ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আফরোজা পারভীন 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন আফরোজা পারভীন 

ঢাকা: সাহিত্যে গভীর জীবনদর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়ে আর সোজা সাপ্টা সাহসী লেখাকে কেন্দ্র করে এবার ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’ পেলেন কথাসাহিত্যিক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক, নাট্যকার, কলাম লেখক আফরোজা পারভীন। তার অগ্রজ, অনুজ কথাসাহিত্যিকদের মতে, দীর্ঘ সাহিত্যচর্চায় এই লেখক তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন।

নারীবাদের ক্ষেত্রে পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ না করে সমকক্ষ হিসেবে হাজির করেছেন।

গল্প, উপন্যাস ও শিশুসাহিত্যে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার।  

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে পাক্ষিক অনন্যা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলা ১৪০১ সনে (১৯৯৩ সাল) ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর একজন কৃতী নারী সাহিত্যিক অথবা সাহিত্য–গবেষককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সাহিত্যিকের লেখা নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাশদী, হামীম কামরুল হক ও কথাসাহিত্যিক নাসরীন মুস্তাফা। সভাপতিত্ব করেন অনন্যা ও ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।  

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাহিত্যিক ঝর্ণা রহমান। অনুষ্ঠানে আফরোজা পারভীনকে সম্মাননা ক্রেস্ট, শুভেচ্ছাপত্র ও এক লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। শুরুতে তাকে উত্তরীও পরিয়ে দেওয়া হয়।

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আফরোজা পারভীন বলেন, আমি ভাগ্যবান যে আমার পরিবার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবার। বাবা-মা আমাকে কখনোই মেয়ে হিসেবে আলাদা করেননি। আমার স্বামী আমাকে লেখার শুধু উৎসাহই দেননি, নিজের সাধ্যমতো লেখার উপকরণ কিনে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমার সন্তানরা সব সময় উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু অনেক নারী আছেন তাদের প্রতিভা থাকলেও আমার মতো পরিবেশ ও পরিবার পান না। লেখার খাতা পান না।  

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ আমার জীবনে অনেক বড় উলটপালট করে দেওয়ার মতো ঘটনা। যে সময় আমি কৈশোরে ছিলাম বলে আমার মা আমাকে পরিবারের সঙ্গে রাখতেন না। মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপট আমাকে লেখার অনুপ্রেরণা দেয়। চারপাশের প্রত্যেকটি মানুষই এক একটি গল্প শুধু তার ভেতরের গল্পটাকে জানতে হয়।  

তাসমিমা হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অনেক মানুষের অবদান আছে। যা আফরোজা পারভীনের লেখায় কথাও আবারও প্রকাশ পায়। অনন্যা যোগ্য নারীকে সম্মাননা দিতে পেরে সন্তুষ্ট।  

তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময় অনন্যা শীর্ষ দশ ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া শুরু করি, যখন সমাজে নারীকে মূল্যায়ন করা হতো না। আমরা এখন ডিজিটাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। জীবনযাপনের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে, নানা কারণে অস্থিরতা বিরাজ করছে সমাজে। সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে অনন্যা।

আন্দালিব রাশদী বলেন, আফরোজা পারভীন তার লেখার মধ্য দিয়ে দৃশ্যপট আঁকতে পারেন। এটা তার লেখার বড় দিক। যখন তার লেখা পড়ি তখন মনে হয় দৃশ্য আর চরিত্রগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সব ক্ষেত্রের মতো নারীর সাহিত্যে দাপটের সঙ্গে বিচরণ করছে।  

হামীম কামরুল হক বলেন, আমাদের মধ্যে একটা বড় ধারণা- যে লেখকের বেশি বই থাকে, তারা মান সম্পন্ন লেখক নয়। কিন্তু আফরোজা পারভীনের প্রকাশিত ১২৫টি গ্রন্থ প্রমাণ করেন তিনি ভালো লেখক। আমরা লেখকরা মৌলিক লেখার পেছনে ঘুরতে ঘুরতে পিছিয়ে যাই। কিন্তু পুরোনো বিষয়ও প্রত্যেক লেখক নিজের মতো নতুন করে লিখতে পারে।  

তিনি বলেন, আফরোজা পরভীন একজন গোছানো ধ্রুপদী লেখক। তার লেখা পড়লেই বোঝা যাবে মুক্তিযুদ্ধ তাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।

নাসরীন মুস্তফা বলেন, তার লেখার মধ্য দিয়ে তাকে আলাদা করা যায়। অনন্যা আফরোজা পারভীনকে অনেক দেরিতে খুঁজে পেয়েছে। এখন বাংলা একাডেমির পালা।

অনুষ্ঠানে শুরুতে শিশুশিল্পী ইচ্ছে ‘নারী’ শীর্ষক একটি কবিতা আবৃত্তি করেন এবং সম্মাননা প্রাপ্ত লেখকের ওপর তাপস কুমার দত্ত পরিচালিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২৩
এইচএমএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।