ঢাকা: রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে এ রোগির সংখ্যাও বাড়ছে।
প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থাকে। তবে যথাযথ সরকারি উদ্যোগের অভাবে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাজধানীতে ৪০৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেলেও প্রকৃত সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হাসপাতাল-ক্লিনিক ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিজের ৯ বছরের সন্তান রাতুলের অসুস্থতা পরীক্ষা করাতে এসেছেন খিলগাওয়ের বাসিন্দা আক্তার হোসেন। পরীক্ষায় রাতুলের ডেঙ্গু জীবাণু ধরা পড়ে।
রাতুলের বাবা জানান, ‘প্রথম দিকে সোহাগ মাথায় ব্যথা অনুভব করতো। স্বাভাবিক জ্বর মনে করে প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয়। কিন্তু ২ দিন পার হলেও রাতুলের ব্যথার কোন উন্নতি হয়নি। বরং শরীরের অন্যান্য স্থানে ব্যথা অনুভব করে সে। পরে হাসপাতালে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু জীবাণু ধরা পড়ে।
এ রকম প্রতিদিন সব বয়সের লোক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিএসএমএমইউ এর মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, ‘রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা বেড়েছে। আমার চেম্বারে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন ডেঙ্গু রোগী আসছে। এরা নগরীর ধানমন্ডি, গ্রীন রোড, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর, মালিবাগ ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর হিমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের আক্রান্তদের নাক ও দাত দিয়ে এবং কাশির সঙ্গে রক্ত ক্ষরণ হয় এবং পিঠ, ঘাড়, মাথা ও চোখের পেছনে ব্যথা অনুভুত হয়। ’
৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে এবং চিকিৎকের নির্দেশ ছাড়া জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বাদে কোন ওষুধ না খেতে পরামর্শ দেন তিনি।
রোগিকে বেশি মাত্রায় পানি, বিশেষ করে শরবত খাওয়ানো যেতে পারে। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় খোলা পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। এতে এ্যাডিস মশা ডিম পাড়ে। বাসায় সর্বত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ গাইড লাইনের অন্যতম প্রণেতা অধ্যাপক কাজী তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ‘গতবারের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রাগির সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। ’
তিনি আরও বলেন, এ বছর প্রাথমিক সংক্রমণের শিকার হওয়া রোগির সংখ্যা বেশি। আক্রান্তরা সাধারণত শরীর, পিঠ, চোখ ও মাথা ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শরীরের চামড়ায় ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি (রক্তস্ফোত) দেখা যাচ্ছে। ৩ দিনের জ্বরেই রোগি অধিক মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর রক্তস্ফোতে চুলকানি অনুভূত হওয়ার কথা বলছে, যা আগে ঘটেনি।
তবে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই রোগিরা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। ২০০৯ সালে সরকারিভাবে তৈরি ডেঙ্গু প্রতিরোধ গাইডলাইন অনুসরণ করার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্ততর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাতীয় গাইডলাইনের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। গাইডলাইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব তীব্র আকার ধারণ করে। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের ২৩ হাজার ৪২৬ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ২৩৩ জনের। ২০০৯ সালে সারাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭শ’ ছাড়িয়ে যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (এম এ্যান্ড পিডিসি) এবং প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ডেঙ্গু) ডা. মো. আবদুর রশিদ মৃধা জানান, ‘প্রতিবছর এ সময় ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা বেশি থাকে। তবে দেশে ডেঙ্গু রোগির মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। ’
বর্তমানে ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা দিতে পারলে ডেঙ্গু রোগির মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময়:২২১৪, ১৯ জুলাই ২০১১