মৌলভীবাজার: সময়টা টিকে থাকার। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিশ্রম আর সততা এসে যখন যোগ হয় তখন স্বপ্ন বাস্তবে ফলতে শুরু করে।
চলতি সপ্তাহে শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের মুরাদের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশজুড়ে সবুজের সৌন্দর্যে ভরে উঠেছে স্কোয়াশ গাছ। কৃষকের পরম যত্নে উর্বর মাটির স্পর্শ পেয়ে সেই প্রতিটি গাছগুলো যেন লাবণ্যময়ী। গাছটির নিচে তার মাতৃরূপজাত সন্তান অর্থাৎ ফলদসম্ভারে পূর্ণ তার দেহ। জমির একটি প্লটে দেখা গেছে, শুধু শীতকালীন স্কোয়াশ আর স্কোয়াশ। অন্য তখন সবজি বা গাছ নেই মধ্যে। কিন্তু অপর এক প্লটে দেখা গেল স্কোয়াশের মাঝখানে কয়কটি ফলের গাছও রয়েছে।
বাংলানিউজকে মুরাদ জানান, ৪ বিঘা জমির মধ্যে ২ বিঘাতে বাণিজ্যিকভাবে এবং ২ বিঘাতে সৌখিনভাবে স্কোয়াশ সবজি চাষ করেছি। সৌখিনভাবে চাষ করা স্কোয়াশের মাঝের অংশে দার্জিলিং কমলা, জারা লেবু এবং কমলা লেবু (বারি-২) লাগিয়েছি। আমার ৪ বিঘা জমিতে মোট গাছের সংখ্যা ৫ হাজার। গাছ দেখে কিন্তু বুঝা যায় না যে গাছের নিচে এতো ফল ধরেছে!
বীজ সংগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি প্রায় ১ কেজি স্কোয়াশের বীজ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে পাইকারিভাবে সংগ্রহ করেছি। খুচরা মূল্য আরো বেশি। ১০ গ্রামের একেকটি মিনি প্যাকেটের ভেতর ৫৫ থেকে ৬০টি বীজ থাকে। দাম পড়ে ৩শ টাকা। ১০ গ্রামের ১০টি মিনি প্যাকেট নিয়ে একটি বড় সিডের প্যাকেট থাকে। এরূপ ১০টি বড় প্যাকেট সংগ্রহ করেছি। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর বীজগুলো মাটিতে পুঁতে ছিলাম। বীজ মাটিতে রোপন করার ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর গাছে ফল পাওয়া যায়। তবে, এটা নির্ভর করে গাছগুলোর যত্নআত্তির ওপর। একটানা ৩ মাস পর্যন্ত প্রতিটি গাছে ফল ধরে।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) গাছ থেকে পড়েছে প্রায় ৫শ পিস স্কোয়াশ গাছ থেকে পেড়েছিলাম। গতকালই প্রথম ৮ হাজার টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করেছি বলে জানান মুরাদ।
৫ হাজার গাছের আমার এ স্কোয়াশ-বাগানটি দাঁড় করাতে এ যাবত খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। আশা করছি ৩ মাসে প্রায় দ্বিগুণ বা তার বেশি লভ্যাংশ গুনতে পারবো বলে জানান কৃষক মুরাদ।
এই সবজির উপকারিতা ও স্বাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্কোয়াশের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া। এটি মিষ্টি লাউ এবং পানি লাউ এর অনেকটা ঘ্রাণ রয়েছে। যেসব ডায়াবেটিস রোগী মিষ্টি লাউ ছোট ২/১ পিসের বেশি খেতে পারেন না তারা স্কোয়াশ অন্য সবজির মতো স্বাভাবিকভাবে খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্কোয়াশ খুবই উপকারী। সবজি হিসেবে এটি উৎকৃষ্ট। চিংড়ি মাছের সঙ্গে স্কোয়াশের তরকারি খেতে অসাধারণ সুস্বাদু লাগে। চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, স্কোয়াশ চাষে প্রথমে মাটির ক্ষতিকর ক্ষার নষ্ট করতে ডলোচুন (এক ধরনের সাদা পাউডার জাতীয় দ্রব্য) ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর মাটিতে গোবর, জৈবসারসহ রাসায়নিক সার দিয়ে চাষ করে বেড (গাছ লাগাবার উপযুক্ত স্থান) তৈরি করা হয়েছে। বেডের ওপর মালচিন পেপার (কালো পাতলা পলিথিন) দিয়ে তারপর মাটিতে বীজ পুঁতে দেওয়া হয়। আমার সবজি বাগানে শুধু স্কোয়াশই নয়, শিম, লেটুসপাতাসহ অন্যান্য সবজিও রয়েছে। এখানে ছয় জন শ্রমিক নিয়মিতভাবে কাজ করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার উপ-পরিচালক (এডি) কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, স্কোয়াশ বিদেশি সবজি। এর স্বাদ অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। তবে মিষ্টি কুমড়ার মতো এতোটা মিষ্টি নয়। মিষ্টি কুমড়াতে মিষ্টতা একটু বেশি, স্কোয়াশে মিষ্টতা একটু কম। তবে স্কোয়াশ খেতে উপকারী। মিষ্টি কুমড়া যেভাবে খাওয়া হয় ঠিক একইভাবে স্কোয়াশকেও খাওয়া যায়।
আমরা প্রায় ২০ বছর আগে কয়েক বছর আগে কৃষকদের দিয়ে স্কোয়াশ চাষ করেছিলাম। লোকাল মার্কেটে অর্থাৎ সর্বসাধারণের মধ্যে এর চাহিদা ততটা নেই। যারা এই সবজির উপকারিতা বুঝেন কিংবা এলিট শ্রেণি (প্রশিক্ষিত সমাজ) তাদের মাঝে চাহিদা রয়েছে বলে জানান জানান উপ-পরিচালক লুৎফুল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২২
বিবিবি/এএটি