ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

সৈয়দপুরে সৌর ‘পাতকুয়া’য় কৃষকের স্বপ্ন পূরণ

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
সৈয়দপুরে সৌর ‘পাতকুয়া’য় কৃষকের স্বপ্ন পূরণ

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার পল্লীতে সৌরবিদ্যুতের পাতাকুয়ায় স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে চাষিদের। লোডশেডিং ও ডিজেলের দাম বাড়ায় জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে যখন কৃষকেরা চিন্তিত, তখন আশার আলো দেখাচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাতকুয়া।

 

এর মাধ্যমে দুই হাজারের বেশি কৃষকের জমি যেমন সবুজ হচ্ছে, তেমনি বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মিটছে।

সৈয়দপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয় প্রান্তিক কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য ২০১৮ সালে পাতকুয়া প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। প্রকল্পটির আওতায় ওই বছরই উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় সৌরবিদ্যুৎ চালিত চারটি পাতকুয়া (ডাগওয়েল)। প্রতিটি কুয়ার জন্য খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কুয়াগুলোর মাধ্যমে ২৫০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আর বিনা খরচে সেচের সুবিধা পাচ্ছেন ইউনিয়নের দুই হাজারের বেশি চাষি।

কৃষক ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বলছেন, পাতকুয়ার ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনমান পাল্টে গেছে।  

বড়দহ গ্রামের উপকারভোগী কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সেচের অভাবে আমার প্রায় পাঁচ বিঘা জমি পতিত থাকত। পাতকুয়া হওয়ার পর এর মাধ্যমে ফসলে সেচ দেওয়ায় পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি। সম্পূর্ণ বিনা খরচে এ সেচ সুবিধা পাওয়ায় আমার মতো অনেক চাষি খুশি।  

একই গ্রামের আরেক কৃষক আতাউর রহমান বলেন, কুয়াগুলো সৌরশক্তিতে চলার কারণে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া ইচ্ছেমতো পানি তোলা যায়।

বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন বলেন, সেচের অভাবে এক সময় ফসল ফলাতে না পেরে বহু কৃষক অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতেন। এখন এ সেচ প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ায় তারা ১২ মাসই ফসল ফলাতে পারছেন। এতে তাদের পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা, কমেছে পরিশ্রম।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহীনা বেগম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত পানির স্তর নিচের দিকে নামছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার চাষিরা। এক সময় কৃষি ও সুপেয় পানির নির্ভরযোগ্য আধার ছিল পাতকুয়া। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অগভীর ও গভীর নলকূপসহ নানা প্রযুক্তির কাছে হারিয়ে যায় পাতকুয়া। দীর্ঘদিন পর আবার কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজের জন্য প্রয়োজন অনুভব করায় সেচসহ বহুমুখী কাজে পাতকুয়ার ব্যবহার শুরু হয়েছে।

ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের নিচ পর্যন্ত গোলাকার আকৃতিতে মাটি খনন করে চারপাশ থেকে চুয়ানো পানি ধরে রাখার আধারকে পাতকুয়া বলা হয়। এ পানি এলএলপির মাধ্যমে প্রথমে একটি ট্যাংকে তোলা হয়। তারপর সৌর শক্তি ব্যবহার করে যন্ত্রের মাধ্যমে সেই পানি দিয়ে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া হয়। এছাড়া বাড়িঘরেও ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।