ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

প্রেষণ নির্ভর হয়ে পড়েছে সংসদ সচিবালয়

সাজিদুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১১
প্রেষণ নির্ভর হয়ে পড়েছে সংসদ সচিবালয়

ঢাকা: স্থায়ী কর্মকর্তার অভাবে প্রেষণে আনা জনবল দিয়ে চলছে সংসদ সচিবালয়। বর্তমানে এ সচিবালয়ে ১১৭টি প্রথম শ্রেণীর পদের মধ্যে স্থায়ী কর্মকর্তা আছেন মাত্র ৫২ জন।

তাই  প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্যাডার থেকে প্রেষণে লোক এনে বাকি পদগুলোতে কাজ চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায়  সার্বভৌম এই প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়েছে নির্বাহী বিভাগের উপর চরমভাবে নির্ভরশীল।
 
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ বছরে সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব প্রায় ৩০ জন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। কিন্তু সে অনুযায়ী নিয়োগ হয়নি। সংসদ সচিবালয়ে প্রথম শ্রেনীর মঞ্জুরীকৃত ২০৮ পদের মধ্যে ১শ’ টিই এখন শূন্য রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, সংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন শাখা-অধিশাখায় ১৪৭টি, ভিআইপিদের একান্ত সচিব ও সহকারী একান্ত সচিবের ২৪টি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিদের ৩৭টি একান্ত সচিবের পদ রয়েছে। তবে সচিবালয়ের বিভিন্ন শাখা ও অধিশাখার এবং সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের একান্ত সচিবসহ ১৪৭টি পদের  মধ্যে মাত্র ৯৪ পদে লোকবল আছে। এর মধ্যে প্রেষণে ৪৫ জন এবং আত্মীকৃত ১১ জন আর স্থায়ী পদে ৩৮ জন কর্মরত রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিএসসির মাধ্যমে সংসদ সচিবালয়ে নিয়োগ বন্ধ আছে  ১১ বছর। অধিকাংশ শাখা ও অধিশাখায় কোনো স্থায়ী লোক না থাকায় সংসদীয় কাজে অভিজ্ঞ লোকের অভাব দেখা দিচ্ছে।

সংসদে একটি বিশাল পাঠাগার থাকলেও সেখানে পরিচালক পদে একজন উপসচিব প্রেষণে নিযুক্ত ছিলেন। ক’মাস আগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে গেলে আরেকজন প্রেষণের কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে এটি চালানো হচ্ছে। গ্রন্থাগারিকের বেশ কয়েকটি পদও খালি রয়েছে। গবেষণা শাখায় কর্মকর্তা-সহকারী গবেষণা কর্মকর্তার পদোন্নতি হচ্ছে না দীর্ঘ দিন।

এই বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের মানব সম্পদ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মুনিম হাসানের সাথে যোগযোগের চেষ্টা করা হলে ওই শাখা থেকে বলা হয়, তিনি এখন অফিসে নেই। অফিস সহকারীরা তার মোবাইল ফোনের নাম্বারও দিতে চাননি।

সূত্রমতে, ১৯৯৪ সালের আইনে সংসদ সচিবালয়ে সরকারি কর্মকমিশন বা পিএসসির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের নিয়োগ দানের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পিএসপির মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ বন্ধ করে দেন। পরে রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিআইপিদের ২২ জন প্রিভিলেইজড কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আত্মীকরণের মাধ্যমে নিয়োগ দেন তিনি।
 
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারও প্রেষণে নিয়োগ অব্যাহত রাখেন। বর্তমান স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটও এ ধারা বজায় রেখেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থায়ী পদে নিয়োগ না হওয়ায় কাজ চালাতেই প্রেষণের কর্মকর্তাদের আনা হচ্ছে। নিয়োগ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। ’

তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন কাজ করার পরও স্থায়ী কর্মকর্তারা পদোন্নতি পান না। কারণ, প্রেষণে আসা কর্মকর্তরা থাকায় পদগুলো শূন্য হয় না। আবার কখনও কখনও ই”চ্ছকৃতভাবে বছরের পর বছর প্রথম শ্রেণীর পদগুলো শূন্য রাখা হয়। ’

সূত্র জানায়, পিএসসি চার মাস আগে সংসদের দ্বিতীয় শ্রেণীর ৯ কর্মকর্তাকে প্রথম শ্রেণীতে পদোন্নতির সুপারিশ করে। তবে সংসদ কর্তৃপক্ষ তাদের মধ্যে মাত্র ৪ জনের পদোন্নতি কার্যকর করে।

নির্ভরযোগ্য আরেকটি সূত্র জানায়, নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে স্পিকার সংসদ সচিবালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কয়েকবার বৈঠক করলেও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। একই সঙ্গে নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করতে কয়েক দফা বৈঠক করা হলেও এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সংসদ কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।