ঢাকা : বেসরকারি সদস্যদের (মন্ত্রী ব্যতীত যে কোনো সংসদ সদস্য) উত্থাপিত বিল সংসদে উপেক্ষিত হচ্ছে। চলতি নবম জাতীয় সংসদে এখন পর্যন্ত ১৪টি বেসরকারি বিল উত্থাপিত হলেও পাস হয়েছে মাত্র একটি।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে বিগত আটটি সংসদে বেসরকারি সদস্যদের উত্থাপিত মোট ২৫৫টি বিলের মধ্যে পাস হয়েছে মাত্র ছয়টি।
পাস হওয়া বিলগুলোর বেশির ভাগই আবার শাসক দলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট।
সূত্র জানায়, চলতি সংসদে ১৪টি বেসরকারি বিল উত্থাপনের একমিটাত্র পাস হয়েছে এবং এখনও কর্তৃপক্ষের পরীক্ষাধীন রয়েছে তিনটি। আর ‘বেসরকারি সদস্যদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’তে পরীক্ষাধীন রয়েছে সাতটি বিল। সংসদে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে তিনটি বিল। এছাড়া অপর একটি বিল সরকারি বিল হিসেবে পাস হওয়ায় ওই বিলটির কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হয়েছে।
সংসদে পাসের অপেক্ষায় থাকা বিলগুলো হলো-- আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী উত্থাপিত ‘সরকারি ভূমি হইতে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বিল-২০০৯, ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) বিল-২০০৯, ‘সংসদ সদস্য আচরণ বিল-২০১০, এবং জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু উত্থাপিত ‘পিতা-মাতার ভরণ পোষণ বিল-২০১০। ’
চলতি সংসদে সাবের হোসেন চৌধুরী উত্থাপিত ‘দ্য লিপারস (রিপিল) অ্যাক্ট-২০১০’ গত বছর সংসদের ১১তম অধিবেশনে পাস হয়।
এদিকে, কমিটিতে পরীক্ষাধীন রয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন উত্থাপিত ‘খনিজ সামগ্রী রফতানি নিষিদ্ধকরণ বিল-২০১০’, ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০১০’ ও ‘বাংলাদেশ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকরণ বিল-২০১১’, আওয়ামী লীগের আকম মোজাম্মেল হক উত্থাপিত ‘সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল-২০১০ (সংবিধানের ৯, ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদের সংশোধন)’, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু উত্থাপিত ‘জনস্বার্থ বিল-২০১০’ এবং ‘গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (সংশোধন) বিল-২০১১’।
এছাড়া উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে ‘সুপিরিয়র জুডিশিয়াল কমিশন বিল-২০১২’ গত বৃহস্পতিবার সংসদে উত্থাপন হওয়ার পর কমিটিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
এদিকে, কর্তৃপক্ষের পরীক্ষাধীন রয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরী উত্থাপিত ‘খাদ্য, ঔষধ এবং প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিল-২০১১, ইসরাফিল আলমের উত্থাপন করা ‘বিদেশি নিবন্ধন বিল-২০১২ ও ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অসংগঠিত শ্রমিক কল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা বিল-২০১২’।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে গত আটটি সংসদে উত্থাপিত ২৫৫টি বেসরকারি বিলের মধ্যে অষ্টম সংসদে উত্থাপিত হয় ৫৪টি। উত্থাপিত ২৫৫টি বিলের মধ্যে মোট পাস হয়েছে ৬টি। আর অষ্টম সংসদে ৫৪টির মধ্যে পাস হওয়া একমাত্র বিল ‘জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন (রহিতকরণ) বিল-২০০২’। এটি উত্থাপন করেছিলেন বিএনপির শামসুল আলম প্রামাণিক।
এর আগে সপ্তম সংসদে উত্থাপিত ৫১টি বিলের মধ্যে একটি পাস হয়। ‘জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন বিল-২০০১’ নামের এই বিলটি উত্থাপন করেছিলেন আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী। পঞ্চম সংসদে উত্থাপিত ৭৪টি বিলের মধ্যেও শুধু ‘সংসদ সদস্যদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বিল-১৯৯৩’ পাস হয়েছিল।
তৃতীয় সংসদে উত্থাপিত পাঁচটি বিলের মধ্যে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল-১৯৮৭’ এবং দ্বিতীয় সংসদে উত্থাপিত ৪৮টি বেসরকারি বিলের মধ্যে ‘বিবাহে যৌতুক নিষিদ্ধকরণ বিল-১৯৮০’ ও ‘খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-১৯৮০’ পাস হয়।
এছাড়া চতুর্থ সংসদে ছয়টি বেসরকারি বিল উত্থাপিত হলেও একটিও পাস হয়নি। আর প্রথম ও ষষ্ঠ সংসদে কোনো বেসরকারি বিল উত্থাপিতই হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি বিল পাস না হওয়া সম্পর্কে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বাংলানিউজকে বলেন, “সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বেসরকারি বিল পাস হয় না। ”
তিনি বলেন, “পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিয়ে আমার উত্থাপিত বিল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই সমাজকল্যাণমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ”
তিনি আরো বলেন, “বেসরকারি বিল বলেই মনে হয় সরকার পজিটিভ রেসপন্স করে না। ”
বাংলাদেশ সময় : ১৫৩০ ঘণ্টা, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
এসএইচ/সম্পাদনা: আহমেদ রাজু, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস; আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর