ঢাকা: সিএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন মালিকেরা যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো আবার ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করছেন। সব সময় সব জায়গায় সিএনজি না পাওয়া, দাম বেড়ে যাওয়া এবং সিএনজিচালিত ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি হওয়ায় তারা এই রূপান্তরের কাজ করাচ্ছেন।
যানবাহন মালিকদের মতে এক ঘন ফুট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা আর এক লিটার ডিজেলের দাম ৬১ টাকা। অর্থাৎ দুই ঘন ফুট সিএনজির দাম আর এক লিটার ডিজেলের দাম সমান।
আর এক লিটার ডিজেল দিয়ে যত দূরত্ব অতিক্রম করা যায়, সে দূরত্ব অতিক্রম করতে দুই ঘন ফুট সিএনজি লাগে। তার ওপরে সিএনজি চালিত যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ডিজেল চালিত যানবাহনের চেয়ে বেশি।
গণ পরিবহনের মালিকরা বলেন, সবচেয়ে বড় সুবিধা আমরা সব জায়গায় তেল পাই সব সময়ের জন্য।
তবে সব পরিবহন যদি সিএনজি থেকে ডিজেলে রূপান্তর করা হয়, তবে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
এছাড়া যারা কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সিএনজি স্টেশন স্থাপন করেছেন, তারা অনেক লোকসানের মধ্যে পড়বেন।
চাঁদপুর বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পদ্মা কোম্পানির ৩০টি গাড়ির মধ্যে ১৭টি ডিজেলে রূপান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব গাড়ি ডিজেলে রূপান্তর করা হবে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ৩টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সিএনজি পাওয়া যায় না, এটা তাদের জন্য বড় সমস্যা। তাছাড়া ডিজেলচালিত বাসে যে টায়ার এক বছর চলে, সিএনজি চালিত বাসে সেই টায়ার চলে ৫ মাস। অন্যদিকে দাম ও দূরত্ব বিবেচনা করলে ডিজেল-সিএনজি সমান।
তাই ঝামেলা করে গাড়ি আর তারা সিএনজিতে রাখতে চাচ্ছেন না।
সায়দাবাদ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার কোম্পানির ৩৫টি গাড়ির মধ্যে ৮টি গাড়ি সিএনজি থেকে তেলে রূপান্তর করেছি। সিএনজির যা দাম, সে তুলনায় ডিজেল অনেক ভালো। কারণ সিএনজিচালিত গাড়ির ইঞ্জিন তাড়াতাড়ি খারাপ হয়। কিন্তু তেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিন বেশি দিন টেকসই হয়। ’
তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীকে উপদেষ্টারা ভুল বুঝিয়ে সিএনজির দাম বাড়িয়েছেন। আমার বিশ্বাস, সরকার এ বিষয়ে নজর দেবে। ’
এছাড়া গাবতলী-সায়েদাবাদ মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মেরাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা ১৬০টি মিনি বাসের মধ্যে ২০টি সিএনজি থেকে ডিজেলে রূপান্তর করেছি। এতে করে আমাদের বাসগুলো বেশিদিন টেকসই হবে। জ্বালানি খরচ যদি সমান হয়, তবে সিএনজিতে রাখার কোনো মানে হয় না। তবে সব বাস ডিজেলে রূপান্তর করতে সময় লাগবে, কারণ এতে খরচ পড়ে এক লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। ’
এ বিষয়ে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অতিরিক্ত জ্বালানি তেলের ব্যবহারে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনো-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ডিজেল ও পেট্রলে যদি সালফার, সীসার পরিমাণ বেশি থাকে তবে তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে। এর প্রভাবে প্রাথমিকভাবে মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং নার্ভস সিস্টেম দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কিডনি, ফুসফুসের সমস্যাসহ বমি বমি ভাব হতে পারে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, `সিএনজির দুই ধরনের দাম নির্ধারণ করতে হবে। যাত্রী পরিবহনের জন্য এক ধরনের এবং প্রাইভেট গাড়ির জন্য আরেক ধরনের। তারপরও যাত্রী পরিবহন যাতে সিএনজি থেকে ডিজেলে রূপান্তর না করা হয় সে বিষয়ে সরকারকে নজর রাখতে হবে। কারণ এতে শুধু পরিবেশের বির্পযয়ই ঘটবে না, এর সঙ্গে সঙ্গে সিএনজি স্টেশন মালিকদেরও আর্থিক সমস্যা দেখা দেবে। ’
এ বিষয়ে অনন্ত অ্যানার্জি রিসোর্স লিমিটেড সিএনজি রিফুয়েলিংয়ের ব্যবস্থাপক মো. নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাস মালিকেরা যদি সিএনজি বাদ দিয়ে তেলের দিকে ঝোঁকে, তবে আমাদের স্টেশন বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। কারণ ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা খরচ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ’
তিনি আরো বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা থেকে পর্যন্ত গ্যাসের চাপ থাকে না। কিন্তু যখন গ্যাসের চাপ শুরু হয়, সেই ৩টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সরকার সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ’
নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারকে সিএনজির দাম কমাতে হবে। আর বাস মালিকেরা সিএনজির বদলে যাত্রী পরিবহন যেন তেলে রূপান্তর না করে, সেদিকেখেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আমরাও বাঁচব, বাস মালিকরাও বাঁচবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১২
এমএস
সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;
জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।