ঢাকা: কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, রাত তখন দেড়টা। নেই কোনো কোলাহল, হঠাৎ চিচিক চিচিক ডাক শুনে বোঝার বাকি থাকলো না, এ যে প্যাঁচার ডাক।
কিছুক্ষণের মধ্যে একটি প্যাঁচা উড়ে বসলো রেললাইনের ওপর। চলছে উড়াউড়ি। কয়েক মিনিটের জন্য উধাও। এবার দুই প্যাঁচা জোড়া মিলে অন্ধকারে পাইপের মাথায় নিলো অবস্থান।
ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা আলোতে এদের নজর পড়ে, চুপচাপ কিছুক্ষণ থেকে আবার চিচিক -চিচিক ডাকাডাকি। এক পর্যায়ে উড়াল দেয়, হয়তো এবার খাবারের সন্ধানে গেল বুঝি। আবার কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে স্টেশনের ১০ নাম্বার পিলারের ওপরের পাইপে, যেখানে তাদের বাসা।
নাদুস-নুদুস দেখতে ছোট আকারের এ প্যাঁচার নাম খুঁড়ুলে প্যাঁচা বা কোটরে প্যাঁচা। তথ্য মতে, গাছের কোটরে বা খোঁড়লে এরা বাস করে বলে এদের এমন নাম। বিগত কয়েক দশক ধরে কোটরে প্যাঁচার সংখ্য কয়েকগুণ কমে গেছে।
খুঁড়লে প্যাঁচার ইংরেজি নাম Spotted Owlet, এরা Athene brama প্রজাতির প্রাণী। এরা স্ট্রিগিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত ক্ষুদ্রাকায় এক জাতের প্যাঁচা ।
মানব বসতি বা কৃষিভূমির আশেপাশে এদের সাধারণ আবাস, শহরেও এরা নিজেদের রপ্ত করে নিয়েছে। ছোট আকারের এ জাতীয় প্যাঁচার চোখের চারিদিক ও গলা সাদা। চোখের তারা ফ্যাকাশে থেকে সোনালি হলুদ। শরীরের তুলনায় মুখ ছোট।
খুঁড়লে প্যাঁচা পিঠের দিক গাঢ় বাদামি, তার ওপর বহু সাদা ফোঁটা থাকে। মাথার ওপরের ফোঁটাগুলো ছোট আকারের। সাদাটে পেটের দিকে আনুভূমিক বাদামি রেখা দেখা যায়। বাদামি লেজে চিকন সাদা বলয়। ঠোঁট সবুজ, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল হলদে-সবুজ। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে অভিন্ন। দৈর্ঘ্যে ২৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
খুঁড়লে প্যাঁচা নিশাচর, রাতভর এরা শিকারে ব্যস্ত থাকে। এরা দিনের প্রহরে দু’একবার ডাকলেও রাতের প্রায় সব প্রহরেই ডাকে। অনেক সময় অন্য পাখিদের সঙ্গেও যোগ দিয়ে ডাকতে পারে এরা।
আইইউসিএন এর মতে, বিগত কয়েক দশক ধরে খুড়ুলে প্যাঁচা সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু এরা এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
খুঁড়লে বা কোটরে পেঁচার আবাস মূলত এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লাওস ও ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে এসব প্যাঁচা দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
টিএইচ/টিআই