা আমনের অধীন ফসলি জমি ১৪৫ হেক্টর এবং নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ২৭ হেক্টর।

সবজির আওতায় ফসলি জমি ১৮ হেক্টর, যার নিমজ্জিত জমি ৮ হেক্টর, কলাবাগানের ফসলি জমির পরিমাণ ১৫০ হেক্টর, নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ১০ হেক্টর। উপজেলায় ফসলি জমির আওতার মোট জমি ৪ হাজার ৩০৩ হেক্টর এবং নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ১০৫ হেক্টর।  

চরভদ্রাসনের নিমজ্জিত এলাকাগুলো হলো- একরাম মাতুব্বরের ডাঙ্গী, ছমির মাতুব্বরের ডাঙ্গী, চরহরিরামপুর। উল্লেখ্য, নিমজ্জিত জমির অধিকাংশ নদী ভাঙনের কারণে নদীগর্ভে ফসলসহ বিলীন হয়ে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষির পরিমাণ ১৫০ জন।

অন্যদিকে, মধুখালীর আওতাধীন ফসলের অধীন রোপা আমন মোট ফসলি জমির পরিমান ৮৬৪০ হেক্টর, নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ৫ হেক্টর।  

উল্লেখ্য, মধুমতি নদীর পানি না বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ কমবে। উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ৩৫ জন।



অপরদিকে, ভাঙ্গার মোট রোপা আমন ফসলি জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর, নিমজ্জিত ফসলি জমির পরিমাণ ৮৫০ হেক্টর, সবজির ফসলি জমির পরিমাণ ১৪০ হেক্টর, নিমজ্জিত ফসলি জমির পরিমাণ ৩০ হেক্টর। মোট জমির পরিমাণ ৬ হাজার হেক্টর, নিমজ্জিত ফসলি জমির মোট পরিমাণ ৮৮০ হেক্টর। ভাঙ্গার সব ব্লকই নিমজ্জিত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৩ হাজার ৫০ জন।

আলফাডাঙ্গা উপজেলায় রোপা আমনের আওতায় ফসলি জমির পরিমাণ ১৬০৫ হেক্টর। নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ৩৫ হেক্টর, সবজি ক্ষেতের পরিমাণ ৯৫ হেক্টর, নিমজ্জিত সবজি ক্ষেতের পরিমাণ ৫ হেক্টর। মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১৭০০ হেক্টর এবং নিমজ্জিত ফসলি জমির পরিমাণ ৪০ হেক্টর।  

আলফাডাঙ্গায় বন্যায় নিমজ্জিত এলাকাগুলো হলো- হেলেঞ্চা, খোলাবাড়িয়া, কাতলাসুর, গোপালপুর, টগরবন্দ, টিঠা, কুতুবদিয়া, বেলপানা, উথলী, পাচুরিয়া, ধুলজুড়ি। উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ৪৬০ জন।

সদরপুর উপজেলায় রোপা আমান ফসলের অধীন মোট জমির পরিমাণ ৪৯৮৯ হেক্টর। এর মধ্যে ফসলসহ নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ৩৭ হেক্টর।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো- ঢেউখালী, চরমানাইর, চরনাসিরপুর, নারকেলবাড়িয়া। এ উপজেলাগুলোতে মোট ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ১৪৭ জন।

উল্লেখিত, বন্যাকবলিত ৬টি উপজেলায় সর্বমোট ফসলের অধীন জমির পরিমাণ ৯ লাখ ৩০ হাজার ৫০৭ হেক্টর এবং মোট ফসলসহ নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩৫২ হেক্টর। মোট ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ৬ উপজেলায় ৫ হাজার ৩৫২ জন।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-উপরিচালক (শষ্য) মো. জাহিদুল আলম এ তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করছেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমরা কাজ করছি।  
 
ফরিদপুর সদর চরমাধবদিয়া চাষি ফোরকান, চরভদ্রাসনের চরহরিরামপুরের চাষি শহীদ, মধুখালীর বেলেশ্বর এলাকার চাষি আবদুল খান, ভাঙ্গা উপজেলার চাষি হাফিজুল, আলাফাডাঙ্গার ইমরান, সদরপুরের মফিজুল বলেন, ‘শেষ হয়ে গেছি, এ ক্ষতিপূরণ করার অবশিষ্ট আমাদের কিছু নাই।

ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে বন্যার পানি সরে গেলে, কিছু ফসল বেঁচে যাবে। আর বন্যা স্থায়ী হলে, সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নতুন ফসল আবাদ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।