ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

সরিষার মধু সংগ্রহের ধুম!

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
সরিষার মধু সংগ্রহের ধুম! মধু সংগ্রহ করছেন এক চাষি। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: পৌষ পেরিয়ে চলছে মাঘ মাস। বছরের এ সময়টায় সরিষা থেকে মধু আহরণ করে মৌমাছিরা।

আর সেই সরিষার মধু সংগ্রহ করতে জেলায় জেলায় ঘুরে থাকেন মৌ-চাষিরা।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বগুড়া জেলার সদর, কাহালু ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, মধু সংগ্রহে মৌ-চাষিদের কর্মব্যস্ততা। কাহালু উপজেলার দরগাহাট নারহট্র ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চৌমুনি শাহারপুকুর এলাকায় চলতি মৌসুমে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করতে সাতক্ষীরা ও রংপুর থেকে এসেছেন মো. শফিকুল ইসলাম, ওয়াজেদ আলী ও তাদের সহযোগী রাকিব হোসেন, মাহাবুব, রফিকুল, মো. ওমর ফারুকসহ বেশ কয়েকজন মৌ-চাষি। সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পাইশাকান্দি গ্রামের মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বছরের বিভিন্ন সময় তারা জেলায় জেলায় ঘুরে মধু সংগ্রহ করেন। মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। এর ওপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো হয়। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি ছয় থেকে আটটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে। এরপর বাক্সগুলো সরিষাক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন থেকে চার হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। বাক্সগুলো মৌমাছিতে ভরে গেলে সরিষাক্ষেতের আশ-পাশের স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সেসব বাক্স থেকে সরিষাক্ষেতের ফুলে ফুলে ভোঁ-ভোঁ শব্দ তুলে ঘুরতে থাকে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে।

তিনি বলেন, বছরের এ সময়টাতে তারা এভাবে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। একই ধারাবাহিকতায় এবারো সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন তারা। সম্প্রতি তারা মানিকগঞ্জ থেকে কাহালুর দরগাহাট নারহট্র এলাকায় এসেছেন। তারা থাকবেন তিন থেকে চার সপ্তাহ। রংপুরের সদর উপজেলার বাসিন্দা মৌ-চাষি মো. ওয়াজেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, তারা কয়েকজন মিলে গত কয়েক বছর ধরে দুপচাঁচিয়ায় মধু সংগ্রহ করতে আসেন। উপজেলার চৌমুনি শাহারপুকুর এলাকায় বিশাল সরিষাক্ষেতে ১৫০টি বাক্স বসিয়েছেন তারা। সরিষার ভরা মৌসুমে এসব বাক্স থেকে গড়ে প্রায় ৫শ থেকে ৬শ কেজির মতো মধু পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।  সরিষা ছাড়াও কালোজিরা, ধনিয়া, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমে তারা মধু সংগ্রহ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কোয়ালিটির মধুর মূল্যও ভিন্ন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাহালু ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার দরগাহাট, বাজারদিঘী, চৌমুনী, শাহারপুকুর, জিয়া নগর, আলতাব নগর, কালুচসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষকৃত সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। সরিষা ক্ষেতগুলোর আশ-পাশের খালি জমিতে সারি সারি বাক্স বসানো হয়েছে। দলে দলে উড়ছে মৌমাছি। দলবেঁধে বা দলছুট হয়ে মৌমাছিগুলো সরিষাক্ষেতে ভোঁ ভোঁ শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ফিরে যাচ্ছে সেই বাক্সে।

মৌচাষিরা জানান, সরিষা ফুলের মধু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা ক্রয় করেন। চাহিদা অনুযায়ী মধু বিক্রি করেন তারা। চাহিদা বেশি হলে দাম কিছুটা বেশি পান। আবার তুলনামূলক চাহিদা কম হলে দামও কিছুটা কম পান। সরিষার মধু জমে যায় বলেও যোগ করেন তারা।  

পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ফলে এবছর প্রতিকেজি সরিষা ফুলের হাই কোয়ালিটি মধু পাইকারি ৩০০-৪০০ এবং মধ্যম কোয়ালিটি ২৫০ টাকা দরে এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান মৌচাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২৭ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের মাধ্যমে অনেককেই মধু সংগ্রহের কিছু সামগ্রী প্রদার করা হয়। এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী চাষি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে থাকেন।

সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অনেক ভালো। সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। তার মতে এ কাজে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে চাষিরা বাড়তি আয় করতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।