চট্টগ্রাম : ‘এভরিবডি উইল কাম ব্যাক (সবাই ফিরে আসবে)। যত দ্রুত টাকা দেওয়া হবে, এমভি জাহানমণিতে জিম্মি নাবিকরা তত দ্রুত মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরবেন।
সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে আট মাস পর মুক্তি পাওয়া জার্মানির একটি জাহাজের নাবিক গিয়াসউদ্দিন আজম খান দেশে ফিরে এ কথা জানিয়েছেন। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামে ফিরে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।
এ সময় তিনি জানান, সোমালি জলদস্যুদের মুক্তাঞ্চল গারাকাদে তাদের জাহাজ এবং এমভি জাহান মণি একই অ্যাংকারেজে ছিল। কয়েকবার মোবাইল ফোনে এমভি জাহান মণির কয়েকজন নাবিকের সঙ্গে তার কথাও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাহান মণির নাবিকরাও দ্রুত দেশে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী। তারা বলেছেন, দেশে এ ঘটনা নিয়ে যেভাবে শোরগোল উঠেছে, আশা করছি দ্রুত টাকা দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। ’
এমভি জাহান মণির নাবিক এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী সুস্থ আছেন জনিয়ে তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুরা কোনো নাবিকের তি করবে না। কারণ তাদের কাছে অর্থই বড়। আমরা যেটাকে ছিনতাই বলি জলদস্যুরা সেটাকে তাদের ‘বিজনেস’ বলে। ’
এমভি জাহান মণিতে খাবার ও পানীয় সংকটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জলদস্যুরাই খাবার সরবরাহ করছে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। নাবিকরা সবাই যার যার কেবিনে আছে। ’
তবে জলদস্যুদের সরবরাহ করা খাবার সাধারণত সোমালীয় খাবার হয় বলে তিনি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আট মাসে একবারও মনে হয়নি যে দেশে ফিরে আসতে পারব না। ’
গিয়াসউদ্দিন আজম খান জানান, সোমালি জলদস্যুরা বিভিন্ন গ্র“পে ভাগ হয়ে জাহাজ ছিনতাই করে। একটি গ্রুপের অধীনে সর্বোচ্চ ৫টি জাহাজ থাকে। সেগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর আবার নতুন করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। এছাড়া তাদের হাতে আছে একে ৪৭, মেশিনগানের মতো অস্ত্র।
তিনি জানান, তাদের জাহাজে ৫০ জনের মতো জলদস্যু ছিল। এছাড়া সর্বশেষ তিনি এমভি জাহান মণিসহ ৭-৮টি ছিনতাই করা জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কাছে জিম্মি অবস্থায় দেখেছেন।
তবে তিনি তাদের জাহাজ কীভাবে ছিনতাই করা হয়েছে বা এর সঙ্গে আরও কারা জড়িত এ সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সোমালিয়ায় কোনো সরকার নেই, তাই তাদের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। আর সরকার নেই বলেই জলদস্যুরা এতটা বেপরোয়া। ’
এর আগে শনিবার বিকেল তিনটা ১৬ মিনিটে ওমান এয়ারলাইন্সের একটি ফাইটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ছিনতাই হওয়া জার্মান জাহাজ এমভি মারিদা মার্গারেট এর সেকেন্ড অফিসার গিয়াসউদ্দিন আজম খান। এ সময় বিমাবন্দরে তার বাবা, মা, স্ত্রীসহ প্রায় ৩০ জন নিকটাত্মীয় ছিলেন।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বের হয়ে বাসার পর তাকে জড়িয়ে ধরে তার বাবা, মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গত ৮মে আরব সাগরে কেমিকেল ট্যাংকার ধরনের এ জাহাজটি ছিনতাই হয়। সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দেওয়ার পর গত ২৮ ডিসেম্বর জাহাজটি ছেড়ে দেয় সোমালি জলদস্যুরা। মুক্তির পর জাহাজটি ওমান যায়। সেখান থেকে সরাসরি ফেরেন গিয়াসউদ্দিন।
জাহাজটিতে দু’জন বাংলাদেশিসহ মোট ২২ জন নাবিক ছিলেন। এদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন আজম খান দেশে ফিরলেও অপর নাবিক জাফর ইকবাল এখনো ওমানেই আছেন।
গিয়াস জানান, ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় একসঙ্গে ফিরতে না পারলেও সোমবার তার ফেরার কথা রয়েছে।
গিয়াসউদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। তার বাবা আবুল বাশার রাজউকের সহকারী পরিচালক।
বাংলাদেশ সময় : ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১১