ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ আশঙ্কাজনক

মাজেদুল নয়ন; স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১১
অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ আশঙ্কাজনক

ঢাকা: হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ফুসফুসের সংক্রমণ ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশে ৬১ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর কারণ এসব ব্যাধি।

এর মধ্যে ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোকের কমপক্ষে একটি এবং ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোকের দেহে একের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে।

‘অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণসমূহের জরিপ-২০১০’ এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশের শতকরা প্রায় ৩৩ ভাগ মানুষ কখনও রক্তচাপ নির্ণয় করান না। দেশের শতকরা ১৮ দশমিক ৫ ভাগ পুরুষ ও ১৭ দশমিক ৩ ভাগ নারী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। শতকরা ৯৭ দশমিক ৬ ভাগ পুরুষ এবং ৯৪ দশমিক ১ ভাগ নারী পরিমিত পরিমাণ ফল ও শাকসবজি খায় না। দেশে মোট মৃত্যুর শতকরা প্রায় সাড়ে ২৭ ভাগের মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অসংক্রামক রোগ।

অল্প বয়সীদের তুলনায় বয়স্কদের মধ্যে এর হার বেশি। অতিমাত্রায় তামাক গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম কম করা, স্থূলতা, শাক-সবজির তুলনায় মুখরোচক অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবনাচারণের জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের শতকরা ৬১ ভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটছে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হার বাড়ছে। ২০০০ সালে এ বয়সী মানুষ ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। বয়স্ক লোক বৃদ্ধির ক্রমবর্ধমান হার অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে এ হার ৬ দশমিক ৬ শতাংশে গিয়ে দাড়াবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স্ক মানুষ হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হন। তাই বয়স্ক মানুষের বৃদ্ধির সমান্তরালে অসংক্রামক ব্যাধির প্রার্দুভাব বাড়ছে।

‘বাংলাদেশ এনসিডি রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে ২০১০’ তে বলা হয়, পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মানুষ শারীরিক প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম শাকসবজি ও ফলমূল খেয়ে থাকেন। অনেক লোকই বসে বসে কাজকর্ম চালান।

তামাক ব্যবহারের হার উদ্বেগজনক উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাপ্ত বয়স্ক দশজনের চারজন কোনও না কোনওভাবে তামাক ব্যবহার করে থাকেন। দেশে ধূমপায়ী শতকরা ৫৪ দমমিক ৮ ভাগ পুরুষ ও ১ দশমিক ৩ ভাগ নারী। ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনকারীদের শতকরা ২৯ দশমিক ৪ ভাগ পুরুষ ও ৩৩ দশমিক ৬ ভাগ নারী।

গবেষণায় আরও বলা হয়, শতকরা ৯৭ দশমিক ৬ ভাগ পুরুষ এবং ৯৪ দশমিক ১ ভাগ নারী পরিমিত পরিমাণ ফল ও শাকসবজি খান না। দেশের শতকরা ১৮ দশমিক ৫ ভাগ পুরুষ ও ১৭ দশমিক ৩ ভাগ নারী উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। আর কখনও রক্তচাপ মাপান না শতকরা ৩২ দশমিক ৯ ভাগ মানুষ। ডায়াবেটিসে আগে থেকে শনাক্ত শতকরা ৪ দশমিক ৩ ভাগ পুরুষ ও ৩ দশমিক ৬ ভাগ নারী। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ কখনও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করেননি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (আর্সেনিক ও এনসিডি) ডা. এ কে এম জাফর উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, অসংক্রামক রোগ আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা; যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। অনেক সংক্রামক রোগের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ (সিভিডি), ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী সংকোচনজনিত রোগ।

প্রতিবেদনে আরো দেখানো হয়, অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকের মধ্যে হৃদরোগে ভুগছে ১২ শতাংশ, উচ্চ রক্তচাপে ১৭ দশমিক ৯, ডায়াবেটিস ৩ দশমিক ৯, ক্যান্সার ৩ দশমিক ৭, শ্বাসযন্ত্র সমস্যা ৩, স্ট্রোক ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

সংক্রামক রোগে আক্রান্তের পেছনে রয়েছে ধূমপান, ধোঁয়ামুক্ত তামাকের ব্যবহার, যে কোন উপায়ে তামাক ব্যবহার, স্বল্প শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েতুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সংক্রামক ব্যাধির মতো অসংক্রামক ব্যাধিও এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপর্যয়ের কারণ। এ অবস্থায় জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু জেলা হাসপাতালে অসংক্রামক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মাঝে প্রতিরোধমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময় : ১৮৩১ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।