ঢাকা: যাত্রাবাড়ী থানাপুলিশ কিশোর সাগরকে ‘কথিত ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল’ থেকে গ্রেপ্তার করেনি, দারোগা কামাল হোসেন তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনেছিলেন। টাকার দাবিতে সোর্স শাহীনের নেতৃত্বে কয়েকজন থানার হাজতখানায় সাগরের উপর নির্যাতন চালায়।
পুলিশ হেফাজতে ‘সাগরের মৃত্যু’ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তের শুরুতেই এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল জলিল এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু না বলেননি।
তবে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাগরের মৃত্যুর ঘটনাটি মোটেও স্বাভাবিক নয়, বিষয়টি স্পর্শকাতর হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি সোর্সদের সমন্বয়ে যেসব অন্যায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সেগুলোও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ আকারে পেশ করা হবে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান আব্দুল জলিল জানান, সাগরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মূল কারণ অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপি কমিশনারের কাছে দাখিল করবেন।
এদিকে, সাগরের মা লুৎফা বেগম মঙ্গলবার বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত কমিটি প্রধানের তৎপরতায় তিনি সন্তষ্ট।
তিনি বলেন, ‘এবার সাগর হত্যার মূল আসামি চিহ্নিত হবে। বিচারও পাবো আমি। ’
লুৎফা বেগম জানান, তদন্ত শুরুর পর আর কোনও পুলিশ কর্মকর্তা ও সোর্স তাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে না। এখন তিনি কিছুটা হলেও শান্তিতে আছেন।
তবে ছোট ছেলে জুয়েলকে বাসায় আনতে সাহস পাচ্ছেন না জানিয়ে লুৎফা বেগম বলেন, ‘পুলিশের মতিগতি কখন কী হয় বলা তো যায় না। ’
সোর্সদের গণধোলাই
এদিকে, যাত্রাবাড়ী থানায় পুলিশ সোর্সদের নানা অত্যাচার ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ জনতা এবার ‘চিহ্নিত সোর্সদের’ গণধোলাই দেওয়া শুরু করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে থানা প্রাঙ্গনে ঢুকে উত্তেজিত লোকজন শাহীন নামে এক সোর্সকে পেটায়। এ সময় জনতার ধাওয়া খেয়ে আরও ১০/১২ জন পুলিশ সোর্স থানায় ঢুকে গণপিটুনি থেকে রক্ষা পান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
থানার উপ-পরিদর্শক কামাল হোসেনের গাড়ি থেকে সোর্স রবি ও শহিদকে নামিয়েও গণপিটুনি দিয়েছে জনতা। গণধোলাইয়ের শিকার তিন পুলিশ সোর্সের বিরুদ্ধেই সাগর নামে নিরীহ কিশোরকে থানা হাজতে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলানিউজে সোমবার থেকে ‘পুলিশ সোর্সদের দাপটে অতিষ্ঠ যাত্রাবাড়ীর জনজীবন’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার নজর কাড়ে।
বাংলাদেশ সময় : ২০৫০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১০