ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

এক্সক্লুসিভ: সচিত্র রিপোর্ট

ছাত্রলীগের সালিশ...

মনোয়ারুল ইসলাম/ জীবন আমীর/নাজমুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১১
ছাত্রলীগের সালিশ...

ঢাকা: মোটা দুটি লাঠি টেবিলের ওপর। চারিদিকে গোল করে বসানো হয়েছে লাল প্লাস্টিকের চেয়ার।

সামনে ফাঁকা স্থানে বসে আছে ৮-১০ জন। যাদের মধ্যে শিশু থেকে মাঝ বয়সী পর্যন্ত রয়েছে।

সালিশের আয়োজন চলছে। সালিশ মানে আর কিছুই না.. এদের পেটানো। এদের অপরাধ সুনির্দিষ্ট না তবে একটি অপরাধ অবশ্যই রয়েছে তা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রধান নিয়ন্ত্রকের আস্থা তারা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

সালিশের মধ্যমণি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা শহীদুল। তিনি গত কমিটির সহ সভাপতি। দাপুটে নেতাদের পুরো নাম সাধারণত জানা থাকে না। কিন্তু এই শহীদুল যে ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের ডানহাত সেকথা জানালেন অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিছ্ছুকএক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কন্ট্রোল এখন তার হাতে। এখানে নাকি গাছের পাতাটি পর্যন্ত তাকে না জানিয়ে নড়ে না।

কিশোর তরুণদের এক দফা পেটানোর পর শুরু হলো আসল সালিশ। অপরাধভেদে একেকজনকে কান ধরে ওঠবস কিংবা হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হলো।

শহীদুলকে না চিনতে পারায় একজনের পিঠে পড়লো বাড়তি লাঠির ঘা, সঙ্গে খিস্তি খেউর:` ...পুত উদ্যানে থাকস আর আমারে চিনোস না!`

অনেকে জানিয়েছেন, শহীদুল ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের ডানহাত। তার হয়ে তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন উদ্যানের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় পদে আসীন হওয়ার আগে সে কাজটি নাজমুল নিজেই করতেন।

উদ্যানের কর্মকাণ্ড মানেই হচ্ছে এখানে যেসব কাজ চলে যেমন মাদক সেবন, চুরি-চামারি কিংবা নির্জনে ঠেকা দেওয়া এসব। যাদের পেটানো হলো.. কিংবা শাস্তি তাদের অনেকেরই অভিযোগ ভাগ বাটোয়ারা সঠিক না হলেই এমনটা শাস্তির মুখে পড়তে হয় তাদের।

তবে সালিশকারীদের দাবি উদ্যানে যাতে কোনো অন্যায় কাজ না হতে পারে সে জন্যই এ ব্যবস্থা।

কিন্তু তাই বলে সালিশের নামে এমন পেটানোর কোনো অধিকার তাদের আছে কি না সে প্রশ্ন অনেকেরই।

বিষয়টি শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দৃষ্টিতে আনা হলে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে বলা সম্ভব।

পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওসি রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি শহিদুলকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, টাকা চুরির অভিযোগ পাওয়ায় তাদের বিচার করা হয়েছে।

নিজেরা এ ধরনের বিচারের আয়োজন করা ঠিক হয়নি জানিয়ে এসময় তাদের সতর্ক করে দেন বলেও জানান ওসি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কে এম সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন, `আমি ব্যাপারটি দেখবো। তবে এ ধরনের বিচার বসানোর অধিকার কারো নেই। `

ছাত্রলীগ এভাবে বিচার করার অধিকার রাখে কিনা ? এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বাংলানিউজকে মোবাইলে বলেন, "আমি জরুরী কাজে আছি। বিস্তারিত জানার পর মন্তব্য করবো। "

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বলেন, "আমি ঘটনা ভালোভাবে জানিনা। সব জানতে পারলে আপনাদের জানাবো। "

বাংলাদেশ সময় ১৪১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।