অনলাইন জুড়ে এখন খালি আবুল সাহিত্য! আবুলকে নিয়ে লেখা হচ্ছে ব্যঙ্গ কবিতা, ছড়া, ব্লগ সহ আরও কত কি! এসব কিন্তু সখেদে না। রাগে-দুখে।
`আমার আবুল হাসে` শিরোনামে বিশিষ্ট ছড়াকার, লেখক লুৎফর রহমান রিটন লিখেছেন:
দেশের মানুষ কাঁদছে যখন আবুল তখন হাসে
মযার্দাহীন লো...কটা শুধু টাকাই ভালোবাসে!
.... সড়কজুড়ে মড়ক তবু আবুল কি তা মানে?
মন্ত্রীত্ব টিকিয়ে রাখার মন্ত্র সে ঠিক জানে!
হাসিনাকে ডুবিয়ে দিতে আবুল একাই একশ
হাপিস করতে পটু আবুল জনগণের ট্যাকশ...
দেশের মানুষ ভোগান্তিতে ফুঁসছে মানুষ রাত দিন
দোহাই লাগে শেখ হাসিনা আবুলটাকে বাদ দিন!
শেখ হাসিনার পাশে...
ফাইল বগলে স্যুটেড-বুটেড ব্যর্থ আবুল হাসে!
আবুল মানে যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তার হাজার রকমের ব্যর্থতা এখন জনগণের চোখের সামনে। বিশেষ করে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়াতে ঢাকা-ময়মনসিংহসহ দেশের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের কৃতী চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনিরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর পর জনমত বিস্ফোরিত। পাবলিক পারলে খাবলে খায় মন্ত্রীকে।
দেশের কোথাও চলাচলের উপযোগী একটা ভালো রাস্তা নেই। অনেকদিন ধরেই এ অবস্থা। এ নিয়ে পাবলিক ক্ষিপ্ত। পার্লামেন্টে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝেড়েছেন সরকারিদলের মন্ত্রী-এমপিরা। কিন্তু এসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই আবুল মন্ত্রীর! লোকজন যা যেখানে বলুক, তিনি খালি হাসেন! এটি বেহায়া না বেকুবের হাসি, তা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক-মিশুকদের সঙ্গে গুরুতর আহত হয়েছেন নিহত তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ, শিল্পী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ঢালী আল মামুন, তার শিল্পী-স্ত্রী দিলারা বেগম জলি।
স্কয়ার হাসপাতালে আহতদের দেখতে গেছেন যোগাযোগ মন্ত্রী। কান্ডজ্ঞানহীন মন্ত্রী সেখানে আহতদের সান্ত্বনা জানাবেন না কি। সেখানেই, মিসেস ঢালীকে বলা শুরু করেন, দুর্ঘটনা ঘটেছে আপনাদের মাইক্রো চালকদের দোষে। হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স সবাই অবাক! এই লোকটা মানুষ না কি!
মিশুক মুনীরের দাফন শেষে সুপ্রীতি ধর ফেইসবুকের স্টেটাসে লিখেছেন, ..অন্তিম শয়ানে মিশুক ভাই...আমার অফিসের ঠিক পাশেই। কিছুক্ষণ আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এক মানববন্ধনে এসেছিলেন এক বাবা তার দুই ছেলেকে নিয়ে, ছেলেদের হাতে প্ল্যাকার্ড..`সড়ক দুর্ঘটনা না হলে আজ আমাদের মা বেঁচে থাকতো`। মনটা চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেল আমার...
