ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ও প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে ব্যাপকভাবে। সম্ভাব্য ও বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টার ও ডিজিটাল বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরীর সকল এলাকা।
বিভক্ত ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রেখে সংসদে এ সংক্রান্ত বিল’২০১২ পাস হয়েছে মঙ্গলবার।
বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
পাস করা এ বিল অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে ২৮ মের মধ্যে। ফলে নির্বাচনের জন্য হাতে সময় আছে আর অল্প কয়েক দিন। আর এই সময়কে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নগরীর যে দিকে চোখ যায় মনে হয়, শুধু পোস্টার-বিলবোর্ডের মেলা। পিছিয়ে নেই সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। আদাজল খেয়ে তারাও বিলবোর্ড-পোস্টার লাগিয়ে যাচ্ছেন। ।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে সাদা, কালো, লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ রংয়ের ডিজিটাল বিলবোর্ডগুলোতে শোভা পাচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি ও বিভিন্ন ধরনের রঙিন রঙিন কথা।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেমন- পল্টন, শাহবাগ, মিরপুর ফার্মগেট, মালিবাগে দেখা যাচ্ছে এ বিলবোর্ডগুলো।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়রপুত্র ও দক্ষিণ ডিসিসি’র আওয়ামী লীগের মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা সাঈদ খোকনের বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে।
তিনি যে দক্ষিণ নগর পিতা হওয়ার জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সে খবরটি জানান দিচ্ছে তার বিলবোর্ডে রং-বেরংয়ের কথা বার্তায়।
‘দ্য চয়েস ইজ ক্লিয়ার, শহরের নোংরা রাজনীতি সময় মতো ডাস্টবিনে ফেলুন, আমি জনতার প্রার্থী আমি আপনাদের প্রার্থী, আসুন সম্ভাবনার কথা বলি’ ইত্যাদি নানা ধরনের কথা দিয়ে খোকন সাজিয়েছেন তার পোস্টারগুলো।
‘বিশ্বাস একবার গেলে আর ফিরে আসে না, আমি বিশ্বাসের বিশ্বাসী’ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দক্ষিণ নগর পিতা পদে আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হাজী মো. সেলিম তার পোস্টারে লিখেছেন এ কথা। নির্বাচনে জয়ী হলে ঢাকাকে পাল্টে দেবেন, এমন কথাও শোভা পাচ্ছে তার পোস্টারে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক কো-অর্ডিনেটর ডক্টর তুহিন মালিকের বিলবোর্ডও দুলছে দক্ষিণ ঢাকার বিভিন্ন নির্বাচনী পয়েন্টে।
তিনি নাগরিক কমিটির ব্যানারে মেয়র প্রার্থী হয়ে দক্ষিণ নগরবাসীর উন্নয়নের কথা ব্যক্ত করছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন অন্তত একবার সুযোগ চাচ্ছেন ঢাকাবাসীর কাছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জনগণের পাশে থেকে সেবা দেওয়ার। ঢাকা শহরের আজন্ম আপোষহীন নেত্রী বলে জানান দিচ্ছেন জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরিন আখতার বিলবোর্ড ও পোস্টারের দ্বারা। এ দু’জনও দক্ষিণ ডিসিসি’র মেয়র প্রার্থী হতে চান।
নির্বাচনের দৌড়ে পিছিয়ে নেই সাবেক মন্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদও। দলের সবুজ সংকেত পেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়াও নানা পোস্টারে নানা লেখায় দৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন উত্তর নগরবাসীর। তিনি উত্তর ডিসিসি’র মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান। দল তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছে বলেও খবর ছড়িয়ে পড়েছে। মালিবাগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা সনু মিয়ার মেয়াদ উত্তীর্ণ বিলবোর্ড দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, ঈদ সামনে না চলে গেছে। বছর ঘুরে ঈদ এলেই তিনি শুভেচ্ছা-সালাম দিয়েই যাচ্ছেন।
এছাড়াও অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ বিলবোর্ড ও পোস্টার ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
তবে তাদের মাঝ থেকে কে নগর পিতা আর কে কাউন্সিলর প্রার্থী হবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবার পর।
বিলবোর্ডের বক্তব্যের সঙ্গে এসব সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচিত হতে পারলে তাদের কাজকর্মে কতটুকু মিল থাকে সেটাই দেখার বিষয়।
নগর পিতা বা কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকাকে পরিবর্তন করবেন, না নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন, নাকি প্রতিশ্রুতি শুধু বিলবোর্ডেই শোভা পাবে তাও দেখার বিষয়।
বিলবোর্ডগুলোর চমৎকার চমৎকার রং ও কথার ফুলঝুরি শুধু বিলবোর্ড ও পোস্টারে সীমাবদ্ধ না থেকে যেন বাস্তবেও ঢাকা নগরীর ওপর প্রতিফলিত হয়- এটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১২