ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ঢাকার না নেই.. দিল্লির গা নেই

মাহমুদ মেনন, আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১১
ঢাকার না নেই.. দিল্লির গা নেই

ঢাকা: ভারতকে ট্রানজিট দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত, এছাড়াও অন্য বিষয়গুলোতেও বাংলাদেশের না নেই।   তবে এ নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে নেই কোনো তোড়জোর।

ভারত সরকার বিশেষত দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এখন প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নয় পাকিস্তানকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আর সে পালে হাওয়া দিচ্ছে দেশটির পাকিস্তান-ঘেঁষা সংবাদমাধ্যমগুলো।

বুধবার পাকিস্তানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার দিল্লি সফর করছেন। আর সে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত পররাষ্ট্র দপ্তর ও মিডিয়া। এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ার বিষয়ে সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেওয়ায় সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তবে এসব কোনো কিছুরই প্রতিক্রিয়া দিল্লিতে দেখা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমগুলোতেও দেখা যাচ্ছে বিষয়টিকে গা না করার ভাব।

বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান ২৩ জুলাই কুড়িগ্রামে সীমান্ত হাট উদ্বোধনের দিন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে সরাসরি জানিয়ে দেন ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দিতে বাংলাদেশ রাজি। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য-সামগ্রী পাঠানো সহজতর হবে, কমবে বিশাল অংকের খরচ।

বাণিজ্যমন্ত্রী সেদিন আরও বলেন, ভারত কেবল চট্টগ্রাম বন্দরই নয় বাংলাদেশের অন্য বন্দরগুলোও চাইলে ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারের জন্যও বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারে বাধা নেই। বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান আনন্দ শর্মা।

ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। খারের এ সফরের মধ্য দিয়ে ভারত সরকার দুই দেশের মানুষের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন ও সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে আস্থাশীলতার একটি জায়গায় পৌঁছাতে চায়।
তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গ। খারের সঙ্গে আলোচনায় ভারত পাকিস্তানকে ২০০৮ এর নভেম্বরে মুম্বাই হামলার জন্য অভিযুক্ত ৭ পাকিস্তানির কণ্ঠস্বরের নমুনা পেতে চাপ দেবে। দুই দেশের সাধারণ মানুষের সফরের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা শিথিল করাও হবে এই সফরের অন্যতম এজেন্ডা।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দুই আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাঞ্জাবের ওয়াগা-আত্রাই ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখা ইস্যুতেও বিরাজমান সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলবে। আর ভারতের কারগারে বন্দি ৯০ জেলের একতরফা মুক্তির বিষটিও গুরুত্ব পাবে।

উপসাগরের কচ্ছ ও স্যর গ্রিক এলাকা থেকে দুই দেশেরই জেলেরা প্রায়শই সমুদ্রসীমা পেরিয়ে একে অপরের দেশে ঢুকে পড়ে।   আর তাদের ধরে এনে জেলে পুরে দেয় কোস্ট গার্ড এর সদস্যরা।

ওয়াগা-আত্রাইয়ে সীমান্ত বাণিজ্য বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন চালু রয়েছে। এটি চার দিন করার বিষয়ে আলোচনা হবে। আর কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখার ক্ষেত্রে শ্রীনগর ও মোজাফফরাবাদের মধ্যে বাস সার্ভিসের সংখ্যা বাড়ানো, ব্যবসায়ীদের জন্য পারমিটের বিষয়টি সুরাহা করা, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য পণ্যের সংখ্যা বাড়ানো এবং টেলিফোন সুবিধা উন্নত করার বিষয়ও থাকবে।

পাকিস্তানের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার বিষয়টি তালিকায় থাকলেও হিনা রাব্বানি খারের সফরে সে নিয়ে কথা হচ্ছে না। কারণ এ বিষয়টি পুরোটাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের হাতে। মুম্বাই হামলার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং ভিসার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের পর্যন্ত কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কিছুটা উদ্যোগী হলেও পরে মুম্বাই হামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার অবস্থান আরও কঠোর করেছে।

তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারেই আগ্রহী। তার মতে অর্থনৈতিক লেনদেনের মধ্য দিয়েই পারস্পরিক সমঝোতা ও রাজনৈতিক সংলাপের পথ ত্বরান্বিত করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর এই চাওয়া ও বাংলাদেশের জন্য কেন্দ্রের উদ্যোগের মিল স্বল্প।
 
সম্প্রতি অবশ্য ভারত বাংলাদেশ থেকে বছরে ১ কোটি পিস তৈরি পোশাক আমদানিতে সম্মত হয়েছে। যা আগের চেয়ে বছরে ২০ লাখ পিস বেশি। কিন্তু ঢাকার অসন্তুষ্টি থেকেই যাচ্ছে কারণ, একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে দিল্লি এখনো রাজি নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দিতে রাজি রয়েছেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কোনো সরকারই এ বিষয়টিতে রাজি ছিলো না। তবে এ নিয়ে ভারত থেকে দ্রুত কোনো সাড়া বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ থেকে দিল্লিকে এরই মধ্যে আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আখাউড়া পথ ব্যবহার করে ভারত এরই মধ্যে ত্রিপুরার রাজধানী আগড়তলায় ভারি যন্ত্রপাতি পরিবহন করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এমন একটি ঘটনাও এই প্রথম ঘটলো।

সে অর্থে ভারতের ট্রানজিট হিসেবে বাংলাদেশের ভ’মি ব্যবহারের আর কিছু বাকি থাকলো না। এখন প্রয়োজন দিল্লির পক্ষ থেকে কার্যকর কিছু উদ্যোগ। কারণ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশাও হচ্ছে- দ্বি-পাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা।

বাংলাদেশ সময় ১৪২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।