শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): চোরের মার বড় গলা! এই প্রবাদবাক্যটির সফল প্রয়োগ এখনো দেখা যায় কোথাও কোথাও। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কুখ্যাত গাছচোর শহিদের জামিনের জন্য এখন প্রতিদিন পাঁচজন করে আইনজীবী দাঁড়াচ্ছেন!
প্রভাবশালী এই গাছচোরকে জামিন করিয়ে নিতে চলছে নানা পরিকল্পনা।
কমলগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের মৃত ময়ন মিয়ার পুত্র শহিদকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট কর্তনকৃত কাঠ ও বহনকারী গাড়িসহ স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ বাজার থেকে হাতেনাতে আটক করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।
এ সময় পিকআপ ভ্যান থেকে উদ্ধার করা হয় ওই রাতে কর্তনকৃত ৮ ফুট বেরের ৫২ ঘনফুট চাপালিশ কাঠ। যার অনুমানিক মূল্য দুইলাখ টাকা। গাছচুরিতে সহায়তার কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি অটোরিকশাও আটক করা হয়।
শহিদ জেলেহাজতে যাবার পর লাউয়াছড়া ও কালাছড়া বিটের কোনো গাছ অদ্যাবধি কাটা যায়নি। তবে তার নেতৃত্বেই এক সময় প্রতি সপ্তাহে তিন-চার দিন গাছচুরির ঘটনার ঘটতো।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আটক কুখ্যাত গাছচোর শহিদকে কারাগার থেকে জামিনে বের করিয়ে নিতে প্রভাবশালী মহল তার পক্ষে পাঁচজন করে আইনজীবী দাঁড় করাচ্ছেন। এ বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং উদ্বেগের কারণ।
তিনি আরো বলেন, কোনো কারণে যদি তার জামিন হয়ে যায় তারপর সে বাড়িতে ফিরে এসে তার দলের সহযোগিতা আবার লাউয়াছড়ার গাছগুলোকে কেটে বন উজার করবে। বনরক্ষায় দায়িত্বে নিয়োজিত যৌথ টহল বাহিনী (সিপিজি) এর দু’জন সদস্যও এই কুখ্যাত শহিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লাউয়াছড়ার বন ধ্বংস করে চলেছে।
শহিদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে প্রায় বিশ দিনে একটি গাছও কাটা যায়নি বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সূত্রে জানা যায়, অনেক দিন থেকে বনবিভাগের কাছে তথ্য ছিল যে প্রভাবশালী শহিদ দীর্ঘদিন ধরে লাউয়াছড়ার গাছচুরির সঙ্গে সরসারি জড়িত। কিন্তু সে এতোটাই চতুর যে বনবিভাগ অনেকদিন চেষ্টা করেও তাকে হাতেনাতে আটক করতে পারেনি।
সিলেট বন বিভাগে বর্তমান ডিএফও মিহির কুমার দো এবং এসিএফ মো. তবিবুর রহমান আসার পর লাউয়াছড়ার গাছচুরি আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে গিয়েছে। শুধুমাত্রই শহিদের নেতৃত্বেই গাছচুরির ঘটনাগুলো সংঘঠিত হতো।
আরো জানা যায়, কুখ্যাত গাছচোর শহিদ এবং তার দুই বিশ্বস্তসহযোগী জসিম ও বাক্কু। জসিম ও বাক্কু সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি) কর্তৃক পরিচালিত বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্বে নিয়জিত যৌথ টহল বাহিনী (সিপিজি) এর সদস্য। এরা দু’জনই বন রক্ষায় দায়িত্বে থেকে বন ধ্বংসের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে বলেন, সিপিজির কোনো কোনো সদস্য আবার ভালো কাজও করছেন। কেউ কেউ অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। অভিযুক্ত সিপিজির এক সদস্যের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং মামলাও প্রক্রিয়াধীন আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
বিবিবি/বিএস