ঢাকা, রবিবার, ৮ আষাঢ় ১৪৩২, ২২ জুন ২০২৫, ২৫ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: 

ক্ষতির মুখে ভারতীয় কোম্পানিগুলো, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পাকিস্তান

তৌহিদুর রহমান ও গৌতম ঘোষ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫২, জুন ২১, ২০২৫
ক্ষতির মুখে ভারতীয় কোম্পানিগুলো, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পাকিস্তান

ঢাকা: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য ও শ্রমবাজার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এছাড়া এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও শ্রমবাজারের ওপর তা প্রভাব ফেলবে। ইসরায়েলে ভারতের কোম্পানিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে পাকিস্তানের।  

প্রাকৃতিক গ্যাসে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে ইরান। আর অপরিশোধিত তেলে দেশটির স্থান বিশ্বে তৃতীয়। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে স্বাভাবিকভাবে উপমহাদেশে তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিমান ভাড়া ও যাতায়াত সময় বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারেও প্রভাব পড়বে।  

তেলের দামে প্রভাব:
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে ভারত উপমহাদেশে জ্বালানি তেলের দামের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ধীরে ধীরে তেলের দাম বেড়ে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তেল-গ্যাস  আমদানি করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। ইরান থেকে সরাসরি তেল আমদানি করে ভারত ও পাকিস্তান। আর বাংলাদেশ কাতার-ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। যুদ্ধের মধ্যেই হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকিও দিয়েছে ইরান। হরমুজ প্রণালী বন্ধ করলে বিকল্প পথে তেল-গ্যাস আমদানি করতে হবে। ফলে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে প্রভাব:
ইরানে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক কর্মী রয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের প্রচুর লোক ইরানে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। বাংলাদেশেরও ২ হাজারেরও বেশি লোক ইরানে আছেন। তবে ইরানের প্রতিবেশী দেশগুলো- যেমন ইরাক, ওমান, লেবানন, জর্ডান প্রভৃতি দেশে উপমহাদেশের লাখ লাখ মানুষ কাজ করেন। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে এসব দেশের শ্রমবাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। অনেকেই কাজ হারাতে পারেন।

বিমান ভাড়া বাড়বে: 
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। আবার বিভিন্ন দেশে যাতায়াতে ইরান-ইসরায়েল আকাশসীমার ব্যবহার এড়িয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে বিমানের ফ্লাইটগুলোকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এ কারণে বিমানে টিকিটের দাম যেমন বাড়ছে, একই সঙ্গে অতিরিক্ত সময়ও লাগছে। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মানুষের অনেক বেশি যাতায়াত। কেননা এসব দেশের লাখ লাখ  কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নানা পেশায় জড়িত আছেন। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে এই অঞ্চলের অনেক দেশ তাদের আকাশপথ সাময়িকভাবে বন্ধও করে দিয়েছে। ফলে বিমানযাত্রীরা বিপাকে পড়ছেন ।

জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব:
ইরান ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল-গ্যাস আমদানি ব্যাহত হলে ভারত উপমহাদেশের নাগরিকদের  জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ভাড়া, পণ্য পরিবহন, উৎপাদন খরচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদির দাম বাড়তে থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এই যুদ্ধের প্রভাবে উপমহাদেশে রেমিট্যান্সও কমে যেতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমবে:
ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই সামান্য। তবে দুই দেশের মধ্যে যে সীমিতভাবে বাণিজ্য হয়ে থাকে, এই যুদ্ধের ফলে সেটাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইরানে বাংলাদেশ প্রতি বছর পাটের সুতা রপ্তানি করে থাকে ৩০ থেকে ৪০ টন। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৯ হাজার টন পাটের সুতা ইরানে রপ্তানি হয়েছে। এর আগের বছর ২০১৪-১৫ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার টন। অপরদিকে ইরান থেকে বাংলাদেশ মসলা ও কার্পেট আমদানি করে থাকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে অর্থবছরে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে বছর বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রপ্তানির পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ও ইরান ডি-৮ এর সদস্য এবং সংস্থাটির সদস্য।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১০ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে ইরানে পাটজাত পণ্য, মাল্টিপল ক্যাবল, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য, তৈরি পোশাক।  

