ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

‘এখন থেকে তারা ব্যাগেজ তল্লাশি করবে না’

বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার

জামাল হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১১
বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার

বেনাপোল: অবশেষে দীর্ঘদিন পর মঙ্গলবার সকালে বেনাপোল চেকপোস্ট ও আন্তর্জার্তিক কাস্টমস ও পুলিশ ইমিগ্রেশন থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিজিবি কর্তৃপক্ষ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের প্রত্যাহার করা হয় বলে জানা গেছে।



বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস রাজস্ব কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন জানান, প্রতিদিনের ন্যায় বিজিবি সদস্যরা সকাল থেকে এখানে তল্লাশি চালাচ্ছিল। হঠাৎ করে বেলা ১০ টার দিকে তারা এখান থেকে চলে যায়। এখন কেবল কাস্টমস কর্তৃপক্ষই তল্লাশি চালাচ্ছে।
 
চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান জানান, হঠাৎ করে সকাল ১০টার পর থেকে বিজিবি সদস্যরা কাস্টমস কম্পাউন্ড ও নো-ম্যান্সল্যান্ড থেকে তল্ল¬াশির দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়।

সংশিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল চেকপোস্টে পাসপোর্টযাত্রীদের পাসপোর্ট ও ব্যাগেজ তল্লাশি করা নিয়ে বিজিবি ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। জাতীয় টাস্কফোর্সের নির্দেশে চেকপোস্টের নো-ম্যান্সল্যান্ডে পাসপোর্টযাত্রীদের ব্যাগেজ ও পাসপোর্ট তল্লাশি করতো বিজিবি সদস্যরা। কিন্তু বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে বিজিবি সদস্যরা কাস্টমসের তল্লাশি কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যাগেজ তল্লাশি শুরু করে।

এ নিয়ে কাস্টমসকর্মীদের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের প্রায়ই টানাপোড়েন চলে।

এরই সূত্র ধরে কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্রে বিজিবি সদস্যদের তল্লাশি বন্ধে ২০০৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বেনাপোল কাস্টমস হাউজে পরামর্শক কমিটির সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া বিভিন্ন সভায়ও উপস্থাপন করা হয় এ বিষয়টি।

এরপর একই সালের ১৮ ডিসেম্বর বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার যশোর ২২ বিজিবি (বিডিআর) ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক বরাবর এক পত্রে জানানো হয়, কাস্টমস চেকপোস্টের মধ্য থেকে বিডিআর কর্তৃক যাত্রীদের ব্যাগপত্র ফাঁড়িতে নিয়ে তল্লাশির কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ এবং দূতাবাস থেকেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কাস্টমসের ওই পত্রে আরও বলা হয়, প্রচলিত ব্যাগেজ রুল অনুসারে একজন যাত্রী দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিকট ঘোষণা দেওয়ার বিধান বলবৎ থাকা সত্ত্বেও শুল্ক বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের আগেই বিডিআর কর্তৃপক্ষ যাত্রীর  ব্যাগ তল্লাশি বা মালামাল আটক করছে। এটা সংশ্লিষ্ট আইন এবং ব্যাগেজ রুলের পরিপন্থি।

বিজিবিকে দেওয়া ওই পত্রে শুল্ক কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার আগে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়।

উল্লেখ্য, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দৈনিক গড়ে দুই হাজার যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাতায়াত করে থাকেন। ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী স্থল ও আকাশপথে পাসপোর্টে বিদেশে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশির একমাত্র আইনগত ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থা হচ্ছে কাস্টমস।

বেনাপোল কাস্টম্স সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, স্থলপথে বিদেশ থেকে আগত একজন যাত্রী সর্বোচ্চ দুইশ’ মার্কিন ডলার মূল্যের মালামাল কোনও শুল্ক-কর পরিশোধ ব্যতিরেকেই সঙ্গে আনতে পারবেন বলে কাস্টমসের ব্যাগেজ রুলে উল্লে¬খ আছে। কিন্তু বিডিআর এ বিধানকেও তোয়াক্কা করছে না। এদিকে বেনাপোল সীমান্তে নোম্যান্সল্যান্ডের এপারেও বিজিবি সদস্যরা বহির্গামী ও অন্তর্মুখী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকে। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়। শুধু কাস্টমস চেকপোস্ট নয়, এরপর একই যাত্রীকে বেনাপোল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আমড়াখালি এলাকার  বিডিআর চেকপোস্টে আবারো তল্লাশি করা হয়।
 
এসব বিষয়ে জানতে যশোর ২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল হাসিবুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তারা পাসপোর্টযাত্রীদের ব্যাগেজ ও পাসপোর্ট তল্ল¬াশি করবে না। ’  

লে.কর্নেল হাসিবুল এ সংক্রান্ত আর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা জানান।  

একই বিষয়ে বিজিবি বেনাপোল চেকপোস্ট ক্যাম্প ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এতদিন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা তল্লাশির কাজ করছিলেন।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সময়ে পাসপোর্টযাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে লাখ লাখ টাকার অবৈধ মালামাল উদ্ধার করেছে বিজিবি। অনেক ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিককে জাল ভ্রমণকরের মাধ্যমে ভারতে যাতায়াতের সময় আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যা করা হচ্ছিল তা সম্পূর্ণ আইনসম্মত। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।