ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি বেড়েই চলেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদক সবাইকে এব্যাপারে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছে।
গত ৬ মাসে দুদকের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে মোবাইলে চাঁদা দাবীর ২০ থেকে ২৫টি অভিযোগ এসেছে কমিশনে। এদের মধ্যে একই নম্বর থেকে একাধিক অভিযোগও রয়েছে। সংঘবদ্ধ এ চক্রটির সঙ্গে একাধিক নারী সদস্যও রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতারক চক্রটির সঙ্গে জড়িত রোকেয়া ইসলাম গত ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের একজন মহাপরিচালকের পিএস দাবী করে দুদকের প্যাডে নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান, সেক্রেটারির বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, সম্পদের সঠিক তথ্য না দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগসহ চিঠি পাঠায়।
একই দিন ০১৯৪৭৮৭৩০২৬ নম্বর থেকে ফোন করে সাতদিনের মধ্যে তিন লাখ টাকার মাধ্যমে মীমাংসা করার কথা বলা হয়। পরে নোমান গ্রুপ কমিশনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে বিষয়টি ভুয়া। এ বিষয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করে নোমান গ্রুপ। তবে রোকেয়াকে গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত বুধবারও জনৈক ব্যক্তি কমিশনে এসে বলেন, রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি কর্মকর্তা পরিচয়ে মোবাইলে চাঁদা দাবী করেছে। কিন্তু রফিকুল ইসলাম নামে দুদকে কোনো কর্মকর্তা নেই। ওই ব্যাক্তি কোনো ধরনের অভিযোগ না করেই চলে যান বলে জানিয়েছে দুদকের একজন কর্মকর্তা।
দুদকের কর্মকর্তা পরিচয়ে চাঁদা দাবী করায় এ বছরের পয়লা এপ্রিল দুদকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নগরীর মতিঝিল থেকে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের দুই জনকে গ্রেপ্তার করে ৠাব। এরপর কিছুদিন দুদকের পরিচয়ে মোবাইলে চাঁদাবাজি অনেকটা কমে এসেছিল।
তবে সম্প্রতি এ সংঘবদ্ধ চক্রটি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন দুদকের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক মেজর আশীষ সরকার।
তিনি জানান, সম্প্রতি পাঁচটি মোবাইল নম্বর থেকে দুদক চেয়ারম্যান, পরিচালক মনিরুজ্জামান খান ও তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের পরিচয় দিয়ে কুমিল্লার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবী করা হয়। ওই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়। সংঘবদ্ধ চক্রটি একই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এসএ পরিবহনের এলিফ্যান্ট রোড, মালিটোলা এবং নারায়ণগঞ্জ শাখার মাধ্যমে ছয় লাখ হাতিয়ে নেয়।
এলিফ্যান্ট রোড শাখা থেকে ১৪ নভেম্বর আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি মোবাইল নম্বর ০১৯৪৭৩৬২৩৬৩ দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ।
১৬ নভেম্বর একই ব্যক্তির কাছ থেকে মালিটোলা ও এলিফ্যান্ট রোড শাখার মাধ্যমে নজরুল ইসলাম ০১৬৮৩৪৮৪২৫৯ এবং মাহবুবুল আলম ০১৭৬৪৩৬২২৩ নম্বর দেখিয়ে এক লাখ টাকা ।
একইভাবে মালিটোলা শাখা থেকে ১৭ নভেম্বর সেলিম নামের আরেক ‘কর্মকর্তা’ ০১৬৮৩৫৫৩৩৮৫ নম্বর দেখিয়ে এবং পয়লা ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ শাখার মাধ্যমে মো: সেলিম ০১৭৬৩৬৫৭৯৬২ নম্বর দেখিয়ে আরও এক লাখ টাকা উঠিয়ে নেয়। ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু করে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংঘবদ্ধ চক্রটি ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
মেজর আশীষ সরকার আরও জানান, সংঘবদ্ধ এ চক্রটি তাদের কাজের জন্য সাধারণত ০১৬৮১২৪৬৯০৫,০১৬৮৩৫৫৩৩৮৫, ০১৯৪৭৩৬২৩৬৩, ০১৭৬৪৩৬৮২২৩, ০১৬৮৩৪৮৪২৫৯, ০১৮২৯০৩৩২৩২,০১৭৬৪৩৬৮২২৩, ০১৯১৮৩৪৯৩৪৫, ০১৭৬৩৬৫৭৯৬২, ০১৮২৯২৫৫৩৫৯,০১৮২৭৪৮৫২২২, ০১৯৩০৬৭৬৮১৬, ০১৮২৯০৩৩২৩৯, ০১৯২৮৬৩৬৮৪১, ০১৮২৯০৩৩২৩৯, ০১৮২৯১৮৩৬৬১, ০১৬৭৬০৯২৫১৫, ০১৯৩৩৪০০১৭৮ নম্বরগুলো ব্যবহার করে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনোব ভট্রাচার্য জানান, তাই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দুদকের নামে চাঁদা দাবী করলে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার কপিসহ দুদকে অভিযোগ করার জন্য কমিশনের তরফ থেকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ সব প্রতারকদের সঙ্গে কোনো প্রকার লেনদেন না করে দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচালক (পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন) ৯৩৫২৫৫২ অথবা মোবাইল ০১৭৩০৩০৩২০১ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছে দুদুক।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১১