ঢাকা : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করেই যাত্রাবাড়ীর বিতর্কিত বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে চলছে কোচিংবাণিজ্য। আর এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগকারী সিনিয়র শিক্ষিক ফরিদা ইয়াসমিন মিতাকে বরখাস্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বর্ণমালা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভূঁইয়া আব্দুর রহমান ও স্কুল পরিচালনায় এডহক কমিটির সভাপতি সালাম বাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্কুলে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)’তে গত জানুয়ারি মাসে চিঠি দেন ফরিদা ইয়াসমিন মিতা।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হলে মাউশি থেকে একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়। সে সময় কোচিং বন্ধ করার ঘোষণা দেন অধ্যক্ষ ভূঁইয়া আব্দুর রহমান।
কিন্তু তদন্ত কমিটির কাজ শুরু হতে না হতেই আবারো কোচিং ব্যবসা শুরু করেছে স্কুলটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বল্প পরিসরে আবারো কোচিং চলছে স্কুলটিতে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাউশিতে অভিযোগ করায় গত ১৫ মার্চ স্কুলে সিনিয়র শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন মিতাকে বরখাস্ত করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভূঁইয়া আব্দুর রহমান।
বরখাস্তপত্রে মাউশিতে স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, জাতীয় শিশু দিবসে স্কুলে উপস্থিত না হওয়া, সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশের দিন উপস্থিত না থাকাসহ মোট ১০টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৪ মার্চ রাতে যাত্রাবাড়ী থানার একজন ডিবি কর্মকর্তা স্কুলের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে জানতে তার বাসায় যান। পরবর্তী দিন ১৫ মার্চ তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত পত্র দেওয়া হয়।
এদিকে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, এখানে কথায় কথায় শিক্ষক কর্মচারীদের শোকজ ও বরখাস্ত করা হয়। সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও এ কলেজ খোলা থাকে। পহেলা বৈশাখ, ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারি, ঈদে মিলাদুন্নবী এমনকি পুজা-পার্বণেও শিক্ষকদের ক্লাস নিতে বাধ্য করা হয়। কেউ ছুটির দিনে ক্লাস নিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই তাকে শোকজ করা হয়। শুধু তাই নয়, সপ্তাহের একদিন বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা স্কুল হওয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হয় না।
শিক্ষকরা বলেন, এখন ভূইয়া আব্দুর রহমান এবং সালাম বাবু ফরিদা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে সাধারণ শিক্ষকদের দিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিচ্ছেন। কেউ স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি করলে বেতন কাটা এবং বরখাস্তের হুমকি দিচ্ছেন।
শিক্ষকরা আরো অভিযোগ করেন, এ স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকার পরেও এখানে বিষয়ভিত্তিক ক্লাস বণ্টন করা হয় না। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার পছন্দের শিক্ষকদের গণিত, অ্যাকাউন্টিং, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের ক্লাস নেওয়ার সুযোগ করে দেন।
জানা যায়, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। আর দুই বা ততোধিক শোকজ পেয়েছেন এমন শিক্ষকের সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
এক অভিভাবক বলেন, এখানকার অনিয়ম রোধ করার জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকরা বিগত তিন বছরে বহুবার পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
শিক্ষকরা জানান, উন্নয়নের নামে স্কুল ফান্ডের টাকা থেকে তড়িঘড়ি করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেগুলো এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ শিক্ষকদের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
এসব ছাড়াও অ্যাডহক কমিটির সভাপতি সালাম বাবু ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভূঁইয়া আব্দুর রহমান বোর্ডের সিলেবাসের বাইরে ৬টি বই স্কুলের বিভিন্ন ক্লাসের সিলেবাসভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট প্রকাশকের কাছে থেকে কয়েক লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। পাঠ্যসূচিতে থাকায় নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীরা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
এ ব্যাপারে জানার জন্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভূঁইয়া আব্দুর রহমানকে ফেন দিলে তিনি রিসিভি করেননি।
অ্যাডহক কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু বাংলানিউজকে বলেন, এ স্কুলের ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমি জড়িত। এখন দু’বছর ধরে আমি রয়েছি। আপনারা ২০০৮ থেকে আমাদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেখলে বলবেন ভালো করছি- না খারাপ করেছি।
কিছুদিন আগে যেসব শিক্ষক কোচিংয়ে জড়িত তাদের শোকজ করা হয়। এর ফলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদ বলেন, বর্ণমালা স্কুল নিয়ে এর আগেও অনেক অভিযোগ উঠেছিল। ব্যাপারটি তিনি আবারো দেখবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৪১ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১২
এমএন
সম্পাদনা : আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর