ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘রসিক রসওয়ালা’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
‘রসিক রসওয়ালা’ খেজুরের রস নামানো হচ্ছে।

ফেনী: একটা সময় ছিল যখন গাছিরাই শীতকালে খেজুরের রস বিক্রি করতেন। এখন সময় পাল্টেছে।

ডিজিটাল এই যুগে রস বিক্রি করছেন সুদর্শন শিক্ষিত যুবকরা। তারা মাধ্যম হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন। শীত মৌসুমে কয়েক মাস এ ব্যবসা করে আয়ও বেশ ভালো করছেন এসব যুবকরা। তেমন দুই ‘রসিক রসওয়ালার’র গল্প শোনাবো আজ।  

ফেনীর উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর যুবক সজীব রায়হান। তিনি জানালেন চলতি মৌসুমে ৪৫ দিনে তিনি ৪ হাজার ৫শ লিটার খেজুরের রস বিক্রি করেছেন। পুরো শীত মৌসুমে ১০ হাজার লিটার খেজুর রস বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তার। বাবা এবং ভাইকে নিয়েই তিনি রসের এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সময় এবং চাহিদা বুঝে লিটার প্রতি ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় তার রস। নিজের ফেজবুক প্রোফাইল, ফেনীর বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজের মাধ্যমেই তিনি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন।  

সজীব জানান, বিক্রির ৮০ শতাংশই  আসছে অনলাইন থেকে। অনলাইনে বিক্রি কারণে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে।  

রস সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে সজীব জানান, প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে তার বাবা-ভাই এবং তিনি গাছ কাটা শুরু করেন। মাগরিব নামাজ পর্যন্ত সেই কাজ চলে। এরপর চলে গাছে রসের পাত্র বসানো। চোর থেকে রক্ষা করার জন্য রাতে গাছ পাহারা দিতে হয় খেজুরের গাছগুলো। ভোর ৪টা থেকে শুরু হয় রস সংগ্রহ।  

এলাকার মোট ১শ ১৮টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিক্রি করেন তিনি।  

সজীব জানান, মৌসুমের শুরুতে টার্গেট ছিল ৫ হাজার লিটার রস বিক্রি করার। ইতোমধ্যেই সেই টার্গেট পূরণ হতে চলেছে। আশা করা যাচ্ছে, ৬ হাজার লিটার রস বিক্রি করা যাবে। এছাড়াও অন্যদের গাছের আরও ৪ হাজার লিটার সব মিলিয়ে ১০ হাজার লিটার খেজুরের রস এ মৌসুমে বিক্রি করতে পারব।  মোট বিক্রির টার্গেট রয়েছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। খরচ বাদে এখান থেকে লাখ খানেক টাকা লাভের আশা করছি।

সজীব জানান, নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ও বিভিন্ন গ্রুপ থেকে অর্ডার আসার পর মোবাইলের নোটবুকে টুকে রাখেন তিনি। পরদিন সকালে নির্ধারিত ডেলিভারি পয়েন্টে নিজেই পৌঁছে দেন। পুরো মৌসুমের জন্য ভাড়া করা হয়েছে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা। সেটিতে করেই রস পৌঁছে যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।  

সজীব বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে রসের বিক্রির কারণে গ্রামের অন্য সাধারণ গাছি এবং গাছ মালিকরাও উপকৃত হচ্ছেন। অনেকেই আগে রসের ক্রেতা পেতো না। অনলাইনে প্রচার-প্রচারণার কারণে এখন খুব সহজেই ক্রেতা মিলছে। নিজেরটা বিক্রির পাশাপাশি তাদেরটাও বিক্রি করতে পারছি। এতে তারা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন।  

এমএ হান্নানের জেলার দাগনভূঞাঁ পৌর শহরের। তিনি ব্যবসায়ী এবং জেলার সুপরিচিত রক্তদাতা স্বেচ্ছাসেবক। চলতি শীত মৌসুমে এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ইতোমধ্যেই বিক্রি করেছেন ৩ হাজার লিটার খেজুরের রস এবং ৬শ লিটার খেজুরের রসের তৈরি মিঠাই।  

হান্নান জানান, তার নিজের একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে সেটা এবং নিজের আইডির মাধ্যমে তিনি খেজুরের রস বিক্রি করেন। তার উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের ক্রেতা রয়েছে তার রসের। জেলার সেনাগাজীর আদর্শগ্রামের প্রায় শতাধিক গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তিনি তা বিক্রি করেন।

হান্নান জানান, প্রতি ১০ লিটার রস বিক্রি করা হয় ৬৫০ টাকা। প্রতি লিটার পড়ে ৬৫ টাকা। সব খরচ বাদে লিটার প্রতি ১০ টাকা লাভ থাকে তার। চলতি মৌসুমে ৭ হাজার লিটার খেজুরের রস বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তারা। টাকার অংকে তা দাঁড়াবে ৪ লাখ ৫৫ হাজার। সব খরচ বাদ দিয়ে এ থেকে তার সম্ভাব্য আয় হবে ৭০ হাজার টাকা। পাশাপাশি রসের তৈরি মিঠাইয়ের বিক্রিতো আছেই।  

হান্নান আরও জানান, ভেজালমুক্ত রস হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে তার বিক্রিত রসের ব্যাপারে। ক্রেতারা যেখানে বলছেন সেখানেই পৌঁছে যাচ্ছে রসের হাড়ি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।