ঢাকা: আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির বিষয়ে অনুসন্ধান করা নিয়ে সাংসদদের সঙ্গে মন্ত্রীদের বিরোধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এরই মধ্যে ঈদ উপলক্ষে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির খোঁজ-খবর নিচ্ছে সংসদীয় উপ-কমিটি।
তবে কমিটির আশঙ্কা, চাঁদাবাজি বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হতে পারে তাদের।
কমিটির অভিমত, পরিবহন খাতে অবৈধ চাঁদাবাজিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো জড়িত।
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে একটি সুপারিশমালা তৈরি করতে শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অধীনে এই উপ-কমিটি কাজ করছে।
স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. ইসরাফিল আলমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে ইসরাফিল আলম বলেন, ‘ঈদের পরেই আমাদের উপ-কমিটির বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সাথে বৈঠক করা হবে। ওই বৈঠকে আমরা জানতে চাইবো ঈদের সময় কেন এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। ’
ইসরাফিল জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী বৈধ শ্রমিক সংগঠন ছাড়া আর কেউ চাঁদা নিতে পারে না। চাঁদার পরিমাণও নির্ধারণ হবে ইউনিয়নের সাধারণ সভায়। এছাড়া কোনও মালিক সংগঠন চাঁদা নিতে পারে না।
কমিটির সভাপতি বলেন ‘মালিক সংগঠনগুলোর কাছেও আমরা জানতে চাইবো কেন তারা রাস্তা ঘাটে চাঁদাবাজি করে। ’
চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে কমিটির দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে উল্লেখ করে ইসরাফিল বলেন, ‘যে কাজে হাত দিয়েছি তাতে সরকারের কিছু মন্ত্রীর সাথেও সংসদীয় কমিটির দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ’
শ্রম আইনের ১৭৮ ধারায় বলা হয়েছে, শ্রমিক সংগঠনগুলো কোনো চাঁদা নির্ধারণ করতে চাইলে তা বার্ষিক সভায় অনুমোদিত হতে হবে। কিন্তু কোনো সংগঠনই এই বিধান মানছে না। সংসদীয় কমিটিও এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
একই সঙ্গে চাঁদাবাজিতে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়েও কমিটি পুলিশ কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।
কমিটির সুপারিশের কথা উল্লেখ করে ইসরাফিল বলেন, ‘সংসদীয় কমিটি চাঁদাবাজি বন্ধে একটি বাস্তবভিত্তিক সুপারিশমালা তৈরি করার চেষ্টা করবে। তবে এ কাজে অনেক সমস্যা আছে। ’
চাঁদাবাজি বন্ধে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে ইসরাফিল বলেন, ‘যে কাজে নেমেছি তাতে অনেক সমস্যা। সরকার ও পুলিশের উপর মহলের অনেকে এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। আপনাদের (গণমাধ্যম) সহযোগিতা ছাড়া কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। ’
সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা কম উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কাজ সুপারিশ দেওয়া সেটা দেবো। এরপরের কাজ নির্বাহী বিভাগের। ’
প্রসঙ্গত, সংসদীয় কমিটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ ট্রাক-লরি শ্রমিক ফেডারেশন, বিপ্লবী শ্রমিক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন, সংযুক্ত ট্রাক বন্দোবস্তকারী পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ট্যাক্সিক্যাব-মাইক্রোবাস চালক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছে।
ওই বৈঠকে পরিবহন সেক্টরে অবৈধ চাঁদাবাজির জন্য পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, মালিকসহ অবৈধ শ্রমিক সংগঠনদের দায়ী করে। পরিবহন শ্রমিক নেতারা। সংসদীয় কমিটিও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে। বৈঠকে মালিক সংগঠনদের আমন্ত্রণ জনানো হলেও তারা আসেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১১