ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

কৃষি

পাট চাষ ও পাটের আঁশ উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২২
পাট চাষ ও পাটের আঁশ উন্নয়নে প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা ...

ঢাকা: পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং ভবিষ্যতেও পাটের এই সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে জনতা জুট মিল (আকিজ গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) বিশ্বাস করে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম ফাইবার ব্যবহার কমানোর দাবিও ক্রমান্বয়ে জোড়ালো হচ্ছে।

এতে প্রাকৃতিক আঁশের বাড়তি চাহিদা তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। এই বিষয়গুলো একত্রে এই ইংগিতই করে যে, আমাদের দেশে পাটের আবাদ এবং ফলন বাড়ানো গেলেই পাটের রপ্তানি বাড়ানোর আরো সুযোগ তৈরি হবে। এই সুযোগকে সামনে রেখে, জনতা জুট মিল তার বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

পাটের আবাদ এবং ফলন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের মতামত হবে পাটকে বছরে এক-ফসলি কৃষিপণ্য থেকে দু-ফসলি কৃষিপণ্যে রূপান্তর করা। বর্তমানে পাট এক-ফসলি হওয়ার প্রধানতম কারণ হলো পানির প্রাপ্যতার উপর অন্যতম নির্ভরতা। পাট কাটার পর পাটের জাগ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে পানির প্রাপ্যতা, পানির পরিমাণ এবং পানির গুণগত মানের উপর। দেশে দীর্ঘদিন ধরে সময়মত পানি প্রাপ্যতার সমস্যার কারণে পাটের আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে এবং একইসঙ্গে এই সমস্যা পাটের ফলন এবং আঁশের গুণগত মানকেও নিম্নমুখী করছে।  
এখন পাটকে দু-ফসলি কৃষিপণ্যে রূপান্তরের প্রধান নিয়ামক হবে পানির প্রাপ্যতার উপর পাটের জাগ দেওয়ার নির্ভরতা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করে দেওয়া। এই নির্ভরতা নির্মূল করা যাবে তখনই যখন বছরের যেকোনো সময় পাট কেটে পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হবে, অর্থাৎ একটা প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজে বের করাই হবে প্রধান কাজ।

পাট জাগের বর্তমান চলমান পদ্ধতিতে সময় উপযোগী এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি নির্ভর পরিবর্তন আনাই এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান বলে জনতা জুট মিল মনে করে। পাট জাগের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের প্রযুক্তিগত পদ্ধতি নির্ণয় নিয়ে জনতা জুট মিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ শুরু করেছে।

পাট জাগের প্রযুক্তি নির্ভর নতুন উপায় বের করার পাশাপাশি, পাটের সুতা তৈরির ক্ষেত্রেও পাটের আঁশের কন্ডিশনিং-এ নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার নিয়ে কাজ হচ্ছে, যা পাটের সুতার উৎপাদন ও সুতার গুণগত মানে আমূল পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাটের আঁশের কন্ডিশনিং করা একটি অতি জরুরি ধাপ যেখানে পাটের আঁশে এক ধরনের মাইক্রোবায়াল কাজ হয়। এই মাইক্রোবায়াল কাজটি দ্রুত, সহজ ও সাশ্রয়ী এবং সর্বোপরি পাটের আঁশের ইউনিফর্ম কন্ডিশনিং করার চেষ্টার অংশ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ আরো একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছে।

এরই মধ্যে ভালো খবর হলো, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের পাটের বীজ নিয়ে একটি গবেষণায় নতুন পাটের বীজ উদ্ভাবন করেছেন যেখানে পাটের আঁশের গুণগত মান তুলনামুলকভাবে বর্তমান অন্যান্য পাটের আঁশ থেকে অনেক উন্নত মানের হবে। লিগনিন পাটের এক ধরনের আঠালো উপাদান যা পাটের আঁশের গুণগত মানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে, এই উপাদানটি যত কম হবে পাটের আঁশ তত বেশি প্লাইএবল হবে অর্থাৎ এই আঁশ দিয়ে অতি উন্নত মানের পাটের সুতা হবে। লিগনিন পাটের আঁশ বা সেলোলুজকে একে অপরের সঙ্গে বেধে রাখার কাজটির করে, যা পাটের জাগের সময়ে আংশিক রিমুভ হয়। সাধারণত, পাটে প্রায় ১২ শতাংশের মত লিগনিন থাকে, এর পরিমাণ যত কমানো যাবে পাটের আঁশের ব্যবহার ততই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং নতুন ক্ষেত্রে পাটের আঁশের প্রবেশের পথ তৈরির সুযোগ হবে।

দেশের পাট উৎপাদন ও উন্নয়নের স্বার্থে এই উদ্যোগটি নিয়েছে আকিজ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জনতা জুট মিলস।

বুধবার (২৩ মার্চ) এই বিষয়ে জনতা জুট মিলস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষর হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আকতারুজ্জামান, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপকরা, আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন ও আকিজ গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।