বাহেরচর, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী থেকে : খবরের কাগজ পাওয়া ভাগ্যরে ব্যাপার। তাই তথ্য আদান-প্রদানে একমাত্র ভরসা অনলাইন সংবাদমাধ্যম।
দেশের সর্বদক্ষিণে পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীর চিত্রটা এমনই। রাজধানী ঢাকা থেকে নদীপথে প্রায় চব্বিশ ঘন্টার দূরত্বের এই এলাকার মানুষের খবরের কাগজ দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। বরিশাল হয়ে এখানে কিছু জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র এলেও তা নিয়মিত নয়। ফলে পাঠক সংবাদপত্রের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না। তাই বলে এখানকার মানুষ তথ্য শন্যতায়ও থাকেন না। মোবাইল-ইন্টারনেটের সুবাদে সাগরপাড়ের গ্রামের মানুষের কাছেও অনলাইনে তরতাজা খবরটি জনেে নবোর সুবিধা রয়েছে।
রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গন্ডদুলা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন আকন বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রত্যন্ত গ্রামেও সারাবিশ্বের খবর পৌঁছে যায় মুহূর্তের মধ্যে। মাঠে চাষিরাও মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অনেক সময় তাদের কাছ থেকেও শেষ খবরটা পাই। এই গ্রামে খবরের কাগজ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। পলেওে তা বাসি খবর।
সরেজমিনে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বাহেরচর বাজারে কান পাতলেই অনলাইনের খবর শোনা যায়। চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁয় নানামুখি সংবাদ নিয়ে আলোচনার ঝড়। আলোচনায় থাকেন বিভিন্ন শ্রেণ-িপেশার মানুষ। বাজারের চৌরাস্তার মোড়ে বাচ্চু সিকদারের চায়ের দোকানে বেশ ক’জন চাষির জমাটি আড্ডা হচ্ছিল। আলোচনার বিষয়বস্তু অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ।
সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশের শুরু থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ। কেউ মোবাইলে দেখে আলোচনা করছে, কেউবা দেখছে কম্পিউটারে। আবার অনেকে শহর থেকে কারও টেলিফোনবার্তা পেয়ে বাংলানিউজ দেখে নিচ্ছেন। রাঙ্গাবালীর সংবাদ দেখার জন্য অনেক নতুন পাঠক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর অ্যাড্রেস সেভ করে নিচ্ছেন নিজের মোবাইলে।
মোবাইল ইন্টারনেটে সংবাদ পাঠক নিয়াজ আহমেদ বলেন, এই বিচ্ছিন্ন জনপদে সংবাদপত্র নিয়মিত পাওয়া যায় না। কিন্তু ইন্টারনেটের সুবাদে অনলাইন এখন আমাদের হাতের কাছে। বাংলানিউজসহ অন্যান্য সংবাদ সাইট থেকে আমরা খবর পাই। এসব খবর জনমত গঠনে বিশেষ সহায়ক হচ্ছে। মানুুষ সচেতন হচ্ছে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া এই জনপদ সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
অনলাইনে সংবাদ পাঠকদের চাহিদা মেটাতে রাঙ্গাবালী থেকে আনুণ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে এখানকার প্রথম অনলাইন পত্রিকা ‘রাঙ্গাবালী নিউজ’। ৩ মার্চ সোমবার রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কম্পিউটারের বাটন টিপে এ অনলাইন পোর্টালটির উদ্বোধন করেন রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জয়নুল আবেদীন।
প্রত্যন্ত এলাকায় অনলাইন নিউজপোর্টালের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জয়নুল আবেদীন বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার সংবাদ আদানপ্রদানে নানামুখি সমস্যা রয়েছে। অনলাইনের সুবাদে এখানকার মানুষ হয়তো সংবাদ জানতে পারে, এখানকার তথ্য জানাতে এর আগে স্থানীয় কোনো মাধ্যম ছিল না।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন জনপদের খবর কেন্দ্রে পৌঁছাতে রাঙ্গাবালী নিউজ বিশেষ সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এই প্রত্যন্ত এলাকায় সমস্যার পাশাপাশি অনেক সম্ভাবনাও রয়েছে। সেগুলোকে জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারে এই অনলাইন। এখানে সরকারি বেসরকারি দপ্তরগুলোতে যারা কাজ করছেন, তাদের ভুলত্রুুটি ধরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি উন্নয়নে সহায়তা করার মানসিকতাও থাকতে হবে রাঙ্গাবালী নিউজের।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল থেকে অনলাইন পোর্টাল প্রকাশের উদ্যোগ প্রসঙ্গে রাঙ্গাবালী নিউজের প্রকাশক ও সম্পাদক এম কামরুল হাসান মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় গণমাধ্যমে এখানকার তথ্য বিস্তারিতভাবে প্রকাশের সুযোগ নেই। সে কারণেই রাঙ্গাবালী নিউজ প্রকাশের এই উদ্যোগ। এর মাধ্যমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সমস্যা ও সম্ভাবনা পাঠকের সামনে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে বহু দূরের এই উপজেলা একসময় ছিল অন্ধকারে। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে এখানকার সাধারণ মানুষের কোনো যোগাযোগ ছিল না। তথ্য-শুন্যতায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে নেমে আসতো চরম দুর্ভোগ। দুর্যোগের সিগন্যাল তাদের কাছে পৌঁছাতো না। ফলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যেত। কিন্তু ইন্টারনেট সুবিধা সে অবস্থায় পরিবর্তন এনেছে। বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৪