ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বান্দরবানের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ 

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
বান্দরবানের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ  বান্দরবানের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ, ছবি: বাংলানিউজ

বান্দরবান: প্রতি বছর সারাদেশেই উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয় প্রচুর পেঁয়াজ। আর তাই এবার প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে এবং দেশের কৃষিখাতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হয়েছে পেঁয়াজের চাষ।

 

পেঁয়াজ চাষে খরচ কম, পরিচর্যায়ও নেই তেমন ঝক্কি। চাষে তেমন জটিলতা না থাকার কারণে এবার বান্দরবানের কৃষকরা ঝুঁকেছেন পেঁয়াজ চাষে।

এক মৌসুমের মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ, তাই মৌসুমের শেষ দিকে এ কৃষিপণ্যটির ঘাটতি দেখা দেয় সারাদেশেই। এমন প্রেক্ষাপটে বান্দরবানে এবার প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে পেঁয়াজ চাষ। জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হয়েছে পেঁয়াজের আবাদ। এদিকে প্রথমবারের মতো পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে খুশি কৃষকরা।  

বান্দরবান সদরের লেমুঝিড়ি এলাকার চাষি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমি আগে এসময় বিভিন্ন ফসলের চাষ করতাম। এবারই প্রথম পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজ চাষে তেমন কোনো পরিশ্রম করতে হয় না। অল্প পরিশ্রম ও অল্প পুঁজি দিয়ে বেশি ফল পাওয়া যায় দেখে আমি এবার এক একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছি। এরই মধ্যে ভালো ফলনও পেয়েছি।  

তিনি আরও বলেন, আশা করছি, প্রায় ১২-১৩ টন পেঁয়াজ পাবো। আমার পেঁয়াজের এমন ফলন দেখে অনেকে আগামীতে পেঁয়াজ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

ভরাখালী এলাকার চাষি মো. মাহাবুব আলম বলেন, আমি এবার প্রথম লাল তীর কোম্পানি থেকে হাইব্রিড পেঁয়াজের বীজ নিয়ে দুই একর জমিতে চাষ করেছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরার্মশ ও বীজ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আমি একটু আগে চাষ শুরু করায় পেঁয়াজের যেমন ভালো ফলন পেয়েছি, তেমনি বিক্রি করে লাভবান হয়েছি।  

পেঁয়াজ চাষি নবী আহম্মদ বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁয়াজ চাষে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আমি আগামীতে আরও বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করব। আমার জমিতে এ বছর যে পেঁয়াজ হয়েছে, তার বেশির ভাগেরই ওজন ৮০ গ্রাম থেকে ১১০ গ্রাম।

বান্দরবানে কৃষি বিভাগের পাশাপাশি লাল তীর সিড নামে একটি বেসরকারি বীজ ও কীটনাশক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ এবং বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু করিয়েছে। দেশি জাতের পাশাপাশি কৃষকরা এখন লাল তীর হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের আবাদ করে লাভবান হবেন এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

লাল তীর সিড লিমিটেডের বান্দরবান শাখার ম্যানেজার মো. রবিউল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বান্দরবানে আমরা লাল তীরের প্রথম উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজটি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। মূলত বান্দরবানের মাটি ও জলবায়ু পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রথমবার ভালো ফলন হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, আমরা এরই মধ্যে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় লাল তীরের হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করেছি, যা থেকে এ বছর ভালো ফলনও পেয়েছেন কৃষকরা।

লাল তীর সিড লিমিটেডের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় ম্যানেজার (বিক্রয়) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাল তীর বাংলাদেশে প্রথম এ হাইব্রিড পেঁয়াজের বীজ এনেছে, যা আমরা কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এ পেঁয়াজের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- এ পেঁয়াজ ফাটে না বা দ্বিকন্দ হয় না, কড়া ঝাঁজ ও দেশি তাহেরপুরী পেঁয়াজের মতো স্বাদ, যা সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। আমরা আশা করছি, আগামীতে সারা দেশে আমাদের এ পেঁয়াজের আবাদ বাড়লে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, আমরা সব সময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি, বিশেষ করে কখন সার দিতে হবে, কখন সেচ দিতে হবে। মূলত পেঁয়াজ চাষে তেমন খরচ নেই, অতিরিক্ত পরিশ্রমও করতে হয় না, লাভও বেশি। ফলে বান্দরবানে পেঁয়াজের আবাদ বাড়বে।  

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, এরই মধ্যে আমরা বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি, যেখানে পারিবারিক পুষ্টি বাগান আছে, সেখানে আমরা একটি করে পেঁয়াজের আবাদ করাচ্ছি। এছাড়া আমরা রাজস্ব খাতের অওতায় কৃষকদের বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ ও কন্দ সরবারহ এবং সার দিয়েছি। যার ফলে আগে যেখানে বান্দরবানে কোনো পেঁয়াজের আবাদ হতো না, সেখানে এখন অনেকেই পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। মূলত বান্দরবানে তাহেরপুরী পেঁয়াজ আর লাল তীর হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের চাষ এবং ফলন ভালো হয়, যার কারণে কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতায় জেলায় এখন পেঁয়াজের ভালো আবাদ হচ্ছে।  

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বান্দরবানে এবার ৪৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। যার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৪০৮.৬ মেট্রিক টন। পর্যায়ক্রমে কৃষকদের আরও সহযোগিতা করা গেলে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পেঁয়াজের আবাদ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।