ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ক্যামেরাযোদ্ধা রশিদ তালুকদার

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১১
ক্যামেরাযোদ্ধা রশিদ তালুকদার

ঢাকা: দেশের প্রথিতযশা আলোকচিত্র শিল্পী রশিদ তালুকদার। কর্মেই যার পরিচয়।

  তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ।

১৯৭১ সালে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন তারা সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্ত ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়েছিলেন কিছু মানুষ। জীবন বাজি রেখে তোলা তাদের সেইসব ছবি দিয়ে আজ আমরা ’৭১-কে দেখি, স্মরণ করি। যাদের ত্যাগে আজও ’৭১ জীবন্ত। অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছেন দেশের জন্য। তারাও যোদ্ধা, ক্যামেরাযোদ্ধা। এমন একজন যোদ্ধা রশিদ তালুকদার।

১৯৬৯ সাল থেকে শুরু করে আজীবন তিনি ক্যামেরায় দেশ ও জাতির ইতিহাসকে ধারণ করেছেন।

তার অনেক ছবি দেশ-বিদেশের অনেকের কাছে পরিচিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিশেষ সখ্য থাকার কারণে তার বিভিন্ন মুহূর্তের অনেক বিরল ছবি তিনি তুলতে পেরেছিলেন। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রশিদ তালুকদার ও অমিয় তরফদারের আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়। রশিদ তালুকদারের ক্যামেরায় তোলা বঙ্গবন্ধুর ২৭টি আলোকচিত্র এতে প্রদর্শিত হয়।

রশীদ তালুকদারের পেশাগত জীবন বিচিত্র। তার অর্জনের পাল্লাটা বেশ ভারী।

১৯৩৯ সালের ২৪ অক্টোবর  পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায় জন্ম রশীদ তালুকদারের।  

তার আলোকচিত্রের প্রথম হাতেখড়ি হয় রাজশাহীর স্টার স্টুডিওতে মরহুম  মোতাহার হোসেনের কাছে।  

মাসিক সর্বসাকুল্যে ৮০ টাকা বেতনে ১৯৫৯ সালে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দিলেন পিআইডিতে ( প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট)।

তারপর ১৯৬১ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদ-এ। ১৩ বছর দৈনিক সংবাদ-এ কাজ করেন।

১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা ৩২ বছর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় সিনিয়র ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন তিন বার। পরে সোসাইটির সর্বোচ্চ পদক অনারারি ফেলোশিপ পান।

আলোচিত এই আলোকচিত্রীর ছবি নামে অথবা বেনামে সরকারি, বেসরকারি নানা প্রকাশনা, পোস্টার, ক্যালেন্ডার এবং অসংখ্য বইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে।

এমনকি  কোনো কোনো আলোকচিত্রী, লেখক, প্রকাশক তার ছবি ফটোকপি করে নিজেদের নামে ছেপেছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধার ধারেননি তারা।

দেশের বিখ্যাত এই আলোকচিত্রী নিজস্ব একটি একক অ্যালবামও প্রকাশ করতে পারেননি।

তার কীর্তির মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পর তৎকালীন সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল শোনার ছবি, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেওয়ার দৃশ্য। যেন সেলুলয়েডে জীবন্ত ইতিহাস।

তিনি এতই উদার ছিলেন যে, কেউ ছবি চাইলে অবলীলায় দিয়ে দিয়েছেন। অনেকে প্রিন্ট করার খরচটুকুও হাতে তুলে দেননি। এমনকি ছবির সঙ্গে নামটিও ছাপেননি আলোকচিত্রীর। তবুও সব মেনে নিতেন তিনি।

দেশে ও বিদেশে তিনি প্রায় ৭৭টি পুরস্কার পেয়েছেন।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড-২০১০ পদকে ভূষিত হয়েছিলেন রশিদ তালুকদার।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোডস প্রোগ্রামের আওতায় প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটো সাংবাদিককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

২০১০ সালের ৪ জুলাই পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি পুরস্কারের আশা করি না। কারণ এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পায়। তাই আমি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার চাই না। ’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের ভালোবাসাই আমার পুরস্কার। এর আগেও আমি অনেক পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির এই পুরস্কার আমাকে আনন্দিত করেছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৭ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।