দেশের এমন একটা অবস্থায় এই আবুল হোসেনকে নিয়ে আরও একশ এক কারণে পাবলিক ক্ষ্যাপা। গত আড়াই বছর ধরে এই লোকটা শুধু কয়েকদিন পরপর উড়াল রেল, পাতাল রেল এসবের স্বপ্ন দেখিয়ে আসছে। আসল কাজের কোনও খবর নেই! লোকজন ঘর থেকে বেরুতে পারে না। একটু বৃষ্টি দিলেই নৌকা চলে ঢাকার রাস্তায়। খানাখন্দে পড়ে মানুষ আহত হয়।
এমন অবস্থা সারাদেশের। কোথাও একটা রাস্তার রুটিন মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণ নেই। আর মন্ত্রী খালি বলে কিনা উড়াল-পাতাল রেলের খোয়াবনামা। এই কারণে বুঝি সবশেষ কথা তুলেছেন বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাবু প্রশ্ন তুলে বলেছেন, `মন্ত্রীর চেহারা এত উজ্জ্বল, রাস্তার অবস্থা বেহাল কেন। ` তারেক মাসুদ, মিশুক মুনিরের কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে মহাজোটের শোকার্ত বিক্ষুব্ধ নেতা হাসানুল হক ইনুকে বলতে হয়েছে, `অযোগ্য লোককে মন্ত্রী করলে যা হয়। `
সিটিজেন রাইটস মুভমেন্ট নামের একটি সংগঠন সভা করে নানা তথ্য উপাত্ত দেখিয়ে বলেছে, সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্বে অবহেলা এবং দুর্নীতির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার এই করুণ পরিণতির জন্য দুই মন্ত্রীকে পদত্যাগের কথা বলেছে সংগঠনটি।
এর মাঝে মজার একটি ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার! (১৬-০৮-২০১১) ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বেহাল দশা দেখতে গিয়ে মাওনা চৌরাস্তা এলাকার নিজেই খানাখন্দে ভরা রাস্তায় আটকা পড়েন যোগাযোগমন্ত্রী।
মাওনা চৌরাস্তায় বড় একটি গর্তে পড়ে বিকল হয় পুলিশের পিকআপ এবং একটি ট্রাক। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকে থাকে যোগাযোগমন্ত্রীর পাজেরো গাড়ি। জরুরি ভিত্তিতে বিকল গাড়িগুলো গর্ত থেকে সরিয়ে খুব দ্রুত মন্ত্রীর গাড়ি পার করিয়ে দেওয়া হয়। বেহায়া মন্ত্রী অনেক অনুরোধের পরও গাড়ির গ্লাস খুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। মহাসড়কে মন্ত্রীর গাড়ি আটকা পড়ার দৃশ্য আশেপাশের শতশত মানুষ উপভোগ করেন।
এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে যোগাযোগ মন্ত্রীকে তুলোধুনো করেছেন তার কেবিনেট কলিগরা। যোগাযোগ মন্ত্রকের দুর্নীতি-লুটপাট নিয়ে কথা বলেছেন সামনাসামনি। অর্থমন্ত্রী টাকা দেন না, এমন কথা বলে পার পেতে চেয়েছেন মন্ত্রী। কিন্তু অর্থমন্ত্রী সামনাসামনি থাকাতে মুখের ওপর জবাব দেওয়াতে সুবিধা করতে পারেন নি। কিন্তু অবাক ব্যাপার প্রধানমন্ত্রী যেখানে একটুতে মুখের ওপর খামোশ করেন অন্য মন্ত্রীদের, এই আদরের আবুল মন্ত্রীর ব্যাপারে তার কোন রা’ নেই ! উল্টো তাঁর অফিসে জরুরি বৈঠক দেখে দেশের বেহাল সড়ক যোগাযোগ নিয়ে দিয়েছেন বিশেষ কিছু নির্দেশ। ঈদের আগে রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী করতে, অর্থ মন্ত্রণালয়কে টাকা দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। কার দোষে কি ঈদের আগ মূহুর্তে জরুরি নাজুক অবস্থায় অন্য ঘাটাঘাটিতে না গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিকে যা করেছেন তা ঠিক আছে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বৈঠকেই ধরা পড়েছে এই লোকটা পুরা একটা অকর্মা আবুল! সারাক্ষণ অমুক অমুককে দোষ দিয়ে বেড়িয়েছে, কিন্তু রাস্তাঘাটের মেরামেত-রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ টাকাও ঠিকমতো খরচ করতে পারেনি। কেন, পারনি আবুল? বৃষ্টি ছিল। কাজ করতে রোদ আর খরা লাগে। এই হচ্ছে আমাদের আবুলের জবাব!
এমন কথা আর কেউ কোন কালে শুনেছেন কি? বা একজন মন্ত্রীর অযোগ্যতা-ব্যর্থতার কারণে দেশের রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, আর রাস্তাঘাট ঠিক করতে উদ্যোগ-বৈঠক করতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে, এমন কেউ কোথাও শুনেছেন কি?
এরপরও এই অযোগ্যআবুল মন্ত্রী অর্থাৎ সেতু কর্পোরেশনের ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেনকে এত আদর-সাপোর্ট কেন এভাবে দিয়ে যাচ্ছেন কারণটি জাতিকে কি বলবেন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী?
মনে কি নেই-- এই লোকটার মন্ত্রিত্বের চাকরি আপনাকে খেতে হয়েছে আগেরবার। কারণ মন্ত্রী হয়েও সরকারকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত কাজে উনি চলে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর। এরপরও তাকে এবার ফুল মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরষ্কৃত করার রেজাল্টটা কি?
তার কাজ তিনি যদি না করেন, করতে না পারেন, নাজুক একটা পরিস্থিতিতে যদি সব কাজ এভাবে আপনাকে করতে হয় তাহলে এভাবে মন্ত্রী রাখার কি দরকার? এসবের জবাব কি নিয়েছেন, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী? কারণ নেক্সট ইলেকশনে ভোটারদের কাছে এসবের জবাবদিহি আপনাকেই করতে হবে। কালকিনির ভোটার ছাড়া আপনার আদরের আবুলের কাছে এসব কেউ কিছু জানতেই চাইবে না।
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক।
বাংলাদেশ সময় ১১৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১১