শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): আমাদের দেখা সাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত ঢোঁড়া সাপ। ড্রেন, পুকুর, ডোবা, খাল-বিলসহ ছোট-বড় জলাশয়গুলোতে প্রায়ই এই সাপের দেখা মেলে।
জলের সংস্পর্শে এরা বেশির ভাগ সময় থাকে বলে একে জলঢোঁড়া সাপও বলে। বিশেষত বর্ষা মৌসুমে ঢোঁড়া সাপের ছানাদের খুঁজে পাওয়া যায়। ইংরেজি নাম Checkered Keelback বৈজ্ঞানিক নাম Xenochrophis piscator।
আমাদের দেশের সর্বত্র এই সাপটিকে পাওয়া গেলেও বর্তমান এদের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন। আমাদের চারপাশের পুকুর-ডোবাগুলো ভরাট এবং জলাভূমি দূষিত হয়ে যাবার ফলে আশ্রয় হারাচ্ছে তারা। শুধু তা-ই নয়; এক শ্রেণির মানুষ এই বিষহীন সাপটিকে অযথাই নির্মমভাবে হত্যা করে চলেছে।
বন্যপ্রাণি সংরক্ষক ও আলোকচিত্রী কামরুজ্জামান বাবু বলেন, ব্যাঙ ও ইঁদুর খেয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে ঢোঁড়া সাপ। নির্বিষ প্রজাতির হলেও সবচেয়ে বেশি আক্রোশের শিকার এই প্রজাতির সাপটি। ক্রমাগত মানুষের আবাসভূমির বিস্তার, জলাশয় ভরাট করে বসতি স্থাপন, কৃষি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে এদের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে।
ঢোঁড়া সাপের আকৃতি ও শারীরিক গঠন সর্ম্পকে তিনি বলেন, সাপটির দৈর্ঘ্য ১৫০ থেকে ১৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। দেহের রঙ উপরিভাগ হলুদাভ সাদাটের সঙ্গে জুড়ে বাদামি বা কালো রঙের ছককাটা ছোপ ছোপ দাগ থাকে। দেহের নিচের অংশ চক চকে হলদে সাদাটে। মাথার রঙ বাদামি। চোখের নিচে থেকে ওপরের ঠোঁট পর্যন্ত কালো একটা রেখা থাকে। ঢোঁড়া সাপের চোখ বড় ও বৃত্তাকার কোটর হয়ে থাকে।
ঢোঁড়া সাপের খাদ্য ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব সম্পর্কে কামরুজ্জামান বলেন, এরা ছোট মাছ, ব্যাঙ, ইঁদুর, পাখি, গিরগিটিসহ নানান ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও ছোট ছোট প্রাণী খেয়ে নীরবে আমাদের উপকার সাধন করে চলেছে। আমাদের অজ্ঞতার কারণে যখন এরা খাবারের খোঁজে লোকালয়ে আসে তখন আমরা এদের মেরে ফেলি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ঢোঁড়া সাপকে না মেরে আমাদের একে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৬
বিবিবি/এমজেএফ/