ঢাকা: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে তীব্র লোকবল সংকট বিরাজ করছে। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে মেধা পাচার হচ্ছে। এসব মেধা ধরে রাখতে হবে। ’
লোকবল সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর মানবসম্পদ উন্নয়ন করা দরকার। তা না হলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো অনেক পিছিয়ে যাবে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোৎ জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আর্থিক ঝুঁকি মোকাবেলা, ব্যাংকের মানব সম্পাদ উন্নয়ন ও যুগোপযোগী করার লক্ষে ব্যাংকের দক্ষ মানব সম্পাদের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। ’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্যাংকে মানব সম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে দেশের আর্থিক খাত আরও শক্তিশালী হয়। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ব্যাংকগুলোতে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সোনালী ব্যাংকে সম্প্রতি কিছু সংখ্যক লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে যে পরিমান পদ শুণ্য রয়েছে তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাংকে ৯ হাজার ৭৮৬ জন লোকের অভাব রয়েছে। এছাড়া এ বছর অবসরে যাচ্ছেন প্রায় ৯শ’ জন। বর্তমানে লোকবল সংখ্যা রয়েছে ১৯ হাজার জন।
কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে সর্বস্তরের গ্রাহকদের সেবা প্রদান করার লক্ষে এ ব্যাংকের শূণ্যপদগুলো পূরণ করা জরুরি বলে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।
সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি লোকবলের অভাব রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকেও। যদিও এ ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ক্ষমতায় আসর পর থেকে দক্ষ ও মেধাবী লোক নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এরপরও এ ব্যাংকে আরও লোকবলের অভাব রয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকে অনুমোদিত লোকবলের সংখ্যা হচ্ছে ১৫ হাজার। তবে বর্তমানে আছে ১২ হাজার। নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে আরো। আগামী বছর ২০ জনের মত অবসরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ব্যাংক সূত্র।
জনতা ব্যাংক সুত্র জানায়, তাদের লোক বল আছে ১২ হাজারেরও কম। তবে অনুমোদিত আছে ১৫ হাজার। বর্তমানে নতুন লোকবল নেওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, রুপালী ব্যাংকে ১০ হাজার লোক নিয়োগ দেওয়ার অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে লোকবল আছে ৫ হাজার।
তবে বর্তমান পরিচালনা পরিষদ ১ হাজারের মত লোক নিয়োগ দিয়েছে। আরো বেশ লোক নেওয়া হচ্ছে বলে ব্যাংক সূত্র জানায়।
তবে এ বছরই প্রায় অর্ধ শতাধিক লোক অবসরে যাচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় রূপালী ব্যাংককে ধ্বংস করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজানোর জন্যে সব ধরনের যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। লোকবল বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ব্যাংকের নতুন নতুন প্রডাক্ট ও ম্যানেজমেন্টের উন্নয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষ কর্মকর্তাদের ধরে রাখার লক্ষে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে রূপালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
অগ্রণী ও জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ও বেসিক ব্যাংকে প্রয়োজন অনুযায়ী লোকবল নেই।
এসব ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ অস্থায়ী লোক দিয়ে করানো হচ্ছে। স্থায়ীভাবে লোকবল নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হলে একদিকে যেমন লোকবল সংকটের ঘাটতি মোকাবেল করা যাবে, অন্যদিকে ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা রোধ করাসহ সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। এতে দেশের আর্থিক খাতের বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘লোকবল যা দরকার তা নেওয়া উচিত। তবে জনসংখ্যা বাড়ালেই হবে না। গ্রহকদের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। তাহলেই সরকারি ব্যাংকগুলোর সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১১