ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

শসার কেজি ২ টাকা, গরম পড়লেই হয় ৫!

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২২
শসার কেজি ২ টাকা, গরম পড়লেই হয় ৫! ক্ষেত থেকে শসা নিচ্ছেন এক কৃষক

লালমনিরহাট: রমজানে রোদ যত বাড়ছে, শসার চাহিদাও তত বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে দাম।

তবে এতে অবশ্য চাষিদের লাভের খাতা শূন্য।

গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে লালমনিরহাটের চাষিদের বিভিন্ন শসা ক্ষেত ও পাইকারি বাজার ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।

চাষিরা জানান, শসা বীজ বপন থেকে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত সময় লাগে মাত্র ৮৫/৯০ দিন। বীজ বপন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে গাছ মরতে শুরু করে। পানি জমে না এমন উঁচু জমি শসা চাষের জন্য উপযুক্ত। লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার চাষিরা তাদের উঁচু জমিতে শসা চাষ করে থাকেন। গত বছর ভালো মুনাফা পাওয়ায় এ বছরও চাষাবাদ করেছেন তারা। কিন্তু গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর রমজানে শসার চাহিদা একদম কম। ফলে লোকসানের শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের।  

রোদ বাড়লে শসার চাহিদা বেড়ে যায়। চলতি বছর রমজানের শুরু থেকে গরম কম ছিল এ জেলায়। প্রায় প্রতিদিন কম বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে তেমন গরম ছিল না। যার কারণে এ বছর রমজানে শসার চাহিদা ছিল না বললেই চলে। গেল তিন-চারদিন আগেও লালমনিরহাটের শসা ক্ষেতে প্রতি কেজি শসা মাত্র দুই টাকা দরে বিক্রি করেছেন চাষিরা। যা দিয়ে শসা সংগ্রহের শ্রমিকদের মজুরিও তুলতে পারেননি কৃষকরা।  

তবে গত কয়েকদিন রোদ থাকায় হওয়ায় আবহাওয়া একটু গরম। তাই শসার চাহিদাও বেড়েছে। ফলে শসার দামও বেড়েছে কিছুটা।  

গত রোববার (২৪ এপ্রিল) দেখা যায়, লালমনিরহাটের ক্ষেতেই শসা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি চার-পাঁচ টাকা দরে। ফলে শেষ সময়ে কিছু দাম বাড়লেও তা দিয়ে উৎপাদন খরচ ওঠানোই মুশকিল।

আদিতমারী গ্রামের চাষি সাইদুল ইসলাম জানান, প্রতি দোন (২৭ শতাংশে) জমিতে শসা চাষাবাদ করতে খরচ পড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। তিন দোন জমিতে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে শসা চাষ করেছেন এবার। এ পর্যন্ত মাত্র ৫০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। শেষ সময় দাম বেড়েছে, তাই খুব বেশি হলে আর ৩০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করা যাবে। তবুও লাভের খাতায় শূন্য। উৎপাদন খরচও মিলছে না। গত বছর এ জমিতে একই খরচে শসা চাষ করে বিক্রি করেছেন প্রায় পাঁচ লাখ টাকায়। এ বছর এক লাখ টাকাও পেলেন না তিনি।  

কালীগঞ্জের দুহুলী গ্রামের চাষি ইব্রাহীম মিয়া জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে এক থেকে দুই টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করেছি। আজ (রোববার) রোদ বেশি, তাই শসার চাহিদা ও দাম একটু বেশি। আজ প্রতি কেজি শসা ক্ষেতেই পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করছি। লোকসানের পরিমাণটা কিছুটা কমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। লাভ তো দূরের কথা, এ বছর শসা চাষিরা উৎপাদন খরচও পাচ্ছেন না।  

পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, ক্ষেত থেকে শসা কিনে বাজারে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাই। এবার শসার দাম কম, তাই লাভও কম। রোদ বাড়ায় কিছুটা দাম বেড়েছে। শেষ সময় বাজার দর বাড়লেও এ বছর শসা চাষিদের লোকসান হচ্ছে। তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।  

লালমনিরহাট জেলা মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, চাহিদার ওপর দর নির্ভর করে।  

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম কিছুটা কম ছিল। রোদের কারণে এখন চাহিদার সঙ্গে শসার দামও বাড়ে। তাই লাভ কম হলেও শসা চাষিদের লোকসান হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২২ 

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।