রাঙামাটি: রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি-৮১ ও ব্রি-৯২ ধান।
স্থানীয়রা এক সময় হাইব্রিড ধান রোপণ করলেও সময় মতো ফসল ঘরে তুলতে পারতেন না।
কাপ্তাই হ্রদে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জলে ভাসা জমি আছে। এসব জমির কিছু অংশে কৃষকরা চাষ করলেও বেশিরভাগ জমি পতিত থাকে। হ্রদের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ ব্যবস্থা নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় কৃষকদের। আবার বর্ষা মৌসুমে হ্রদের পানি বেড়ে গেলে বেশিরভাগ ফসল তলিয়ে যায়। যে কারণে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এসব জলে ভাসা জমিতে অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ঘরে ফসল তোলা এবং কৃষকের আর্থিকভাবে লাভবান করার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI-ব্রি) উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৮১ ও ব্রি-৯২ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধানভিত্তিক খামার বিন্যাস উন্নয়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ’ কর্মসূচির আওতায় চলতি বছরের শুরুতে রাঙামাটির সাতটি উপজেলায় ৪০ জন কৃষককে দুই কেজি করে ব্রি-৮১ ও ব্রি-৯২ ধানের বীজ, সার ও কীটনাশক দেয়। কৃষকরা চলতি মৌসুমে ব্রি-৯২ লাগিয়ে হেক্টর প্রতি ৯.২ মেট্রিক টন শস্য ঘরে তুলতে পেরেছেন।
বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ির কৃষক শরৎ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণ ধানের চেয়ে ব্রির উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানগুলোর উৎপাদন বহুগুণ বেশি। পরিচর্যা তেমন একটা লাগে না এবং অল্প সময়ে ফসল ঘরে তোলা যায়।
একই এলাকার কৃষক রাজীব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এক একর জায়গায় সাত কেজি ব্রি-৯২ ধান লাগিয়ে প্রায় ৭৫ মণ ধান পেয়েছি। বেশ ভালো লাগছে।
বরকল উপজেলার মিতিঙ্গাছড়ি ব্লাকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত ৮১, ৯২ এবং বাংলামতি ৫০ কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। কৃষকরা আগে হাইব্রিড এবং অন্যান্য জাতের ধানের চাষ করতেন। বর্তমানে তারা ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো চাষ করতে শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি বিভাগের একটি জাত উদ্ভাবন করতে পাঁচ-সাত বছরেরও বেশি সময় লাগে। কিন্তু ব্রির সহায়তায় আমরা অতি অল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৯২ কৃষকদের মধ্যে দিতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, শুধু ব্রি-৯২ নয়, অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোও যাতে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি, সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে কাজ করছি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের, গাজীপুর এর মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বাংলানিউজকে বলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে। কেননা বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার, দেশে কোনো পতিত জমি থাকবে না। যেখানে জমি আছে, সেখানে চাষাবাদ করা হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
এ মহাপরিচালক আরও বলেন, আমাদের দেশে যত ধরনের ধান উদ্ভাবন হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো ৯২। আমাদের উদ্ভাবিত ৮৯ অন্য জায়গায় দিয়েছি। ৮১ সবচেয়ে গ্রিন কোয়ালিটি। সবচেয়ে ভালো এবং খুব ফলন দেয়। ৯২, ৮১ বাংলামতি ব্রি ধান ৫০ আমরা এখানে (রাঙামাটি) নিয়ে এসেছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা এ অঞ্চলে কাজ করছেন। সারাদেশে আমরা কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২২
এসআই