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইসরায়েলের সাথে আমাদের সরাসরি কোনো বাণিজ্য নেই। তবে শুনেছি আশেপাশের দেশগুলোর সাথে ইসরায়েল কিছু কনজুমার করে থাকে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক নিয়ে থাকে। যুদ্ধাবস্থায় যেকোনো দেশেই ঘাটতি হয়ে থাকে। সেখান থেকে আমাদের মেজর কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, ইরানের সাথে আমাদের বাণিজ্য এক সময় ভালোই ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় সেখানে ফর্মাল বাণিজ্য কম হচ্ছে। ইরান আমাদের কাছ থেকে পাটের সুতা নিয়ে থাকে। তৈরি পোশাক শিল্প ও কার্পেটের কাঁচামাল হিসেবে এই সুতা নেয়। তারা এটার দাম নির্ধারণ করে বার্ষিক ভিত্তিতে। সেখানে আমরাও সরাসরি করি না। যদি যুদ্ধ প্রলম্বিত হয় তবে কিছুটা প্রভাব পড়বে। যুদ্ধ হলে পৃথিবীর সব দেশেই বিশেষ করে যারা সরবরাহ করে থাকে তাদের একটু সমস্যা হয়।  

সচিব বলেন, আমরা সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ করে থাকি। সেক্ষেত্রে হরমুজ প্রণালীতে সমস্যা হলে সেটার প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়বে। তবে আমরা পার্শিয়ান দেশ যেমন কাতার ও সৌদি আরব থেকে সরবরাহ করে থাকি সুতরাং সেক্ষেত্রেও মেজর কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে তেলের চুক্তি দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে, সে কারণে আমাদের এখনও অতোটা বেশি চিন্তায় ফেলছে না। কারণ তেলের সাপ্লাই চেনের মধ্যে ইরান নেই। এজন্য আমাদের তেলের বাজারে সরাসরি প্রভাব পড়েনি। যদি যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন হয়তো প্রভাব পড়তে পারে।  

তিনি বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সার্বিক পরিস্থিতিতে সমস্যা হবে। এজন্য বিকল্প বাজার খোঁজার জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় সভা করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বর্তমানে ইউএসএর সোর্স থেকে কিছু এলএনজি আনার চেষ্টা করছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তেলের বাজারে এখনও প্রভাব পড়েনি। যুদ্ধটা ছড়িয়ে পড়লে সমস্যা হবে।  

এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ে সব দেশেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। কিন্তু আমাদের সাপ্লাই চেইনে যারা সরবরাহ করে তার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েলের সাথে আমাদের সরাসরি বাণিজ্যে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে এই মুহূর্তে আমরা তেমন কোনো প্রভাব দেখছি না।  

আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা:
বিশ্ব বাণিজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ রুট হলো হরমুজ প্রণালী ও সুয়েজ খাল। হরমুজ প্রণালী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ইরান। আর বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় তৈরি পোশাক পাঠাতে রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে হরমুজ প্রণালী ও সুয়েজ খাল। এখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘ মেয়াদে হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে হরমুজ প্রণালী। ইরান ইতোমধ্যেই হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকিও দিয়েছে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে ইউরোপ-আমেরিকায় পণ্য পাঠাতে ৩০-৩৫ শতাংশ রপ্তানি ব্যয় বাড়বে। ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ভারতের ভারসাম্যের কূটনীতি:
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ভারসাম্যের কূটনীতি গ্রহণ করেছে। কেননা দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ইসরায়েলের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রেখেছে, ইরানের সঙ্গেও তেমন সম্পর্ক রেখেছে। ভারত ইরান থেকে বিপুল পরিমাণে তেল আমদানিও করে থাকে।

যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। আর যুদ্ধ ঘিরে ভারত সরকার থেকে যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে ভারতের পক্ষ থেকে দুই দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে উভয় পক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যমান কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো ব্যবহার করে চলমান উত্তেজনা হ্রাস এবং সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টার তাগিদ দিয়েছে দেশটি। ভারত বলেছে, উভয় দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত ভারত।

