ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কুর্দি কথাসাহিত্যে সাম্যবাদ এবং হাইফা জাঙ্গানা | সার্জিন শরীফ

বিবিধ ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
কুর্দি কথাসাহিত্যে সাম্যবাদ এবং হাইফা জাঙ্গানা | সার্জিন শরীফ

ধ্যপ্রাচ্য—যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নারীরা নির্যাতিত। নারী সেখানে শুধুই ভোগ্যপণ্য এবং পুরুষদের অধিকারের ‘বস্তু’।

কট্টরপন্থী ধর্মান্ধ-মৌলবাদী শাসক-শোষকেরা যুগের পর যুগ বিভিন্ন অনৈতিক ফতোয়ার মাধ্যমে নারীদের ঘরের কোণে বন্দি করে রাখার পাশাপাশি বঞ্চিত করে এসেছে তাদের ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকে। আর এসব অত্যাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের সাহসী নারীরা—ফতোয়ার কবলে পড়ে প্রাণনাশ, দোররা আর প্রস্তারাঘাতের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে এগিয়ে এসেছেন স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে, নেমেছেন রাস্তায়, ধরেছেন কলম আর ফুটিয়ে তুলেছেন বাস্তবচিত্র। জীবনের ঝুঁকিকে তুচ্ছজ্ঞান করে কট্টরপন্থী মৌলবাদীদের ফতোয়ার বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব নারীরা সোচ্চার হয়েছেন তাদের মধ্যে কথাসাহিত্যিক হাইফা জাঙ্গানা অন্যতম।

হাইফা জাঙ্গানা ১৯৫০ সালে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে জন্মগ্রণ করা বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন কুর্দি নারী। তিনি একইসাথে ঔপন্যাসিক, লেখক, চিত্রকর এবং একজন বামপন্থী রাজনীতিবিদ। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস হলো ‘উইমেন অন অ্যা জার্নি: বিটুইন বাগদান অ্যান্ড লন্ডন’। বইটিতে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান সময়ে ইরাকের সমাজে নারীদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—‘নট অন মোর ডেথ’ এবং ‘ওয়ার উইথ নো ইনড’।



সাদ্দাম সরকারের আমলে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী বন্দি, যাকে কিনা রাজনৈতিক কারণে বন্দি করা হয়েছিল। জেলখানার বন্দিত্ব, অত্যাচারের অভিজ্ঞতার কথা বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। এসব অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা তার ‘ড্রিমিং অব বাগদাদ’ বইটি লিখতে সময় লেগেছিল প্রায় আট বছর। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করার জন্য ইরাকে থাকেন



কুর্দি বংশোদ্ভূত হাইফার বাবা ছিলেন একজন বামপন্থী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী। হাইফা ইরাক ইউনিভার্সিটি এবং স্কুল অব ফার্মেসি থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। বাবার পদাঙ্কনুসরণ করেই হাইফা মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইরাকি কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনে যোগ দেন। তাঁর আজন্ম ব্রত ছিল স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের দেশ এবং মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া। আর সে লক্ষ্যে তিনি তরুণ বয়সেই ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বৈরাচার, মৌলবাদ আর ফতোয়া দিয়ে নারীদের বন্দি করে রাখার বিরুদ্ধে আন্দোলনে। এসব আন্দোলনে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকার কারণে ছাত্রাবস্থায়ই তিনি ক্ষমতাসীন সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টি’র রোষানলে পড়েন। ফলে তাঁকে বরণ করতে হয় বন্দিত্ব, সইতে হয় অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার।

সাদ্দাম সরকারের আমলে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী বন্দি, যাকে কিনা রাজনৈতিক কারণে বন্দি করা হয়েছিল। জেলখানার বন্দিত্ব, অত্যাচারের অভিজ্ঞতার কথা বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। এসব অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা তার ‘ড্রিমিং অব বাগদাদ’ বইটি লিখতে সময় লেগেছিল প্রায় আট বছর। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করার জন্য ইরাকে থাকেন। ১৯৭৫ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন-পিএলও’র ফার্মাসিউটিক্যাল শাখার ব্যবস্থাপক থাকাকালীন হাইফা সিরিয়া এবং লেবাননে অবস্থান করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি স্থায়ীভাবে লন্ডনে চলে আসেন এবং এখন পর্যন্ত তিনি সেখানেই বাস করছেন।

একজন লেখক হিসেবে হাইফা ইউরোপ এবং আমেরিকায় ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সাথে কাজ করেছেন। চিত্রশিল্পী হিসেবে হাইফার চিত্রকর্ম লন্ডন এবং আইসল্যান্ডে অন্য একজন মহিলা চিত্রশিল্পীর সাথে যৌথভাবে প্রকাশিত হয়। ড্রিমিং অব বাগদাদ বইটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সহজ-সরল ভাষায় কাব্যিক ঢঙে পাঠকের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এই উপন্যাসে রাজনীতিকে বিমূর্ত কোনো ধারণা হিসেবে না দেখিয়ে ব্যক্তিজীবনের একাকিত্ব, ভীতি এবং মানসিক স্খলনের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে। ‘নট ওয়ান মোর ডেথ’ বইটিতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রেক্ষাপটে ইরাকে আমেরিকা-ইংল্যান্ডের যৌথ আগ্রাসন এবং ওই সময়ে শিল্পী, সাহিত্যিক এবং সাধারণ মানুষের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়েছে।

হাইফার লেখায় সাম্যবাদী ধারাটা খুব স্পষ্ট। রাষ্ট্রীয় শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার প্রতিটি লেখা কামানের গোলার মতো। ছাত্রাবস্থায় রোপিত হওয়া সাম্যবাদের বীজ তার প্রতিটি সাহিত্যকর্মকে এক অন্যমাত্রায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। হাইফার চিত্রকর্মেও সেই শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইরাকের সাম্যবাদী ধারার কথাসাহিত্যে তিনি ছাড়াও হয়ত আরো অনেকে বিচরণ করেছেন, তবে নারী হিসেবে সেই ভূমিকাটা নিঃসন্দেহে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।



বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫

** উর্দু কথাসাহিত্যে নারীবাদ এবং রশিদ জাহান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।