ঢাকা: সংস্কৃতি আর নাটকপাড়া খ্যাত রাজধানীর বেইলী রোডের ইফতারিতে রুচি আর আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে।
অভিজাত এ এলাকায় শিল্প-সাহিত্যের পাশাপাশি শাড়ি, পোশাক ও ফাস্টফুডের দোকানসহ রয়েছে রেস্তোরাঁও।
এর ছাড়াও রয়েছে খ্যাতনামা স্থায়ী ও অস্থায়ী ইফতারির দোকান। ঐতিহ্যের ধরে রাখতে এবারও রমজানের শুরুতে জমে উঠেছে বেইলী রোডের ইফতারি বাজার।
ইফতারির মূল্য সাধ্যের মধ্যে থাকায় দুপুরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এ সব দোকানে।
বেইলী রোডে বিভিন্ন দোকানে প্রায় শতাধিক রকমের ইফতারির আয়োজন রয়েছে। শান্তিনগর মোড় থেকে ইফতারির বাজার শুরু। ছোট বড় প্রায় অর্ধশতাধিক বাহারি ইফতারির দোকান রয়েছে এ এলাকায়।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বেইলী রোডের এ সব দোকানে মানুষের ভিড়ে জমে উঠেছে ইফতারির কেনাকাটা। সব মিলিয়ে সাবেক নাটক পাড়ার এ ইফতারিতেও যেন রয়েছে নাটকীয়তার ছোঁয়া।
বেইলী রোডের ইফতারি আইটেম:
বেইলী রোডের ইফতারির বাজারে বিক্রি হচ্ছে- মগজ ভুনা, খাসির হালিম, খাসির গ্রিল চাপ, গরুর চাপ, লুচি, কাচ্চি বিরিয়ানি (খাসি), ফিরনি, খাসির লেগ রোস্ট, বোরহানি, চিকেন রোস্ট (আস্ত), চিকেন ফ্রাই, চিকেন সমুচা, চিকেন ললি, জালি কাবাব, শিক কাবাব, ভেজিটেবল রোল, স্প্রিং রোল, কিমার চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, বেসন চপ, ছোলা, বাসমতির জর্দ্দা, চাটনি, পনির সমুচা, নিমক পোড়া, বুন্দিয়া, হালিম, দইবড়া, সুতি কাবাব, রেশমি কাবাব, কিমা পরোটা ইত্যাদি।
ফাস্টফুড আইটেমের মধ্যে বার্গার, হটডগ, স্যান্ডউইচ, সমুচা, চিজ বল, চিকেন সাসলিক, পেস্ট্রি ও আইসক্রিমও পাওয়া যাচ্ছে।
এ রোডের ইফতারির আরেক আকর্ষণ ‘পিঠা ঘর’-এর পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, চিতই পিঠা, পান পিঠা, পাক্কান পিঠা, ভেজানো পিঠাসহ ৩৯ আইটেমের পিঠা। পিঠা ছাড়াও রয়েছে হরেক রকমের ইফতারি।
বেইলী রোডে ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁ, সুইস, স্কাইলার্ক, বারবিকিউ, নবাবী ভোজ, জলি-বি, হ্যালভেশিয়া, হক হালিম ইফতারির জন্য বিখ্যাত। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্পেশাল অফারও দেওয়া হচ্ছে এ সব দোকানের ইফতারির আইটেমে।
এদিকে, ২৯ আইটেমের ইফতারি নিয়ে এসেছে ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে খাসির হালিম মাঝারি ৩শ, বড় ৫শ টাকা, গরুর চাপ কেজি ৫শ, খাসির চাপ কেজি ৬শ, লুচি পিস ১০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি ১৪০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চিকেন বিরিয়ানি ১৪০ থেকে ২৪০, তেহারি (গরু) ১০০ থেকে ১৮০, ফিরনি ২০০ থেকে ৪০০, জিলাপি ২০০ থেকে ৪০০, দইবড়া ৫ পিস ২শ, চিকেন রোস্ট পিস ১১০, চিকেন রোস্ট (আস্ত) ৪৪০, চিকেন ললি পিস ৬০, খাসির লেগ রোস্ট পিস ৭শ, বোরহানি পিস ৬০, জালি কাবাব পিস ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
![](files/June_2014/June_27/QUIZ_27_399796724.jpg)