তবে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ইরান-ইসরায়েল নীতির জন্য ভারত সরকারের অবস্থানের  তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি পুরো জাতিকে ধ্বংস করছেন, তখন ভারত কেবল নীরব সমর্থক নয়, বরং ইসরায়েলকে উৎসাহও দিচ্ছে। এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক সব নীতিমালার পরিপন্থী।

ভারত-পাকিস্তানের বাণিজ্যে প্রভাব:
ইরানের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের বাণিজ্য রয়েছে। ইরান-ভারতের মধ্যে প্রতি বছর ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। ভারত ইরানে চাল, চা, চিনি, ওষুধ ইত্যাদি রপ্তানি করে থাকে। আর ইরান ভারতে জ্বালানি তেল, কেমিক্যাল, বাদাম, মশলা, ফল ইত্যাদি আমদানি করে থাকে।

এদিকে ইরান-পাকিস্তানের মধ্যেও প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিলো ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলে ভারতের কোম্পানিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে: 
ভারতের অনেক কোম্পানি ইসরায়েলে ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে টিসিএস, উইপ্রো, আদানি গ্রুপ, এসবিআই, সান ফার্মা, ইনফোসিস প্রভৃতি।  ইতোমধ্যেই এসব কোম্পানি প্রাথমিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে কোম্পানি চরম ক্ষতির মধ্যে পড়বে। একই সঙ্গে অনেক কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়ে আনতে বাধ্য হবে।

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পাকিস্তান:
ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের ৯০৯ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে জটিলতা আছে। দুই দেশ দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য পরস্পর অভিযোগ করে আসছে। গত বছর জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী জইশ জইশ আল-আদল-এর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন ইরান। এই হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানও একই দাবিতে ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালায়। এখন ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পর পাকিস্তানের বেলুচিস্তানর নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকিতে আছে পাকিস্তান। সে আশঙ্কায় যুদ্ধ শুরু হতে না হতেই পাকিস্তান বেলুচিস্তানের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন:
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত উপমহাদেশের কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এই যুদ্ধের ফলে ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের যেসব দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা রয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া ভারত উপমহাদেশের সাথে ইরানের ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রমবাজার, বিশেষ করে জ্বালানি তেলের ওপরে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আবার এই যুদ্ধ ঘিরে বড় বড় শক্তি যেমন চীন ও  রাশিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। তখন ভারত উপমহাদেশের সঙ্গে এসব দেশের যে সহযোগিতা রয়েছে, সেসব বাধাগ্রস্ত হতে পারে।  

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের এক্সাইজ ও কাস্টমস বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইরান-ইসরায়েল ভারতের বন্ধু দেশ। তাই ভারত দুই বন্ধু দেশের সংঘাত নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ইরান ভারতকে বন্ধুত্বপূর্ণ শর্তে তেল দেয়, যা দিল্লির জন্য খুব প্রয়োজন। ইসরায়েলের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখা দরকার। তেলের দাম বাড়লে ভারতের সমস্যা তো হবেই। আর ভবিষ্যতের কথা ভেবে, ইরান এবং ইসরায়েল দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। ফলে ভারতের সামনে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ দুটোই আছে।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইহসানুল্লাহ টিপু মেহসুদ বলেছেন, অতীতে পাকিস্তান আঞ্চলিক যুদ্ধে প্রায়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। উদাহরণ হলো আফগানিস্তান যুদ্ধ। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি হলেও এখানের প্রায় ২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ শতাংশ শিয়া। আর পাকিস্তান আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার শিকার। শিয়া-অধ্যুষিত ইরানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সামরিক অবস্থান নিলে তা দেশীয়ভাবে বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৩ জুন ভোরে ইরানের বিভিন্ন স্থানে সামরিক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইরানও পাল্টা হামলা শুরু করে। দুই দেশে প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে।

টিআর/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।