ভোলা: ঝড় যদি আসে নিজেরা তো আশ্রয়কেন্দ্রে যামু, কিন্তু ঘরবাড়ি আর গবাদি পশু রক্ষা হবে কিভাবে? গেল ঝড়েও আমাদের ঘর ভেঙে গেছে। এবার আবারো ঝড় আসছে, আর তাই চিন্তার আর শেষ নাই।
কথাগুলোই বলছিলেন গৃহবধূ আছিয়া বেগম। তিনি বলেন, বন্যা বেড়িবাঁধের কাছেই আমাদের ঘর, তাই চিন্তাও বেশি আমাগো।
তুলাতলী এলাকায় বাঁধের বাইরে বসবাস জেলে নোমানের। তিনিও ঘর নিয়ে চিন্তিত। বলেন, আমরা নদীর পাড়ে থাকি, ঝড় এলেই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। ঘর ভেঙে যায়। আশ্রয়কেন্দ্রে যামু কিন্তু ঝড় এলে ঘর তো রক্ষা হবে না।
আছিয়া এবং নোমানের মত একই অবস্থা উপকূলের বাঁধে বসবাসকারী মানুষের। একদিকে করোনা অন্যদিকে ঝড়ের পূর্বাভাস শঙ্কিত করে তুলেছে তাদের।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আসছে এমন খবরে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় আছেন ভোলার উপকূলীয় এলাকার মানুষ। বিশেষ করে বাঁধের আশপাশে বসবাসকারী মানুষের ভয় অনেক বেশি। একের পর এক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এসব মানুষ। জীবন বাঁচাতে তারা ঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও তারা ঘর-বাড়ি রক্ষা নিয়ে চিন্তিত। শুধু তাই নয়, ঝড়ে কিভাবে নিজেরা রক্ষা পাবেন তা নিয়ে শঙ্কিত।
জানা গেছে, ভোলার উপকূলের নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছাকাছি বসবাস করেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। এসব মানুষ প্রতিনিয়ত ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এখন আবার নতুন করে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সতর্কবার্তা তাদের কাছে পৌঁছালে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা। কিভাবে নিজেদের ঘরবাড়ি আর সম্পদ রক্ষা করবেন তা নিয়ে চিন্তার ছাপ তাদের চোখ মুখে।
সদরে ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলী বাঁধের উপর বসে আছে নুরুল ইসলাম, আব্দুল আলী মাঝি ও শাহে আলম নামে তিন বৃদ্ধ। তারা জানালেন, সেই ৭০’র ঝড় দেখেছেন। এরপর থেকে যত ঝড় এসেছে কখনই তাদের ভয় তাড়া করেনি। কিন্তু যেহেতু নদীর পাড়ে বসবাস, তাই সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত তারা।
আশ্রয় কেন্দ্রে পাশেই বসবাস করছেন হনুফা ও নিজাম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকটি পরিবার। তারা জানালেন নদীর পাশেই বসবাস করায় তাদেরও ঝুঁকিতে দিন কাটাতে হয়।
হনুফা বলেন, ঝড় এলে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাই, কিন্তু ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাইনা। এই যে ঝড় আসছে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে যাবো কিন্তু আমাদের গৃহপালিত হাস-মুরগি, গরু, ছাগল নিয়ে টেনশনে আছি।
উপকূলের বাসিন্দার জানালেন, ঝড়ের পূর্বভাস পেলেই তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ওঠেন। কিন্তু ঝড় হলে ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা হয় না। তারপর তারা আর ঘুরেও দাঁড়াতে পারেন না। এ জন্য ঝড়ের খবর পেলে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় থাকেন তারা।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী জানালেন, ঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকূলের ৩ লাখের অধিক মানুষকে নিরাপদে আনার জন্য ৭০৯টি আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও ১৩ হাজার সেচ্চাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব প্রস্তুতির পরেও শঙ্কা থেকেই যায় উপকূলের বাসিন্দাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২১
আরএ