শিক কাবাব কেজি ১ হাজার, ভেজিটেবল রোল পিস ২০, স্প্রিং রোল পিস ২০, গরুর সাসলিক পিস ৮০ থেকে ১০০, কিমার চপ পিস ২০, সমুচা (পনির) পিস ২০, পেঁয়াজু পিস ৬, বেসন চপ পিস ৬, ছোলা কেজি ২শ, বাসমতির জর্দ্দা বক্স ২শ, চাটনি ১৫০ থেকে ২৫০, চিকেন গ্রিল পিস ১১০, ডালপুড়ি পিস ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রমজান উপলক্ষে ১০০ ও ১৫০ টাকার বিশেষ প্যাকেজ নিয়ে এসেছে ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁ।
ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁর ম্যানেজার হোসাইন মো. শাকিন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহরে ফখরুদ্দিন রেস্তোরাঁর ১০টি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে বেইলী রোড শাখা ইফতারির জন্য বিখ্যাত।
তিনি বলেন, সাধ্যের মধ্যে ও উন্নত মান হওয়ায় সব শ্রেণীর মানুষের কাছে এ রেস্তোরাঁর সুনাম রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়লেও এখানে কোনো খাদ্যপণ্যের দাম বাড়েনি।
ইফতার কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রেবেকা শবনম বাংলানিউজকে বলেন, খাবারের মান ভালো বলে প্রতিবছর এখান থেকেই ইফতারি কিনি।
তবে দাম বাড়েনি বলে জানান তিনি।
বেইলী রোডেরই আরেক ইফতারির দোকান ‘নবাবী ভোজ’ নিয়ে এসেছে ৩০ আইটেমের ইফতারি।
ইফতারির দাম ও মান অন্যান্য দোকানের চেয়ে একটু আলাদা বলে জানালেন ‘নবাবী ভোজ’-এর ম্যানেজার কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সেলেব্রেটিরা নতুত্বকে প্রাধান্য দেয় বলে ‘নবাবী ভোজ’ অল্প দিনেই বেশ পরিচিতি পেয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবী নুরুল ইসলাম ‘নবাবী ভোজ’ থেকে শাহী হালিম (বড় পাতিল) কিনেছেন।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, ইফতারি পণ্যের বেশির ভাগ দোকানেই পরিস্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রান্না হয় না। ‘নবাবী ভোজ’-এ পরিবেশের দিকটা ভালো করে দেখা হয় বলে কিনছি।
‘নবাবী ভোজ’-এর পাশেই ইফতারি ক্রেতাদের অনেক ভিড় দেখা গেল।
এদিকে, বেইলী রোডের একমাত্র পিঠা তৈরির দোকান ‘পিঠা ঘর’। এখানে ৩৯ আইটেমের পিঠার পাশপাশি রয়েছে উন্নত মানের সব ইফতারি সামগ্রীও।
‘পিঠা ঘর’-এর সত্ত্বাধিকারী কাজী গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, রসনা বিলাসীদের কাছে ‘পিঠা ঘর’-এর চাহিদা অনেক বেশি। ইফতারিতে পিঠা না হলেই যেন নয়! সেজন্য ক্রেতাদের কাছে পিঠা জনপ্রিয়। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আইটেম বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।
অপরদিকে, বড়, মাঝারি, ছোট শাহী হালিম, তিন ধরনের শাহী জিলাপি, চানা বাটুরা, চিকেন সাসলিক ফ্রাই, গ্রিল চিকেন, জালি, মুঠি কাবাবসহ ৩৪ আইটেমের ইফতারির আয়োজন নিয়ে এসেছে বার-বি-কিউ ও স্কাইলার্ক রেস্তোরাঁ। অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল, তারা বেইলী রোডের ইফতারি তাদের বেশি পছন্দ। অন্যদিকে, ইফতারি বিক্রেতারা জানান, বেইলী রোডের ইফতারির চাহিদা রুচিশীল ক্রেতাদের কাছে দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৪