ঢাকা: মালয়েশিয়ার সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি সই হলেই শুরু হবে সেদেশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া। আর এ কার্যক্রম শুরু করতে উপযুক্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন।
এরই মধ্যে কর্মীদের নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞাপনের খসড়া তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এই খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। সমঝোতা স্মারক সই করতে মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে মন্ত্রী এসব বিষয় চূড়ান্ত করে যাবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মালয়েশিয়াগমনেচ্ছু কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্রও চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের প্রথমে নাম নিবন্ধন করার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এজন্য নির্ধারিত থাকবে মাত্র একটি দিন। একদিনের মধ্যে যতজন শ্রমিক নিবন্ধন করতে পারবেন তাদের মধ্য থেকেই মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য চূড়ান্ত বাছাই করা হবে। তবে এই একবার নিবন্ধনই শেষ নয়।
যেহেতু কয়েক ধাপে লোক পাঠানো হবে সেহেতু প্রতিবার লোক নেওয়ার আগে অনলাইনে ফ্রি নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ‘আগে এলে আগে পাবে’ ভিত্তিই মানা হবে। তবে আগ্রহীদের অবশ্যই মেশিন রিডেবল (এমআরপি) পাসপোর্ট থাকতে হবে।
এই কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র (টিটিসি) বাছাই করা হচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে বিশেষ বিশেষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েই তাদের মালয়েশিয়া পাঠানো হবে। তবে প্রথমবার কতজন শ্রমিককে পাঠানো হবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র।
এ ব্যাপারে বিএমইটির পরিচালক (ট্রেনিং স্ট্যান্ডার্ড এবং প্লানিং) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘মোট পাঁচটি ধরনের কাজের জন্য কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। তবে প্রথম ধাপে কতজন লোক নেবে এটা এখনো জানা যায়নি। চুক্তি সইয়ের পরই এটা সম্পর্কে চূড়ান্ত ভাবে জানা যাবে। মূলত তখনই কর্মীদের নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা খসড়া তৈরি করে রাখছি যাতে কাজ কিছুটা এগিয়ে থাকে। ’
এদিকে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে পিছিয়ে যাওয়া জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি আগামী ২৬ নভেম্বর হবে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগামী ২৬ নভেম্বরই মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সই হচ্ছে। এর আগে আর কিছুই বলতে চাই না। তবে এ তারিখ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে শ্রমবাজার বিষয়ে এমওইউ চুক্তির পাশাপাশি মানবপাচার ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমন বিষয়ক চুক্তির খসড়াও চূড়ান্ত করে দেশটির কাছে পাঠানো করা হয়েছে। খসড়া দুটি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পৃথক পৃথক তিনটি এমওইউ সই হবে। ’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমদ খান এর সত্যতা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ মাসের শেষ সপ্তাহেই বহু প্রত্যাশিত সমঝোতাস্মারক সই হবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ’
জানা যায়, মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দুদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এমওইউ সই করবেন। পাঁচ সদস্যের একটি দল নিয়ে আগামী ১৯ নভেম্বর মরিশাসের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সেখানে গ্লোবাল ফোরাম অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (জিএফএমডি) বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি তার দল নিয়ে মালয়েশিয়াতে যাবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরও যথা সময়ে সেখানে উপস্থিত হবেন বলে জানা গেছে। কারণ এবার মালয়েশিয়া নতুন শর্ত দিয়ে বলেছে, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হতে হবে।
শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। কোনো শ্রমিক যেন অবৈধপথে ইমিগ্রেশন পার হয়ে মালয়েশিয়া যেতে না পারে তার জন্য এমন শর্তের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১২
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর/আরআর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]