ঢাকা, সোমবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

শিবিরের বিজয় বদলে দিতে পারে রাজনীতির গতিপথ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৪৪, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫
শিবিরের বিজয় বদলে দিতে পারে রাজনীতির গতিপথ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিজয়ী নেতারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু-জাকসু) নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। অন্যদিকে জয় তো দূরের কথা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও বামপন্থী প্যানেলগুলো।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ দুই ছাত্রসংসদের ফলাফল শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তা জাতীয় রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় শিবিরের বিস্তৃত প্রভাব কেবল বিএনপি নয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বদলে যেতে পারে সব সমীকরণ।

জামায়াতকে ঘিরে বদলে যেতে পারে সব সমীকরণ
অনেকে মনে করেন, ডাকসুতে শিবিরের জয় ঠেকাতে শিবিরবিরোধী সংগঠনগুলোর জোট গড়ে মাঠে নামা উচিত ছিল। জাতীয় নির্বাচনে জোট গড়ার ক্ষেত্রে ডাকসুর এই অভিজ্ঞতা প্রভাব ফেলতে পারে। জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হতে পারে নতুন মেরুকরণ। আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ ছিল সেটি এখন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরের বিজয়ের পর এখন জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আরও বেশি চিন্তা করতে হবে বিএনপির। শিবির সমর্থিত প্যানেলের এই বিজয় জামায়াতকে বিরোধী শক্তিগুলোর কাছাকাছি নিয়ে যাবে। যেটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সমীকরণ বদলে দিতে পারে। রাজনৈতিকভাবে যারা জামায়াত ও শিবিরের ঘোরতর বিরোধী, তথা বামপন্থীসহ ছোট ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে। এক্ষেত্রে ছোটখাট দলগুলোর কদর বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে।

একইভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপুল সফলতা ইসলামপন্থী, ডান ও মধ্যপন্থীদের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠনে উৎসাহিত করবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইসলাপন্থী এ দলটির যে জোট গঠনের প্রচেষ্টা, সেটিকে আরও সহজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়বে ছোট দলগুলোর
বিএনপির মতো বড় দল এখন আর জামায়াতের শক্তিকে খাটো করে দেখবে বলে মনে হয় না। তারা এখন নিশ্চয়ই হিসাব-নিকাশ করেই জামায়াতকে মোকাবিলার কৌশল নেবে। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটের রাজনীতিতে ছোট ছোট দলগুলোর কদর বাড়বে। তবে ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছাত্র সংগঠনের খারাপ ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে তাদের দর-কষাকষির ক্ষমতা কমাতে পারে।

প্রভাব পড়বে তরুণ ভোটারদের ওপর
ডাকসু ও জাকসুর এই ফলাফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে তরুণ ভোটারদের মানসিকতায়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিবিরের শক্ত উপস্থিতি প্রমাণিত হওয়ায় নতুন ভোটারদের একটি বড় অংশ জামায়াতের দিকে ঝুঁকতে পারে। দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের একটা ধারণা ছিল, বিএনপি একটি বড় দল এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারাই ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। কিন্তু ডাকসু ও জাকসুতে ছাত্রদলের পরাজয় সেই ধারনায় বড় ধরনের ধাক্কা দিল। জামায়াত ইসলামী মধ্যপন্থী এবং ইসলামপন্থীদের যে জোটগঠনের চেষ্টা করছে সেই জোট আগামীতে অকল্পনীয় সফলতা দেখাতেও পারে।

বিএনপির ওপর বাড়বে চাপ
দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বিজয় সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস ও কর্মসূচিসহ সবকিছুতে বিএনপিকে নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত-শিবিরের উত্থান আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। ফলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন বাস্তবতা তৈরি হবে, আরও বেশি গুরুত্ব পাবে জামায়াতে ইসলাম।

ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলো
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বিএনপি-এনসিপি-কমিউনিস্ট পার্টিসহ বামপন্থী সংগঠনগুলোর অফিসিয়ার পেজ থেকে তাদের সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতেও দেখা গেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ভোট চাওয়ার অভিযোগও এসেছে। এ ধরনের অভিযোগে ছাত্রদলের একটি উপজেলার সদস্য সচিবকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হারজিতের ব্যাপারটা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন ইজ্জতের লড়াই হয়ে গেছে। যে কারণে এই নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে বিএনপি, জামায়াত কিংবা এনসিপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আশঙ্কা দুইটাই আছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান গণমাধ্যমকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল অনেক বেশি প্রভাব রাখবে জাতীয় রাজনীতিতে। কারণ, ধরে নেওয়া হচ্ছে এখানে যারা জয়ী হবে তাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি হবে সারা বাংলাদেশে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাস এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা গেছে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্র আলাদা। সেখানে ভোটারদের মানসিকতা আলাদা। সেক্ষেত্রে যারা মনে করছে এই নির্বাচনের ফলাফলটা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে আগামী নির্বাচনে, সেই ক্যালকুলেশনটা সঠিক নয়।

এমইউএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।