ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ডাক বিভাগে জালিয়াতি: রাজধানীতে ১০ চক্র

রিয়াজ রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১১
ডাক বিভাগে জালিয়াতি: রাজধানীতে ১০ চক্র

ঢাকা: ডাক বিভাগের কর্মচারিরা ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, চুরিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এদের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে আস্থা ও মান হারাচ্ছে ডাক বিভাগ।

দিনদিনই কমছে ডাক বিভাগের সেবা। বিশেষ করে, ডাকের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড ও বিভিন্ন পার্সেল পাঠানোর হার কমে গেছে। এর পরিবর্তে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর দিকে ঝুঁকছে বহির্বিশ্বের মানুষ।
 
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (ডিবি) সূত্র মতে, রাজধানীতে অন্তত ১০টি ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্র রয়েছে। এসব চক্রের প্রত্যেকটিতে সদস্য সংখ্যা অন্তত আট জন। যার মধ্যে ডাক বিভাগের একাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
 
দালালদের দেখানো বিভিন্ন লোভ সামলাতে না পেরে ডাকপিয়নসহ এ বিভাগের কর্মচারিরা এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
 
রাজধানীর অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি এলাকার পোস্ট অফিসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এসব চক্র।
 
সূত্র মতে, বিদেশ থেকে নিরাপত্তার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড পাঠিয়ে থাকে মানুষ। কিন্তু এ কার্ডভরা খামগুলো ডাকপিয়নসহ কয়েক কর্মচারি বাছাই করে আলাদা করে রাখে। পরে তা দালালদের খবর দিয়ে তাদের কাছে নির্দিষ্ট অংকের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।
 
এসব কার্ড দিয়ে দালালরা দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন শপিংমল থেকে নানা ধরনের পণ্য কিনে তারপর সেগুলো দেশের শপিংমলগুলোয় কম মূল্যে বিক্রি করে থাকে।
 
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য কেনার কাজে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদর্শন ছাত্রদের। এর বিনিময়ে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও দেওয়া হয়।
 
সম্প্রতি এসব চক্রের মধ্যে অন্যতম একটিকে ধরার পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
 
ডিবি উত্তরের সিনিয়র সহকারি কমিশনার মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মালামালসহ এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
 
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে চক্রের মূল হোতা কামাল আহমেদ ওরফে নুরুল আমিন ওরফে খোকন ওরফে দাদাভাই (৫২), আনোয়ার হোসেন (৩৩), আব্দুর রব(৪২) এবং রাসেল (৩৪)।
 
এদের মধ্যে আব্দুর রব গুলশান পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন। আর রাসেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতকোত্তর শেষ করেছে।
 
এ চক্রটিকে গ্রেপ্তারের পর মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চক্রের মূল হোতা দাদাভাই। ১৯৯৬ সাল থেকে এপর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা তিনি সরিয়ে নিয়েছেন। এ জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত গুলশান পোস্ট অফিসের আরও দুইজনকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
 
এদের ধরার ব্যাপারে তিনি জানান, এ বছরের ১৩ জুন হেমটেক্স নামক একটি কোম্পানির কান্ট্রি ম্যানেজার সুইডিশ নাগরিক ব্রুনহিল্ড ডেসকেম্পস গুলশান থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, সুইডেন থেকে তার নামে ২৬ লাখ টাকার একটি ইউরো কার্ড গুলশান পোস্ট অফিসের ঠিকানায় পাঠানো হয়। কিন্তু তা পাওয়া যায়নি। এই মামলার সূত্র ধরেই ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত চক্রটিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
 
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব চক্র তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের অনেকে মাঝে মধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়।
 
একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘দাদাভাইকে গ্রেপ্তারের পর বরিশালের সরকারদলীয় চারজন এমপি ও পল্লবী এলাকার একজন মহিলা এমপি তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন। ’ তবে এমপিদের কাউকে চেনেন না বলে জানান দাদাভাই।
 
এদিকে ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বর্পূর্ণ পোস্ট অফিসগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এদের অনেকেই ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।