ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

কুড়িগ্রামে গ্রামীণ পোশাক কারখানার নারীরা এখন বেকার

ইশতিয়াক হুসাইন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১০
কুড়িগ্রামে গ্রামীণ পোশাক কারখানার নারীরা এখন বেকার

চিলমারী থেকে: কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অনেক নারীকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ চেকের পোশাক তৈরির কার্যক্রম। পোশাক তৈরি কারখানার সাথে সাথে চিলমারীর উপজেলা সদরের গ্রামীণ চেকের শো-রুমটিও গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে।


 
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটি বন্ধ করা হয়নি। অচিরেই কারখানাটি চালু করা হবে। আর তাই ব্রক্ষ্মপুত্র পাড়ের কাজহীন এই নারীরা আশায় বুক বেঁধে আছেন।
 
উপজেলার ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর তীর ঘেষে অবস্থিত খড়খড়িয়া গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেকার এসব নারী কারখানায় প্রতিদিনই ভিড় করছে। কবে কারখানাটি চালু হবে আর তারা দুটি পয়সা উপার্জন করতে পারবেন এই আশায় দিন গুনছেন।
 
২০০৪ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের লোকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে বের করে আনেন কর্মহীন নারীদের। এসব নারীকে এক সপ্তাহের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে চালু করা হয় কারখানাটি। দুজন কাটিং মাস্টার ফতুয়া, ট্রাউজার ও শপিং ব্যাগ ডিজাইন করে কাটার পর নারীরা সেগুলো সেলাই করতেন।
 
কারখানার শ্রমিক লায়লা বেগম জানান, প্রত্যেক নারীকে ট্রাউজার প্রতি ১৩ টাকা, ফতুয়া ১১টাকা এবং শপিং ব্যাগ সেলাই বাবদ ২ টাকা করে দেওয়া হতো। টাকার পরিমান খুব সামান্য হলেও কোনো কোনোদিন ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্র্যন্ত আয় করতো অনেকে। কারখানাটি চালু হওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো আর হয়নি। ৬ মাসেও কারখানাটি চালু না হওয়ায় কিছুটা হতাশ শ্রমিকরা।
 
হতাশ হয়ে এরই মধ্যে রীনা বেগম ও রত্মা নামে দুই শ্রমিক ঢাকায় চলে গেছে। কারখানা শ্রমিক শেফালি জানান, যদি শিগগিরই চালু না হয় তাদেরও বিকল্প চিন্তা করতে হবে।  
 
খড়খড়িয়া গ্রামের নারীরা ছাড়াও আশপাশের মন্ডলপাড়া, ভট্টপাড়া ও বাজারপাড়া, রানীগঞ্জ ৪০ নারী গ্রামীণ চেকের সেলাই কাজে যুক্ত হওয়ার পর তাদের দৈন্যদশা থেকে মুক্তি মিলেছিল। কারখানা শ্রমিক মর্জিনা জানান, সকাল ৯টায় থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করতেন তারা। কাজে আসার আগেই স্বামী-সন্তানের জন্য সকাল ও দুপুরের খাবার একবারে রান্না করে আসতেন। এই কাজের ফলে সংসারে কোনো সমস্যাও হতো না। বরং আয় করতে পারার কারণে পরিবারের কাছে আলাদা মর্যাদাই পেতেন এসব নারী বলে জানান মর্জিনা।    
 
রানীগঞ্জের মিজানুর রহমান গ্রামের বাজারে দর্জির দোকান দিয়ে ভালোই সংসার চালাচ্ছিলেন। এসময় গ্রামীণ চেকের লোকেরা তাকে কাটিং মাস্টার পদে চাকরির প্রস্তাব দেয়। প্রথমে মাসে দেড় হাজার টাকা বেতন পেতেন। পরবর্তীতে তার বেতন বেড়ে হয় আড়াই হাজার টাকা।
 
কারখানা বন্ধ হওয়ায় মিজানুর রহমানের বেতনও এখন বন্ধ। ওদিকে চাকরি পাওয়ার পর বাজারের দোকানটি ছেড়ে দেওয়ার পর সেটি অন্য লোক ভাড়া নিয়ে নিয়েছে। বাজারের দর্জির দোকানটি হাত ছাড়া হওয়ায় একুল-অকুল সব হারিয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন হতদরিদ্র মিজানুর। তিনি বলেন, তিনি শুনেছেন পোশাক কারখানায় থেকে যে টাকা আয় হয় শ্রমিক ও কাটিং মাস্টারদের বেতন দিয়ে লাভ থাকে না বলেই তারা কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন।
                        
কারখানার শ্রমিক বেলী বেগম জানান, গ্রামীণ চেকের লোকেরা আসলে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, আবার কারখানা চালু হবে। বেলী জানান, স্যারেরা জানিয়েছিলেন মাঝখানে কাপড় ছিল না বলে বেশকিছুদিন কারখানা বন্ধ ছিল। আর এখন কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামীণ চেকের কাপড় ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে না। তাই কারখানা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
 
তবে এখানকার কারখানাটি বন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে এলাকাবাসীর কিছু ধারণা আছে। স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গ্রামীণ চেকের একটি ট্রাউজারের দাম ২৫০ টাকা। অথচ বাইরের একটি ট্রাউজার ১২০ টাকায় পাওয়া যায়। এতদাম দিয়ে কে এই পোশাক কিনবে। তাছাড়া এদের ফতুয়ার কাপড়ের মান এতই খারাপ যে এক ধোয়ার পর রং নষ্ট হয়ে যায়। এলাকারবাসীর এই অভিযোগের সাথে একমত খোদ কারখানার শ্রমিক নাজমা।
   
এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চিলমারী শাখার ব্যবস্থাপক ফারুক-ই আজমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শো-রুমটি বন্ধের কথা স্বীকার করেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ চেকের বিষয়টি সরাসরি আমার তত্ত্বাবধানে না। তবে আমি যেটুকু জানি, কারখানাটি আপাতত বন্ধ থাকলেও বেতনভাতা দেওয়া হচ্ছে। ’  
 
চিলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ঘুরে অধিকাংশ মানুষের থেকে একটাই অভিযোগ এসেছে তাহলো গ্রামীণ ব্যাংক তাদের ক্ষুদ্র ঋণ বা পল্লীফোনের কার্যক্রম সম্প্রসারণে যতটা সক্রিয় ছিল গ্রামীণ চেকের কার্যক্রম নিয়ে সেই তুলনায় কোনো তৎপরতা দেখায়নি। তাদের অভিযোগ পোশাক কারখানা থেকে ক্ষুদ্র ঋণের মতো লাভ না হওয়াতেই কর্মকর্তাদের গ্রামীণ চেকের কার্যক্রমে এই নিষ্ক্রিয়তা।
   
স্থানীয় সময়: ২২৫০ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।