ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সবজি চাষিদের মাথায় হাত!

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২২
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সবজি চাষিদের মাথায় হাত!

লক্ষ্মীপুর: তপ্ত রোধে ক্ষেতের মাঝখানে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বসে আছেন কৃষক জালাল আহমদ। চলতি মৌসুমে লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জের চরমনসা গ্রামে সাড়ে তিন কানি জমিতে টমেটো চাষ করেছেন তিনি।

প্রতি কানিতে চাষাবাদ খরচ পড়েছে সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকার কাছাকাছি। মাস খানেকের মধ্যে ফলন আসার সম্ভবনা ছিল। গাছে গাছে ছিল ফুল।

কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং জালাল আহমদের স্বপ্নকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ক্ষেতে থাকা বেশিরভাগ টমেটো গাছ মরে গেছে। কোন কোন গাছ ঝড়ে ভেঙে গেছে। নতুন করে আবার চারা লাগাবেন, সেই সময়ও নেই। ঝড়ের দুই সপ্তাহ আগেও প্রথম দফায় ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন তিনি। তখন ভারী বর্ষণের কারণে টমেটোর চারা মরে যায়। পরে দ্বিতীয় দফায় চারা লাগাতে হয়েছিল।

শুধু টমেটো ক্ষেতই নয়, দুই কানি জমির মরিচ, বেগুন এবং শশারও ক্ষতি হয়েছে জালাল আহমেদের। এছাড়া ৩৬ শতাংশ জমিতে তার একটি বরইয়ের বাগান ছিল। সেই বাগানটিও ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ধার-দেনা, লোন নিয়ে চাষাবাদ করা এ চাষি এখন আর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।

বাংলানিউজকে জালাল আহমেদ বলেন, পরপর দুই দফা ক্ষতির শিকার হয়েছি। ক্ষেতে টমেটোর চারা লাগানোর কয়কদিনের মাথায় ভারী বৃষ্টি হয়। তখন কিছু টমেটো গাছ মারা গেছে। বীজতলায় চারা ছিল, দ্বিতীয়বার চারা রোপণ করেছি। কিন্তু এখন আবার ঝড়ে ক্ষেতে থাকা সিংহভাগ চারা মারা গেছে। বীজতলায় চারা নেই, আর বীজতলা তৈরিরও সময় নেই। এখন আবার কোথায় থেকে নতুন চারা লাগাবো? এবার টমেটো চাষাবাদে এ অঞ্চলের বিপজ্জয় ঘটবে।

তিনি আরও বলেন, মরিচ, শশা, বেগুন গাছেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আমাদের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে গেছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকা শীতকালীন সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে শিম, টমেটো, ফুল কপি, বাঁধা কপি, লাউ, শশা, কুমড়া, করল্লা, কাঁচা মরিচ, বরবটিসহ নানা ধরনের সবজি চাষাবাদ হয়। প্রতি বছর উন্নত জাতের সবজি চাষে বিপ্লব ঘটে এ অঞ্চলে। অবশ্য এর জন্য কৃষকদের খাটনি এবং চাষাবাদ খরচও অনেক বেশি পড়ে।

এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয় টমেটোর। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সেগুলো সরবরাহ করা হয়।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এই অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে বিপজ্জয়ের চিত্র। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং যেন তার যাত্রাপথের চিহ্ন রেখে গেছে এসব সবজি ক্ষেতের ওপর দিয়ে। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে অনেক কচি গাছের চারা। এতে গাছ মরে বিবর্ণ হয়ে গেছে আর সঙ্গে কৃষকদের স্বপ্নও বিপন্ন হয়েছে।

ঝড়ের এক সপ্তাহ আগেও ওই সব ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ এবং সতেজ চারা গাছে ফুল ধরে আছে। ক্ষেতের পরিচর্যায় কর্মব্যস্ত সময় পার করছিলেন কৃষক ও শ্রমিকরা।

ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকার কৃষক মো. হেলাল বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ কানি জমিতে টমেটো চাষা করেছি। ঝড়ের কবলে পড়ে অনেকগুলো গাছ মারা গেছে। নতুন করে চারা লাগালেও সেগুলোতে ফলন আসবে মৌসুমের শেষে। তখন আর বাজারে টমেটোর ভালো দাম পাওয়া যাবে না।

আরেক কৃষক আবদুর রহিম বলেন, আধাকানি জমিতে টমেটোর চারা লাগিয়েছিলাম। ঝড়ে কচি গাছের ডালপালা ভেঙে গেছে। কিছু গাছ আবার মাঝখান দিয়েও ভেঙে গেছে।

কৃষক মো. আব্বাছ বলেন, এবার শশা, টমেটো এবং লাউয়ের চাষ করেছি। লাউ গাছে মাত্র ফুল থেকে ফল বের হয়েছে। ঝড়ের কবলে পড়ে সেই গাছগুলোর লতা ছিড়ে গেছে। করল্লা গাছ থেকে সব করল্লা ছিড়ে গেছে।

কৃষক ওসমান বলেন, ২৪ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছি। তাতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলনের লক্ষণও ভালো ছিল। প্রথম দফায় ১৮ কেজি কাঁচা মরিচ ৯০০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি। সর্বনিন্ম দামে মরিচ বিক্রি করলেও দুই লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু তার আগেই ঝড়ের কবলে পড়ে সব গাছ মরে গেছে। এছাড়া দুই কানি জমিতে করল্লা, শশিন্দা, বরবটি ও টমেটো লাগিয়েছিলাম। সেগুলোর অবস্থাও খারাপ।

কৃষক আবদুস সহিদ বলেন, প্রায় চারকানি জমিতে টমেটো লাগিয়েছি। কয়েকদিন আগের ভারী বৃষ্টিতে অনেক গাছ মারা গেছে। দ্বিতীয় দফা গাছ লাগানোর পরে আবার ঝড়ের কবলে সেগুলো মারা গেছে।

এদিকে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ড. মো. জাকির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঝড়ে শীতকালীন সবজির সামান্য ক্ষতি হয়েছে।  

যদিও তার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২২
এফআর/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।