খুলনা: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বেড়েছে। ভরা পূর্ণিমার জোয়ারে ভাঙছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ।
স্থানীয় মানুষ বাঁধ ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও তা বেশিরভাগ স্থানে সম্ভব হচ্ছে না। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের থেচেয়ে প্রায় দুই ফুট পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যদিও স্থানীয়রা বলছেন ৪ ফুট।
ঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হতে দেখা যায়। দুপুরের জোয়ারের পানির প্রবল স্রোতে পাইকগাছার দেলুটির চকরি-বকরি প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে এবং রাড়ণ্ডলীর মালোপাড়ার বাঁধ উপচে এ দুই ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। কৃষি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে যাওয়া প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করার চেষ্টা করছে।
এদিকে উপজেলার নদীবেষ্টিত সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। রাতের জোয়ারে পানি বাড়লে কিংবা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, মঙ্গলবার দুপুরের জোয়ারের প্রবল স্রোতে ইউনিয়নের ২০ নম্বর পোল্ডারের চকরি-বকরি প্রতিরক্ষা বাঁধের আগের স্থান থেকে পুনরায় ভেঙে যায়। এতে বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে যায়। পরবর্তীসময়ে ভাটার সময় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এলাকাবাসী ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করে। এই এলাকার ৫ কিলোমিটারসহ ইউনিয়নের ১৩ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
লতা ইউপি চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মন্ডল জানান, অত্র ইউনিয়নে প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান গাজী জানান, সোলাদানা ইউনিয়নের ২৩ নম্বর পোল্ডারের পাটকেল পোতা, আমুড়কাটা স্লুইচ গেট, নুনিয়াপাড়া, বাসাখালী ও পতন, বেতবুনিয়া ও সোলাদানার আবাসন এলাকার আধা কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
ইউপি চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন জানান, লস্কর ইউনিয়নের ১০/১২নং পোল্ডারের ভরেঙ্গা স্লুইচ গেট, বাইনতলা গেট, আলমতলা গেট, আলমতলা দক্ষিণ বিলের গেট জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের ঘের সংলগ্ন এলাকার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া বাইনতলা খেয়াঘাট থেকে সানা বাড়ি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, রাড়ণ্ডলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর পোল্ডারের মালোপাড়া ও ভড়ভুড়িয়ার গেট এলাকার ১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে দুপুরের কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি উপচে মালোপাড়া তলিয়ে যায়।
এদিকে কয়রা উপজেলার আংটিহারা, মটবাড়ি, গোবরা ঘাটাখালী, কয়রা সদরের তহশীল অফিস সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, দশহালিয়া, কাটকাটা, কাশিরহাটখোলা, দাকোপের নলিয়ান ও আন্ধারমানিক এলাকা, পাইকগাছার গড়ইখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে নদীতে পানি প্রবেশ করেছে।
স্থানীয় মানুষ বস্তা ও মাটি দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পাউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে নদীতে স্বাভাবিকের থেকে প্রায় দেড় মিটার পানি বেড়েছে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ ও ২’ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে পানির স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ৩ মিটারের কাছাকাছি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস এবং পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে আরও দুই ফুট বেশি পানি বেড়েছে। বেড়িবাঁধগুলো ৪ মিটার পানির উচ্চতা ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম। তবে কোথাও কোথাও বাঁধের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তা অনেক নিচু অবস্থায় রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
তবে পানির প্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে পানি আটকানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী দু’দিনে পানির উচ্চতা আরও বাড়তে পারে। এর সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হলে পানি আটকানো সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২১
এমআরএম/এএ