ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

সরকারি সহায়তা চান ভাসমান জেলেরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
সরকারি সহায়তা চান  ভাসমান জেলেরা

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ২২০টি পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের নারী-পুরুষ মেঘনায় মাছ শিকার করে সংসার চালান।

 

নিষিদ্ধ সময়ে মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে মাছ ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে খাদ্য সহায়তা দেয় সরকার। তবে মজুচৌধুরীর হাটের ভাসমান জেলেরা সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়ে ভাসমান জেলে ও তাদের পারিবারের সদস্যরা সম্প্রতি মজুচৌধুরীরহাটে মানববন্ধন করেন।  

তাদের অভিযোগ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য তাদের পছন্দের লোকদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। জেলে না হয়েও অনেকে চাল পাচ্ছেন। বাজারের মাছ ব্যবসায়ী কিংবা রিকশাচালকরাও অনেক সময় জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তার চাল পান। কিন্তু দুস্থ জেলেরা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

নারী জেলে আসিউল বেগম, কতবানু বাংলানিউজকে বলেন, নৌকাতে আমাদের বসবাস। মাছ শিকার করে সংসার চালাই। নিষিদ্ধ সময়ে আমরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকি। তখন আমাদের চুলায় হাঁড়ি চড়ে না। সরকারি সহায়তা পেলে আমরা উপকৃত হতাম।

জেলে আবদুল মান্নান ও আবদুল গনি বাংলানিউজকে বলেন, মাছ না ধরতে পারলে আমাদের সংসার চলে না। নিষিদ্ধ সময়ে আমরা নদীতে মাছ শিকার করি না। তখন আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। জেলে পেশায় না থেকেও অনেকে খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা ভাসমান জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছি। অভিযানের সময় সরকার যদি আমাদের খাদ্য সহায়তা দিত, তাহলে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভালো থাকতে পারতাম।

ভাসমান জেলেদের সর্দার সোহরাব মাঝি বাংলানিউজকে বলেন, মজুচৌধুরীর হাটে ২২০টি ভাসমান জেলে পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের প্রায় সবাই চররমনী মোহন ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ২২০ জেলে পরিবারের মধ্যে ১৪৫ জন জেলে তালিকাভুক্ত করার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৬ জন জেলে তালিকাভুক্ত। তাদের মধ্যে আবার ৫৩ জন জেলে অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ২০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। কিন্তু মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকা ইলিশ রক্ষার অভিযানে কেউ এক মুঠো চালও পান না। তবে রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ সময়েও তাদের সবার নাম তালিকাভূক্ত হয়নি। আমরা ভাসমান জেলেরা সব সুযোগ সুবিধা থেকে সব সময় বঞ্চিত হচ্ছি।  

তিনি বলেন, আমরা ভাসমান জেলেরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলি। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরি না। অন্য কাজ না পারায় ওই সময় থাকতে হয় বেকার। ফলে আমাদের চুলায় আগুন জ্বলে না। ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়।  

তিনি অভিযোগ করে বলেন, রিকশাচালক, ব্যবসায়ী এবং প্রবাসীরাও জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তার চাল পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা প্রকৃত জেলে হয়েও বঞ্চিত হয়ে আসছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্য (মেম্বার) তাদের পছন্দের লোকদের জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এসব বিষয়ে আমি বেশ কয়েকবার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার জামানকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

চররমনীমোহন ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রহমান স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, ভাসমান জেলেরা এ এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে অনেকেই ভোটার হয়েছেন। তবে যারা জেলে কার্ডধারী, তারা সরকারি খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন।

চররমনীমোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল বলেন, জেলে কার্ড ও বরাদ্দ অনুযায়ী সঠিকভাবেই চাল বিতরণ করা হয়। মার্চ-এপ্রিল চাল কম আসে, এজন্য সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। শুধুমাত্র যাদের নামে বরাদ্দ আসে, তাদেরই চাল দেওয়া হয়।  

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, মার্চ-এপ্রিল নিষেধাজ্ঞার সময়ে সরকার ২৮ হাজার ৩৪৪ জনের জন্য চাল বরাদ্দ দেয়। এতে সব জেলেকে চাল দেওয়া সম্ভব না। ভাসমান জেলেরা অন্য এলাকা থেকে আসেন। তাদের অনেকের এনআইডি ও জেলে কার্ডও নেই।  

অক্টোবরে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে চালের বরাদ্দ বেশি থাকায় ভাসমান কিছু জেলেকেও সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু মার্চ-এপ্রিল জাটকা রক্ষার অভিযানে জেলেদের তুলনায় চালের বরাদ্দ কম আসে। তাই সব জেলেকে চাল দেওয়া সম্ভব হয় না।  

ভাসমান জেলেদের কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।