ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘পাকে নাই তো, কাঁছা ধান কাইটা আনতেছি’

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
‘পাকে নাই তো, কাঁছা ধান কাইটা আনতেছি’ চিটা ধান আলাদা করছেন কৃষক। ছবি: বাংলানিউজ

সাভার, (ঢাকা): ‘আমার বয়েসে আমি কখনও দেখিনি চৈত্র মাসে পানি আসে। এবারই দেখলাম এই পানি।

শুধু তো পানি না ধানের মধ্যে চিডাই বেশি বাইর হইতেছে। আর চিডা বের হবেই না কেন? যখন ধান বের হওয়া শুরু করছে তখনই পানি আসচ্ছে। আর এসব ধান পাকে নাই তো, কাঁছা (কাঁচা) ধানই কাইটা আইনা রাস্তায় রোদে শুকাইতাছি’

এভাবেই অসহায়ের মতো রাস্তার পাশে দুই ছেলেকে নিয়ে শুকাতে দেওয়া কাঁচা ধানের পাশে বসে কথাগুলো বলছিলেন মধ্যবয়সী মো. আব্বাস আলী।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের সুবন্ধী এলাকায় গেলে কথা হয় তার সঙ্গে। মো. আব্বাস আলী বলেন, এবার বন্দে (মাঠে) যে ধান আছে সব প্রায় তলায় গেছে। দুই দিন আগে পানির জোর আরও বেশি ছিল তখন মানুষ নৌকা দিয়া ধান কটছে। আমাদেরও তো এই অবস্থা হয়েছিল পানি একটু কমায় অন্তত এক বিঘার ধান করতে পারছি।

তিনি জানান, তার বাবার সূত্রে পাওয়া সুবন্ধী চাষের জমির মাঠে দুই বিঘা জমি পেয়েছেন তিনি। সেই দুই বিঘা জমির এক বিঘায় ‘২৮ ধান’ ও আরেক বিঘায় ‘হিরা’ ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্তু পাকার আগেই পানি চলে এসে ধান তলিয়ে যাওয়ায় কেটে ফেলছেন।
মো. আব্বাস আলী আরও বলেন, দুই বিঘা ধানের ভেতর এক বিঘা ধান পানিতে এখন একদম তলিয়ে গেছে। সেটা কাটতে পারবো কিনা জানি না। আরেক বিঘা ধান কামলা দিয়ে কোমর পরিমাণ পানির ভেতর থেকে কাটতেছি। আর এই এক বিঘা ধান কাটাইতে লাগছে পাঁচ হাজার টাকার মত। দুই বিঘায় ১৫-১৬ হাজার টাকার মত লস হবে এবার।  

আব্বাস আলীর মতো আরও অনেক কৃষক এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। যারা তার মতো এভাবে কাঁচা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
সুবন্ধীর আরেক কৃষক কবির মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ধান আনছি অর্ধেক কাঁছা অর্ধেক পাকা। দুই দিন ধরে কেটে জাগ দিয়ে রাখছি বিধায় একটু পাকছে।

সন্ধ্যায় জোয়ার আসে আবার সকালে জোয়ার আসে। জোয়ার এলেই পানিতে যা ধান জেগে আছে তাউ তলিয়ে যায়। তাই যত তাড়াতাড়ি পারছি ধানগুলো কেটে রাস্তায় তুলছি। এখন যে ধান কাটছি এগুলোর খের (খর) গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো লাভ নাই।

ওই এলাকা আরেক কৃষক মো. রহমত ধান কাটার জন্য শ্রমিক খুঁজে পাচ্ছেন না।  তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখন কামলাদের (শ্রমিক) অনেক দাম। আমারদের বিঘা জমির মত ধান পানিতে ভাসতেছে কিন্তু কামলা পাই নাই। যাও পাই চড়া দাম তাদের। ধান কাটার মৌসুম ছাড়া ৬শ টাকা হলেই ধান কাটার কামলা পাওয়া যায়। এবার ১ হাজার ৫শ টাকা দিয়েও পাচ্ছি কামলা। তাই নিজে নিজে যা পারছি ক্ষেত থেকে ধান কেটে নিয়ে আসতেছি।

সাভার উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ হেক্টরের বেশি জমির ধান পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হঠাৎ জোয়ারের পানি তুরাগ নদ দিয়ে এসে আমিনবাজার, কাউন্দিয়া, আশুলিয়া, ধামসোনা ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ধানটা এমন অবস্থায় আছে যে, এখনও কাটার মতো অবস্থা হয়নি। তার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। আসলে আমরা দেখতেছি যে, এ রকম জোয়ারের পানি নরমালি আসে না। এই পানিটা  জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে আরও পরে আসে। কিন্তু এবার পানিটা অনেক আগে চলে আসছে। যে কারণে ধানের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। জোয়ারের পানি আমিনবাজার ও কাউন্দিয়া বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে এভাবে আসে যে এটাকে বাধ দিয়ে আটকানো সম্ভব না। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটা আমরা দেখব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২২
এসএফ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।