ঢাকা: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে আগত রোগীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও নানা ধরনের দুর্ভোগ পেরিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়াও বিক্রয়-চক্রের সঙ্গে হাত না মেলালে সেখানে বেডও পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও তাদের আত্মীয়রা।
সরেজমিনে নিউরো সার্জারি বিভাগে গিয়ে জানা যায়, ভর্তির পরপরই রোগীদের স্থান হয় ওয়ার্ডের ফ্লোরে, করিডোরে, ওয়ার্ডের কমন টয়লেটের সামনে। এভাবে নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের সারি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায় রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের লাশ রাখার ঘরের সামনে পর্যন্ত রোগীদের সারি পৌঁছে যায়।
রোগীদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়স্বজনদের অভিযোগে জানা যায়, এই বিভাগের একটি সিট পাওয়ার জন্য বিস্তর ছোটাছুটি করেও কখনোই একক চেষ্টায় বেড পাওয়া সম্ভব হয় না। তবে ওয়ার্ড বয়দের সঙ্গে হাত মেলালে টাকার বিনিময়ে সিট পাওয়া যায় সহজেই।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করেন, দিনে মাত্র একবেলা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক রাউন্ডে (পরিদর্শন) আসেন। এরপর সারদিনে আর কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার বোর্ডবাজার এলাকার আবদুল হক (৫০) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে গত এক সপ্তাহ আগে চিকিৎসার জন্য নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন।
তার ভাই জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বিগত একসপ্তাহ ধরে বিভিন্ন চিকৎসক এবং নানা স্থানে ঘুরেও ভাইয়ের জন্য একটি সিট যোগাড় করতে পারেননি তিনি। সিটের জন্য গেলেই বলা হয়, ‘সিট খালি নাই’।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘অথচ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সুইপার, ওয়ার্ড বয় এবং নার্সদের টাকা দিলেই বেড মেলে। টাকার বিনিময়ে সিট বিক্রির কাজ করে মূলত এ ওয়ার্ডের সুইপার সেকান্দর, মন্টু, ওয়ার্ডবয় সাইফুল, ব্রাদার ফারুক এবং জয়নাল। ’
মিরপুর চিড়িয়াখানা রায়েনখোলা এলাকায় ৪-৫ দিন আগে ছাদ থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পান মিনারা বেগম (২৮)। তার স্বামী টিপু সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভর্তির পরপরই সিটিস্ক্যান করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে চলে আসার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নিয়ে আসতে পারিনি। ’
টিপু সুলতান অভিযোগ করে বলেন, ‘একদিন পর সিটিস্ক্যান করালেও প্রতিবেদনটি দেখানোর মতো কোনো চিকিৎসক তিনি খুঁজে পাননি। অনেক ঘোরাঘুরি করে প্রতিবেদন দেখাতে পারলেও এখন শুরু হয়েছে নতুন সমস্যা। তিনদিন ধরে কোনো চিকিৎসক রোগী দেখতে আসছেন না। তিনদিন আগের পরামর্শ মতই রোগীর সেবা চলছে। আর এখন নার্সরাই রোগী দেখছেন। ’
বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পীযূষ চন্দ্র জানান, নিউরো সার্জারি বিভাগে যে হারে রোগী আসে সে তুলনায় চিকিৎসকদের সংখ্যা অত্যন্ত কম। তিন শিফটে দায়িত্বপালন করেন অভিজ্ঞ এবং ইন্টার্ন ডাক্তারসহ মোট নয়জন চিকিৎসক। আর বিভাগের তিনটি ইউনিটে কাজ করেন অধ্যাপক, রেজিস্ট্রার, সহকারি রেজিস্ট্রার, মেডিকেল অফিসারসহ মোট মাত্র ১৮ জন। ’
তিনি আরও জানান, নিউরো সার্জারি বিভাগে আওতায় বেড আছে মাত্র ৪৬টি। এর বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে রোগী দেখতে হয় দুই থেকে আড়াইশ। এদের সার্বিক ব্যবস্থা করতেই বিভাগ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হয়।
তিনি আরও বলেন, রোগীদের অভিযোগের ভিত্তি থাকলেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো সামর্থ্য বিভাগের নেই। আর এ কারণেই চরম সীমাবদ্ধতা থাকলেও রোগীদের ফ্লোরে, করিডোরে যেখানেই পারা যায় সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কাউকেই চিকিৎসা ছাড়া ফেরত পাঠানো হয় না।
এদিকে, নিউরো সার্জারি বিভাগের সমস্যা উত্তরণের জন্য লোকবল এবং জায়গা বৃদ্ধির ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল হক মল্লিক।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, ওয়ার্ডের জায়গা কম থাকা এবং এর বিপরীতে রোগীদের প্রচুর চাপ থাকার কারণে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল এবং বিভাগের সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকে।
বেড-বিক্রির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিচালক শহীদুল হক মল্লিক বলেন, ‘লিখিতভাবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ কখনোই আমার কাছে আসে নাই। লিখিত অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময় ১৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১১