ঢাকা, শনিবার, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

হাওরজুড়ে আমনের সৌন্দর্য

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
হাওরজুড়ে আমনের সৌন্দর্য হাওরজুড়ে রোপা আমন ধান। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: সবুজ ধানে ধানে ভরে উঠছে মাঠ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন।

মাঠজুড়ে এখন কৃষকদের সোনালি স্বপ্নের ছড়াছড়ি।  

মৌলভীবাজারের মাঠে এখন সবুজ পাতার ফাঁকে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন বাতাসে দুলছে। চলতি বছর আমন মৌসুমে পরিমিত বৃষ্টি আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। পরিমিত আগাম বৃষ্টি পেয়ে রোপা আমন চাষে মাঠে নেমে ছিলেন কৃষকরা। তাই এবার একটু আগাম ধান ঘরে তুলবেন কৃষকেরা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠগুলোতে যতদূর চোখ যায় চারিদিকে সোনালি ফসলের সমারোহ। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিক থেকে কৃষকরা সোনালি ফসল ধান কাটা শুরু করবেন। অগ্রহায়ণ মাস এলেই পুরোদমে আমন ধান কাটা এবং মাড়াই শুরু করবেন কৃষকরা।

তবে মৌসুমের শুরুতে কয়েক দিন খরা থাকায় মাঠের ধান কিছুটা পিছিয়ে ছিল। আমনের মাঝামাঝি সময়ে নানান রোগবালাই ও ইঁদুরের অত্যাচার এবং শেষ দিকে আমনক্ষেতের সামান্য ক্ষতি হলেও স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকদের চেষ্টায় সব ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন কৃষকরা। এখন ফলন ভালো হবে এমন স্বপ্ন নিয়ে নতুন করে আশাই বুক বেঁধেছেন চাষিরা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইলহাওর এলাকার কৃষক মিরাজ মিয়া বলেন, প্রতিবছরই আমন ধানের চাষ করি। এবছর প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। সব পরিচর্যা ও কীটনাশক প্রয়োগ শেষ হয়েছে। আশা করি এবার ভালো ধান পাবো।

ওই এলাকার অপর কৃষক সামছু মিয়া বলেন, এবছর ১৩০ বিঘা জমিতে ব্রি-৯৮ আমনের আবাদ করেছি। অধিকাংশ জমিতেই এই হাইব্রিড ধান লাগানো হয়েছে। আশা করছি, ভালো ফলন হবে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার পাল বলেন, উচ্চ ফলনশীল আমন জাতের মাঝে ভালো ধান অনেকগুলো রয়েছে। তার মাঝে ব্রি ধান-৮৭ অন্যতম। ফলন চলে আসে ১২৭ দিনের মধ্যে। এছাড়াও ব্রি ধান-৯৮ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে কৃষকরা ধান গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।



শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জানান, এ বছরে উপজেলায় ১৫ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৩৬৩ হেক্টর। বেশি ফলন যেটা সেটা হলো- ব্রি ধান ৪৯, ব্রিআর ১১, ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৭৫, ব্রি ধান ৭১, বিনা ধান ৭,  বিনা ধান ১৭, বিনা ধান ১৬ এগুলোই বেশি লাগানো হয়েছে।  
ধান কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে কিছু বিশেষ জাতের স্বল্পকালীন সময়ে উৎপাদনশীল কিছু আমনের জাত রোপন করিয়েছি যাতে কৃষকরা ধান কাটা শেষ করেই পরবর্তী ফলস হিসেবে সরিষা রোপন করতে পারে। এধানগুলো কাটা পড়বে কার্তিকের শেষে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার এর উপপরিচালক (ডিডি) সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, চলতি বছর হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওরসহ জেলার বড় বড় হাওর-বিল এবং সমতল ভূমি মিলে চলতি বছর আমাদের মৌলভীবাজার জেলায় মোট ১ লাখ ১৬শ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়েছে। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৪শত ৫৫ হেক্টর। সেক্ষেত্রে ১৪৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বেশি অর্জিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার কিছুটা বেড়েছে।  

গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ধান রোপণে সময় জমিতে প্রয়োজন মতো ত্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) এবং মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার প্রয়োগ করতে হয়। কৃষকদের গাফিলতির কারণে কোনো কোনো জমির ধানের পাতায় হলুদ বর্ণ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে কুইক ফসফেটসহ স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মতো সার ও ওষুধ স্প্রে করলে ধানের পাতা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।