ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

আবেদন নিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ভাষ্য

সারচার্জের হার কমানোই মুখ্য

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
সারচার্জের হার কমানোই মুখ্য

ঢাকা: নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা থেকে শুরু করে সারচার্জ মওকুফের আবেদন- বদনাম পিছু ছাড়ছে না রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। এদিকে, দেশে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স।

যেগুলো বর্তমান, তাদের মুখ্য চাওয়া হলো বিমানের সারচার্জের হার কমানো।

জানা গেছে, সম্প্রতি সারচার্জ বাবদ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পাওনা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাপক এ অর্থ মওকুফ চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এতে করে নতুন করে বিমানের সক্ষমতা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

গেল মাসে বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদ হোসেন। তার এক মাসের মধ্যেই বিমানের অর্থ মওকুফ চাওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিমান কি আদৌ লাভজনক প্রতিষ্ঠান কিনা।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিইও জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো একটি অর্থ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আয়-ব্যয়ের যে হিসাব- সেটি লাভ কিংবা লস। এটা ১২ মাস ভিত্তিক। এটি একটা নির্দিষ্ট সময়ে আপনি অপারেশন থেকে কী পরিমাণ উপার্জন করেন; কত পরিমাণ ব্যয় করেন- তার ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়। সিভিল অ্যাভিয়েশনের কাছে আমাদের যে দেনা- সেটি আমাদের দায়, যা দৈনিক ভিত্তিতে হিসাব হয়। এটা লাভ-লসকে রিফ্লেক্ট করে না। দায় রেখে যে আপনি লাভ করতে পারবেন না, তা কিন্তু না। ’

তাহলে দায় কি লাভ-লসের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক কিনা: জাহিদ বলেন, ‘দায়টা কোম্পানির দীর্ঘ সময়; অর্থাৎ ২০-৩০ বছর ধরে চলমান একটা হিসাব। এর মধ্যেই কোনো বছর বিমান সেল রেভিনিউ করল; আবার কোনো বছর করলো না। সেটা আলাদা বিষয়। দায় রেখে লাভ করা যাবে না- এ প্রত্যয় ঠিক না। ’

এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে জানানো হয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সারচার্জ হিসেবে দেনা ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। এ দেনা মওকুফ করতে বেবিচককে ‘অনুরোধ’ করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

এর আগে, গত ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে সারচার্জ মওকুফ বিষয়ক একটি চিঠি জারি হয়। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের স্বাক্ষর করা ওই চিঠিতে বলা হয়, বেবিচকের কাছে বিমানের দেনার পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল বিল ৯৫৩ কোটি টাকা। ভ্যাট ও ট্যাক্স ৩৪২ কোটি টাকা ও সারচার্জের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বেবিচক কর্তৃপক্ষের দাবি করা বকেয়ার ওপর সারচার্জ (প্রতিমাসে ৬ শতাংশ হারে) মওকুফ করার বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষর তরফ থেকে অনুরোধ করা হয়। এ অবস্থায় বিমানের কাছে বকেয়া ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ১৪ লাখ টাকাসহ বকেয়ার ওপর ৬ শতাংশ হারে সারচার্জ মওকুফ করার জন্য ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ করা হলো।

তবে বিমান সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিমানের কাছে বেবিচকের মোট পাওনা ছিল প্রায় ৮ হাজার ৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিমানের এমডি মো. জাহিদ হোসেন মন্ত্রণালয়ে এক চিঠি দেন। চিঠিতে বেবিচকের পাওনা বকেয়ার ওপর সারচার্জ মওকুফ করার আবেদন করেন তিনি।

ওই চিঠিতে বলা হয়, বিমান দেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে ব্যবসা পরিচালনা করে। এ অবস্থায় সারচার্জ মওকুফ করে করোনাজনিত ক্ষতি কাটিয়ে বিমানকে আর্থিক কার্যক্রমে আরও গতি আনতে সহযোগিতা প্রয়োজন। কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তির পর জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অসম প্রতিযোগিতা, উড়োজাহাজের স্বল্পতা, পুরনো উড়োজাহাজ বহর থেকে সরানো ইত্যাদি কারণে আগের বকেয়া অর্থ বেবিচককে পরিশোধ করা বিমানের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

চার্জ মওকুফের বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুফিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিমানের যে বকেয়া এটি মূলত রাজস্বে খাতের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা চাইলে মওকুফ করতে পারে। তবে, আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছে। আমাদের থার্ড টার্মিনালসহ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের টাকাটা দরকার। তবে, মন্ত্রণালয় মওকুফ করতে চাইলে সে বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। ’

বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ভাষ্য, শুরু থেকেই তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চেয়ে আসছে। এটা যেহেতু আন্তর্জাতিক ব্যবসা- বিমানকে যদি টিকিয়ে রাখতে যদি সুবিধা দেওয়া হয়, অনুরূপ প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলোর জন্যও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তা ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকা থাকা মুশকিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা চার্জ মওকুফের দাবি করেননি। তারা চাচ্ছেন যেন সারচার্জ কমানো হয়। ব্যাক লগ চার্জ বাবদ প্রতিষ্ঠানগুলো ৭২ শতাংশ দেয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, মাস প্রতি ১ শতাংশ হারে বাৎসরিক ১২ শতাংশ সারচার্জ দেওয়া। দেশের জিডিপিতে অবদান আছে বিধায় তাদের এ দাবি। বিমানকে যদি ভর্তুকি দিয়ে অংশীদারত্ব দেওয়া হয়, তারা কেন ভর্তুকি ছাড়া অংশীদার থাকবে, উঠেছে সে প্রশ্নও।

এখনকার যে সারচার্জের হার সেটি কমিয়ে একটি পরিশোধযোগ্য হার নির্ধারণ করা যেন হয়- সে দাবি করেছেন বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ারের এমডি ও এওএবির সাধারণ সম্পাদক এম মুফিজুর রহমানও।

প্রসঙ্গত, সারচার্জজনিত কারণে দেনায় ডুবে এর আগেও দেশিয় সংস্থা জিএমজি, রিজেন্ট ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মতো সম্ভাবনাময় কয়েকটি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে এওএবি’র তরফ থেকে এর আগে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বাৎসরিক ১২ শতাংশ হারে সারচার্জ নির্ধারণ করার দাবি জানানো হয়। বর্তমানে এটি মাসিক ৬ শতাংশ হারে বাৎসরিক ৭২ শতাংশ কাটা হয়, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০২২
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।